শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আসন নিয়ে টেনশনের অপেক্ষা

জাতীয় পার্টি আসন ছাড়ের পাশাপাশি সুষ্ঠু ভোটেরও নিশ্চয়তা চায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন নিয়ে টেনশনের অপেক্ষা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে ৫০ আসনের নিশ্চয়তা চেয়েছে জাতীয় পার্টি। এর মধ্যে ৩৫টি আসনে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন দলটির নেতারা। ঠিক কত আসনে ছাড় দেওয়া হবে তার নিশ্চয়তা দেয়নি ক্ষমতাসীন দলটি। তবে তারা জাতীয় পার্টিকে আশ্বস্ত করেছেন, প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে চান। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এ জন্য ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ফলে আসন নিয়ে টেনশনের অপেক্ষা বাড়ল জাতীয় পার্টির নেতা ও এমপি প্রার্থীদের। গতকাল রাতে গুলশানে আওয়ামী লীগের একজন উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যের বাসায় দুই দলের শীর্ষ নেতারা বৈঠক করেন। রাত ৮টার কিছু পর এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ নিয়ে বেশ গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে জাতীয় পার্টির নেতারা ক্ষমতাসীন দলের কাছে একটি তালিকা দিয়েছেন। এতে বর্তমান সংসদে থাকা ১৯ জনসহ ৫০ জন দলীয় এমপি প্রার্থীর নাম রয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগের যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের বক্তব্য শুনলেও কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। আসন ছাড় পাওয়ার পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়, একটা ভালো পরিবেশ, বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশ, ভোটাররা আসার যেন আস্থা পায় তার নিশ্চয়তা চেয়েছেন জাপা নেতারা।

বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আসন্ন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং অর্থবহ করে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেন। জাতীয় পার্টির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আসন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে  আওয়ামী লীগের নেতারা জাপা নেতাদের জানান। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহবুব-উল আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলে ছিলেন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চৌধুরী।

এদিকে জাতীয় পার্টির একটি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনে আসন ছাড়ের পুরো নিশ্চয়তা না পেলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে খুশি দলটির নেতারা। বৈঠক শেষে জাতীয় পার্টির মহাসচিব সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে আজ দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করবে জাতীয় পার্টি। রাজধানীর বনানীতে দলটির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে, আমরা আলাদা আলাদাভাবে নিজ নিজ জায়গা থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করব। জাতীয় পার্টির নেতারা আশ্বস্ত হয়েছেন এবং তারা লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেবেন।’ জাহাঙ্গীর কবির নানক আরও জানান, জাতীয় পার্টির সঙ্গে প্রয়োজনে আবারও আলোচনা হবে। তবে আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু এবং অবাধ করতে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। এতে জাতীয় পার্টি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবে এবং এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সর্বশক্তি দিয়ে অংশগ্রহণ করবে এবং জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে জাতীয় সংসদে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। এদিকে মঙ্গলবার রাতে গণভবনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ শীর্ষ তিন নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে চাউর হয়েছে। বলা হচ্ছে, আসন ভাগাভাগি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। বাকি সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে জানানো হবে। তবে এ বৈঠকের সত্যতা কোনো পক্ষই স্বীকার করেনি। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় পার্টিসহ আরও কয়েকটি দল নিয়ে গঠন করা হয় মহাজোট। ওই নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে মহাজোট। এরপর ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট না করেই নির্বাচন করে জাতীয় পার্টি। ওই ভোটে জোট না থাকলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আছে, এমন ৩৪টি আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। এসব আসনেই জয় পায় দলটি। ভোটের পর সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে জাতীয় পার্টি। আবার সরকারের মন্ত্রী হিসেবেও থাকেন দলটির কয়েকজন। দলীয় প্রধান এইচ এম এরশাদ হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। আবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে না থাকলেও ভোটে আসন ভাগাভাগি করে। গত সংসদ নির্বাচনে তাদের দেওয়া হয় ২৬টি আসন, এর মধ্যে জয় পায় ২৩টিতে। এ সংসদেও বিরোধী দলের আসনে রয়েছে জাতীয় পার্টি।

সর্বশেষ খবর