শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
কোটালীপাড়ায় মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী

যেভাবেই হোক তারা দুর্ভিক্ষ ঘটাবে

আমিনুল হাসান শাহীন, গোপালগঞ্জ

বিএনপি কীভাবে নির্বাচন করবে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপির নেতা কে, তাদের কোনো নেতা নেই। বিএনপি চিন্তা করেছিল নির্বাচন হবে না। এখন নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে। এক সময় বলেছিল নির্বাচন হতে দেবে না। উসকানি আছে যে, নির্বাচন ঠেকাও। নির্বাচনের শিডিউল হয়ে গেছে। এখন তারা মনে করছে নির্বাচন হয়েই যাবে। তাই তারা মার্চ মাসের দিকে দেশের এমন অবস্থা করবে, দুর্ভিক্ষ ঘটাবে। এটা হচ্ছে তাদের পরবর্তী পরিকল্পনা। এটা শুধু দেশের নয়, বাইরের দেশেরও পরিকল্পনা আছে। যেভাবেই হোক দুর্ভিক্ষ ঘটাতে হবে।’ গোপালগঞ্জ সফরের দ্বিতীয় দিনে গতকাল সকালে নিজ নির্বাচনি এলাকা কোটালীপাড়ায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ভবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম  উদ্দিন আহমেদ, শেখ হাসিনার নির্বাচনি চিফ এজেন্ট সাবেক সিনিয়র সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন সেখ প্রমুখ। শেখ হাসিনা বলেন, ’৭১ সালে যারা এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে, অগ্নিসংযোগ করেছে, আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে, লুটপাট করেছে, নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে, অত্যাচার করেছে সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন। যে দেশটাকে আমার বাবা সারা জীবন কষ্ট করে স্বাধীন করে দিয়ে গেলেন, সেই দেশের মানুষগুলোর জন্য তো কিছু করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বারবার আমি মৃত্যুকে দেখিছি। এ কোটালীপাড়াতেও বিশাল বিশাল বোমা মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছিল। মিটিংয়ে আক্রমণ, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, সরাসরি গুলি-  এ অবস্থার মধ্যেও আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রাখলেন। এর মধ্য দিয়ে আমরা ‘৯৬ সালে সরকার গঠন করি। আবার ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি। ২০০৯ থেকে আমরা এ পর্যন্ত একটানা সরকারে আছি। অন্তত আজ এটুকু বলতে পারি, বাংলাদেশটা বদলে গেছে। বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে। এখন আর খাদ্যের হাহাকার নেই। খাদ্য নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি। চিকিৎসাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পেরেছি। শিক্ষার সুযোগ আমরা সৃষ্টি করেছি। ঠিক যা জাতির পিতা চেয়েছিলেন। একটানা সরকারে থাকতে না পারলে আমাদের উন্নয়ন দৃশ্যমান হতো না। আমরাই তো স্লোগান তুলেছিলাম- ‘আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব।’ আমরা ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করেছি। আর সেই আন্দোলন সফল করতে একটানা সরকারে থেকে আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে।

আমরা এখন আন্দোলনের নামে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো দেখতে পারছি। পাকিস্তানের প্রেতাত্মা, হানাদার বাহিনীর প্রেতাত্মা এদের ওপর ভর করেছে। পুলিশকে যেভাবে মাটিতে ফেলে পেটাল, এরচেয়ে জঘন্য কাজ মনে হয় আর হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা বিএনপির নেতা। কী বীভৎস এরা। এভাবে একটা পুলিশ পিটিয়ে মারল। অ্যাম্বুলেন্সে পুলিশ ঢোকার পর সেখানে আগুন দিল। ২/৩টি অ্যাম্বুলেন্স পোড়াল। সাধারণ রোগী নিয়ে যাচ্ছে সেই অ্যাম্বুলেন্সের ওপর তারা আক্রমণ করে। এই হলো তাদের চরিত্র। তাদের ওপর মানুষের আস্থা বিশ্বাস থাকবে কী করে। এদের শিক্ষাটা বোধহয় ওই ইসরায়েলের কাছ থেকে নেওয়া। যারা প্যালেস্টাইনের ওপর আক্রমণ করছে। গাজার হাসপাতালে লাশের স্রোত বয়ে যাচ্ছে। এরা ওইখান থেকে শিক্ষা নিয়ে চলে। বিএনপিকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আবার তারা আউটসোর্সিং আন্দোলন করে। সমাজের কিছু অবাধ্য লোকজনের হাতে টাকা দিয়ে আগুন দেওয়ায়। যুবদলের নেতা নিজে সরাসরি আগুন দিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছে। জনগণ কিন্তু সচেতন। তাদের ধরে ধরে পুলিশে দিচ্ছে। শেখ হাসিনা আরও বলেন, ২০০৭ সালে ‘আর জীবনে রাজনীতি করব না’ তারেক জিয়া মুচলেকা দিয়ে দেশের বাইরে চলে যায়। সেখানে বসে হুকুম দিয়ে মানুষ হত্যা করাচ্ছে। জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতা অবৈধভাবে দখল করে, তখন সেনাবাহিনীর অফিসার, সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছিল। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সেই একইভাবে এদেশে হত্যাকান্ডের রাজনীতি শুরু করে। পুরোটাই একটা খুনি পরিবার। প্রথমদিকে বিএনপি আন্দোলন করায় কিছু মানুষের সমর্থন পেয়েছিল। সহিংস আন্দোলন করায় মানুষ এখন আর তাদের সঙ্গে নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত ১৫ বছরে তাঁর ক্ষমতায় থাকাকালীন উন্নয়ন নিয়েই কথা বলেন। কোটালীপাড়ার ভোটারদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাকে সারা দেশ নিয়ে চিন্তা করতে হয়, ভাবতে হয়। আমার নির্বাচনি কাজ আপনারাই করে দেন। যে কারণে আমি সারা দেশের মানুষের কথা ভাবতে পারি, কাজ করতে পারি। যার সুফল সারা দেশের মানুষ পায়। কোটালীপাড়ায় মতবিনিময় শেষে তিনি সড়কপথে টুঙ্গিপাড়া যান। বিকালে তিনি টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে ঢাকার উদ্দেশে টুঙ্গিপাড়া    ত্যাগ করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর