মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
হলফনামায় তথ্য

সম্পদ বেড়েছে প্রার্থীদের

প্রতিদিন ডেস্ক

সম্পদ বেড়েছে প্রার্থীদের

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রায় সব প্রার্থীরই আগের চেয়ে আয় অনেক বেড়েছে। বেড়েছে মোট সম্পদের পরিমাণও। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ঝালকাঠি : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে নৌকা প্রতীকের আলোচিত প্রার্থী শাহজাহান ওমর ও তার স্ত্রী মোট ৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮ হাজার ৮৬৭ টাকার মালিক বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। তবে হলফনামায় তার ও তার পরিবারের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির কোনো বিবরণ নেই। মনোনয়নপত্র কেনার একদিন আগেও একটি মামলা থেকে জামিনে আসেন শাহজাহান ওমর। কিন্তু তার নামে মামলার কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি হলফনামায়।

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের ১৬ আসনের বর্তমান এমপিদের সম্পদ ও আয় বেড়েছে বহুগুণ। হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও কোটি টাকার মালিক। এমপিদের মধ্যে বেশির ভাগেরই ব্যবসা আছে। সবারই কমবেশি কৃষি খাতের আয় আছে। আছে ছোট-বড় ঋণও। চট্টগ্রামের ১৬ আসনে ১৪৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে গত দুই দিনে ৩৩ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র নানা কারণে বাতিল হয়েছে। বাকি প্রার্থীদের মধ্যে একজন সম্পদশালী প্রার্থী চট্টগ্রাম-১০ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র মনজুর আলম। তিনি একাধারে ২০টি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, এমডি ও অন্যান্য পদে আছেন। চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর পেশা অধ্যাপনা। তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান। এ প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি ঋণ নিয়েছেন ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া এ প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বছরে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৬১ হাজার ৪৪২ টাকা এবং তার ওপর নির্ভরশীলরা ৪৪ লাখ ২২ হাজার ৪৪৬ টাকা সম্মানী ভাতা পান। সংসদ থেকে তার প্রাপ্ত ভাতা ২৩ লাখ ১৫ হাজার ৭০৭ টাকা। চট্টগ্রাম-১১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ লতিফের অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা বর্তমানে ৫ কোটি ৭২ লাখ টাকায় পৌঁছেছে। পাঁচ বছরে ৩ কোটি ৮ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি বাড়লেও আয় কমে গেছে তার। গতবারের হলফনামায় চট্টগ্রাম-৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বার্ষিক আয় ছিল ৫০ লাখ ৪৫ হাজার ৩০০ টাকা। এবারের হলফনামায় আয় দেখানো হয়েছে ৭৯ লাখ ২৮ হাজার ৭২৮ টাকা। বাড়তি আয়ের প্রায় পুরোটাই এসেছে কৃষি খাত থেকে। গত পাঁচ বছরে নওফেলের আয়ের পাশাপাশি সম্পদ ও ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। চট্টগ্রাম-১৪ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর স্ত্রীর নামে স্থাবর সম্পদ আছে ৬৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৫ টাকার। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে যা ছিল ২ লাখ ৪ হাজার ৪৪৫ টাকার। অর্থাৎ ৫ বছরের ব্যবধানে নজরুলের স্ত্রীর স্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য বেড়েছে ৩২ গুণের বেশি। বর্তমানে নজরুলের বার্ষিক আয় প্রায় ৫২ লাখ ৮৬ হাজার ৫৮৭ টাকা। চট্টগ্রাম-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতার নামে স্থাবর সম্পদ রয়েছে ৩ কোটি ৯১ লাখ ৪ হাজার টাকার। তার স্ত্রীর নামে আছে ৩৬ কোটি ৪১ লাখ ৫৭৮ টাকার। মিতার চেয়ে তার স্ত্রীর সম্পদ প্রায় ৯ গুণ বেশি। চট্টগ্রাম-১৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বার্ষিক আয় ৭৪ লাখ ১২ হাজার ৯৭ টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাত থেকে তিনি আয় করেন ৮৩ হাজার টাকা। বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট ও অন্যান্য খাত থেকে ভাড়া পান ৫৮ লাখ ৮৩ হাজার ৩৭৯ টাকা। এ ছাড়া ব্যবসা থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩০০ টাকা, চাকরি থেকে ১২ লাখ ৬০ হাজার এবং অন্যান্য খাত থেকে ৫০ হাজার ৪১৮ টাকা আয় করেন জাবেদ। চট্টগ্রাম-৭ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. হাছান মাহমুদের কাছে নগদ টাকা আছে ৫ লাখ ১০ হাজার। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর জমা ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার আছে ৭ লাখ ১২ হাজার ২৫০ টাকার। নিজের ৫ ভরি এবং স্ত্রীর ৫০ ভরি স্বর্ণও রয়েছে।

