রবিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিলেটে কঠিন হিসাব

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

মহাজোটের শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি ও দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কারণে সিলেটের কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য সহজ নির্বাচন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত টেনশনে থাকতে হচ্ছে জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে চারটির নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে। সিলেটের ছয়টি আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ৪৭ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চারটি আসনে নৌকা ঠেকাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি ও তৃণমূল বিএনপি দলীয় প্রার্থী দিয়েছে চারটি করে আসনে।

নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে সিলেটে তৃণমূল বিএনপির মাঠপর্যায়ে কোনো অবস্থা নেই।

সিলেট-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। আসনটিতে আরও পাঁচজন প্রার্থী থাকলেও ভোটের মাঠে তারা অনেকটা নামসর্বস্ব। মিসবাহ সিরাজও দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির মাঠে কোনঠাসা থাকায় অনেকটা নেতা-কর্মী বিচ্ছিন্ন। তাই মর্যাদাপূর্ণ এই আসনে ড. মোমেন নির্ভার অবস্থায়।

মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় গেল ১০ বছর সিলেট-২ আসনে নৌকায় ভোট দিতে পারেননি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তাই এবার বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সভা-সমাবেশ করে আসনটিতে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। শেষ পর্যন্ত দাবি পূরণ হয়েছে।

দলীয় নেতা-কর্মীরাও উচ্ছ্বসিত। প্রতীক বরাদ্দের আগেই দুই উপজেলায় দলীয় নেতা-কর্মীরা নৌকার প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। কিন্তু নৌকা পেয়েও শঙ্কা কাটছে না। এই আসনে এবারও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী ও বর্তমান সংসদ সদস্য গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোকাব্বির খান। এর মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জামানত হারান ইয়াহইয়া। আর বিএনপির আশীর্বাদ নিয়ে বিজয়ী হন মোকাব্বির খান। শেষ পর্যন্ত মহাজোটের শরিকদের মধ্যে ভাগাভাগি হলে এবারও আসনটি নৌকাবঞ্চিত হয় কি না এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সংশয় রয়েছে। এবারও ভোটাররা নৌকায় ভোট দিতে না পারলে দলীয় রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছাড়াও নিজ দলের দুই স্বতন্ত্রকে মোকাবিলা করছেন সিলেট-৩ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব।

এখানে এবারও জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এ আসনে নির্বাচন করলেও বিজয়ী হতে পারেননি। তবে আসন ভাগাভাগি হলে জাতীয় পার্টি আসনটি শক্তভাবে চাইবে নিজেদের দখলে রাখতে। এ ছাড়া আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন- বিএমএ মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল ও বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব মন্টু। দুজনই আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত।

ডা. দুলাল ইতোমধ্যে নির্বাচন বেশ জমিয়ে তুলেছেন। কেউ মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে শেষ পর্যন্ত আসনটিতে হাবিব ও ডা. দুলালের মধ্যেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। সিলেট-৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ইমরান আহমদের সঙ্গে দলের আরও ৭ নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও শেষ পর্যন্ত কেউ জমা দেননি। আসনটিতে বিভিন্ন দলের আরও তিনজন প্রার্থী থাকলেও অনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সিলেট-৫ আসনেও রয়েছে কঠিন হিসাব-নিকাশ। এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ। প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ড. আহমদ আল কবীর, জাতীয় পার্টির শাব্বীর আহমদ ও ফুলতলী পীরের দল আঞ্জুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা হুসামুদ্দীন চৌধুরী। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন আসনে ফুলতলী পীরের অনুসারীদের নৌকার অনুকূলে রাখতে শেষ পর্যন্ত মাওলানা হুসামুদ্দীনকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হতে পারে- এমন গুঞ্জনও রয়েছে। এ ছাড়া মহাজোটের আসন ভাগাভাগিতে আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে চলে যায় কি না সেটা নিয়েও চলছে আলোচনা।

সিলেট-৬ আসনে চারবারের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সারওয়ার হোসেন। একই আসনে প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য মো. সেলিম উদ্দিন। শেষ পর্যন্ত আসনটি শমসের মবিন কিংবা জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিনকে ছেড়ে দিতে হয় কি না এ নিয়ে জোর আলোচনা এখন সর্বত্র।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর