রবিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক প্রতিবেদন

বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে

সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে নীতির প্রশংসা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সন্ত্রাসবাদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেররিজম ২০২২’-এর বাংলাদেশ অংশে এ কথা বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সময় গত শুক্রবার এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কোনো বর্ণনা দেওয়া হয়নি। এতে ২০২২ সালে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদ সংশ্লিষ্ট নীতির প্রশংসা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে। বিশ্বের সব দেশের সন্ত্রাসবাদ পরিস্থিতি নিয়ে ২০২২ সালের সন্ত্রাসবিরোধী বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষিত বাংলাদেশ পুলিশের ইউনিটগুলো কয়েক ডজন সন্দেহভাজন

সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর অন্য ইউনিটগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যা ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সহযোগিতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। তবে র‌্যাব ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসিইউ) স্পেশাল ওয়েপন্স অ্যান্ড ট্যাকটিকস (সোয়াট) ডিভিশন লেহি আইন সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাবে না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

মার্কিন প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২২ সালে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী সহিংসতার কিছু ঘটনা ঘটেছে। কারণ, কর্তৃপক্ষ কঠোরভাবে জঙ্গিদের, বিশেষ করে আল-কায়েদা অনুগত গোষ্ঠী জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং আইএস অনুগত জেএমবির শাখা নব্য জেএমবিকে অনুসরণ করে চলেছে। এতে আরও বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অন্য বাংলাদেশি সরকারি কর্মকর্তারা প্রায়ই সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে বাংলাদেশের ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতির ওপর জোর দিয়েছেন। তবে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী সংগঠিত জিহাদি জঙ্গি গোষ্ঠী যেমন : আল-কায়েদা এবং আইএসআইএসের উপস্থিতি অস্বীকার করে চলেছে। গত বছর অক্টোবরে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে কথিত আল-কায়েদা অনুপ্রাণিত গোষ্ঠীকে ঠেকাতে অভিযানের ঘোষণা দিয়েছিল। এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর প্রতিবেদনে বাংলাদেশে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযান ও কয়েকজন সদস্য গ্রেফতার হওয়ার তথ্যও তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের আটক ও গ্রেফতারের ভিত্তি হিসেবে আছে। ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনলাইনে উগ্রবাদী প্রচারণা, অর্থায়ন, সদস্য সংগ্রহের জন্য গ্রেফতারের সুযোগ থাকার বিষয়টি আছে মার্কিন প্রতিবেদনে। সরকারের সমালোচকরা ওই গ্রেফতারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় বলে দেশি ও আন্তর্জাতিক সমালোচকরা অভিযোগ করে থাকেন। পাশাপাশি রোহিঙ্গা শিবিরে সহিংসতা উদ্বেগের কারণ হয়ে আছে বলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে। বাংলাদেশ ইন্টারপোলের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করে। তবে বাংলাদেশের নিজস্ব কোনো সন্ত্রাসী নজরদারি তালিকা নেই। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) নেতৃত্বে একটি ‘অ্যালার্ট তালিকা’ প্রকল্প সরকারের বিবেচনায় আছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ বর্তমানে আকাশপথের যাত্রীদের আগাম তথ্য নিয়মিতভাবে যাচাই করে না বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, জল ও স্থলসীমান্তে টহল দেওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। বন্দরে উন্নততর সরঞ্জাম ব্যবহার ও পদ্ধতি অনুসরণ এবং জনবল বৃদ্ধির মাধ্যমে পণ্য ও যাত্রীদের স্ক্রিনিং করার ক্ষেত্রে উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বন্দরের নিরাপত্তা, বিশেষ করে প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ঢাকা বিমানবন্দরেও আরও কার্যকর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষগুলো এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে উৎসাহী।

সর্বশেষ খবর