খুলনা : পাঁচ বছরের ব্যবধানে খুলনা-৪ আসনে বর্তমান এমপি আবদুস সালাম মুর্শেদীর সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৮ গুণ। ২০১৮ সালে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯৫ কোটি ১১ লাখ টাকার। বর্তমানে তার সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকার। একই সময় তার স্ত্রীর সম্পদ কমলেও আয়ের ওপর নির্ভরশীল অন্য সদস্যদের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১৮ গুণ।

মাদারীপুর : মাদারীপরের একাংশ, কালকিনি ও ডাসার উপজেলা নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ নির্বাচনি এলাকা থেকে ২০১৮ সালে প্রথম এমপি হন আবদুস সোবহান মিয়া। তিনি তার নির্বাচনি হলফনামায় স্ত্রী ও নিজের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণীতে জানান, এমপি হওয়ার আগে ২০১৮ সালে কোনো গাড়ি ছিল না, এমপি হয়ে কিনেছেন কোটি টাকার গাড়ি।

মাগুরা : মাগুরা-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বীরেন শিকদার তার হলফনামায় বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৯৪ লাখ ৫১ হাজার ৬২১ টাকা। যার মধ্যে কৃষি খাত থেকে আয় দেখিয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার। বাড়ি ও দোকান ঘর ভাড়া দেখিয়েছেন ২০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে আয় দেখিয়েছেন ৫০ হাজার টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত থেকে আয় দেখিয়েছেন ৭১ লাখ ৯৪ হাজার ৬২১ টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে দেখিয়েছেন নগদ টাকা ৫ লাখ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৩ লাখ ৫২ হাজার ৪৭২ টাকা। বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ সাড়ে ৫ লাখ টাকা। মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তার বার্ষিক আয় ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৭১ হাজার ২৬২ টাকা। অন্যদিকে ব্যাংক ঋণ দেখিয়েছেন ৩১ কোটি ৯৮ লাখ ৬১ হাজার ৩৮২ টাকা।

রাজশাহী : রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনের বর্তমান এমপিদের আয় বেড়েছে কয়েকগুণ। আয় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সদর আসনের এমপি ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার। এবার তাঁর বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ ১৭ হাজার ৪৪২ টাকা। ২০১৮ সালের হলফনামায় তার আয় ছিল ৭ লাখ ৫০০ টাকা। সম্পদ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর। ২০১৮ সালে ফারুক চৌধুরীর নিজ নামে নগদ টাকা দেখান ৯০ লাখ ৯৫ হাজার ৬০২ টাকা। গতবার স্ত্রীর নামে ৩৩ লাখ ৯৭ হাজার ১১৪ টাকা ছিল। এবার স্ত্রীর নগদ টাকা কমে হয়েছে ১১ লাখ ৩১ হাজার ১১৪ টাকা। তবে বেড়েছে নির্ভরশীলদের নামে। শূন্য থেকে নির্ভরশীলদের নামে এবার নগদ টাকা জমা হয়েছে ২৯ লাখ ৩০ হাজার ৬৬৬ টাকা। রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিনের আয়ও বেড়েছে মাত্র ৪ লাখ টাকা। ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া আসাদুজ্জামান আসাদের বছরে আয় ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের বর্তমান এমপি এনামুল হক এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। হলফনামায় তার বার্ষিক আয় ১ কোটি ২৬ লাখ ১২ হাজার ২৭১ টাকা। গত নির্বাচনে যা ছিল ৪৯ লাখ টাকা। ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া আবুল কালাম আজাদের বার্ষিক আয় ১ কোটি ৭ লাখ ১০ টাকা। রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের বর্তমান এমপি ডা. মনসুর রহমানের বার্ষিক আয় ৯২ লাখ ৭০ হাজার ২৮৭ টাকা। ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া আবদুল ওয়াদুদ দারার বার্ষিক আয় ৩০ লাখ ৪৪ হাজার ২২৯ টাকা। রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনের বর্তমান এমপি শাহরিয়ার আলমের বার্ষিক আয় ৭ কোটি ৯২ লাখ ৯১ হাজার ২৫৪ টাকা। গত নির্বাচনের সময় ছিল ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৬৫ হাজার ৮০৮ টাকা।

সর্বশেষ খবর