রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগের আনুকূল্য চায় ২৮ দলই

১৪ দলের শরিকরা চায় নৌকা॥ জাতীয় পার্টি তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম ও ইসলামী দলগুলো চায় আসন সমঝোতা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

আওয়ামী লীগের আনুকূল্য চায় ২৮ দলই

আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া ২৯ দলের ২৮টিই আওয়ামী লীগের আনুকূল্য পেতে চায়। নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলোর কেউই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে রাজি নয়। ভোটে অংশ নেওয়া অন্তত ২০টি দল সরাসরি নৌকায় নির্বাচন করতে আগ্রহী। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শরিক ১৪ দলের নেতারা চান নৌকা প্রতীকে ভোট করতে। আর জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিভিন্ন ইসলামী দল, কল্যাণ পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএমসহ সব দলই চায় আসন সমঝোতা। তারা চান তাদের পছন্দের আসনগুলোতে নৌকা প্রতীকসহ আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী যাতে না থাকে। নিশ্চিত জয় চান তারা। সে কারণে আনুকূল্য পাওয়ার জন্য এখন আওয়ামী লীগের কাছে ঘুরঘুর করছে ভোটে অংশ নেওয়া সব দল। প্রায় প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। শেষ পর্যন্ত কয়টি দল আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আনুকূল্য পাচ্ছে তা জানার জন্য হয়তো মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। জানা যায়, নির্বাচন কমিশনে বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ৪৪টি। তারমধ্যে ২৯টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ১৫টি দল ভোটে যাচ্ছে না। নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে নির্বাচনে না যাওয়া দলগুলো আন্দোলন করে যাচ্ছে। আসন সমাঝোতা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টি একাধিক বৈঠক করলেও কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি। বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়েও কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করছে দল দুটি। জাতীয় পার্টি এর আগে তিনটি জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে নির্বাচন করলেও এবার নির্বাচনকে অর্থবহ করতে জাতীয় পার্টির কর্মীবান্ধব নেতাদের প্রাধান্য দিতে চায় ক্ষমতাসীনরা। বিশেষ করে জাতীয় পার্টির যেসব সংসদ সদস্য এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে সংগঠন করেছেন এবং নিজস্ব জনবল দিয়ে কেন্দ্র কমিটি করার সক্ষমতা রয়েছে তাদের আবারও সংসদে আনার বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এবার মনোনয়ন নিয়ে দুশ্চিন্তায় জাতীয় পার্টির অধিকাংশ সংসদ সদস্য। কারণ জাপার ২২ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে মাত্র কয়েকজন নিয়মিত এলাকায় সময় দিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব কর্মী বাহিনী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক কো-চেয়ারম্যান জানান, সরকার নির্বাচনকে অর্থবহ করতে চায়। তাই বৈঠকে যাদের এলাকায় শক্ত ভিত রয়েছে তাদের আগামী নির্বাচনে প্রার্থী করতে আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় পার্টিকে বলা হয়েছে। তিনি জানান, আসন সমঝোতা ছাড়া পার্টির কো-চেয়াম্যান, প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সংসদ সদস্যরা ভোট করতে নারাজ।

এদিকে ৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিকরা গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা করেন। তবে কতটি আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন, সে সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর গত ২০ নভেম্বর তৃণমূল বিএনপির শীর্ষ নেতা সমশের মবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আলোচনার বিষয়বস্তু কোনো পক্ষই প্রকাশ করেনি। ২৪ নভেম্বর ইসলামপন্থি ৯টি রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করেন। এ সময় তারাও সংসদ সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা চান বলে অংশগ্রহণকারীরা জানান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা নেতাদের দলগুলো হচ্ছে ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট, আশেকানে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। এর আগে ৩০ নভেম্বর খেলাফত রব্বানী বাংলাদেশ ও নেজামে ইসলামী পার্টির নেতারাও গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানায়। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী। তিনি ঢাকা-১৪ ও চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে নির্বাচন করছেন। সূত্র জানায়, এ সময় মাইজভান্ডারী কোনো একটি আসনে নিজের জয় নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা করেন। আওয়ামী লীগ ও সরকারি সূত্রগুলো বলছে, যেসব দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, তাদের চাহিদা মেনে আসন সমঝোতা করলে ৮০-৯০টি আসনে ছাড় দিতে হবে। এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় যা এসেছে, তাতে জাপা ৪০ আসনের কমে রাজি নয়। ১৪ দলের শরিকদের অগ্রাধিকার ২৫টির মতো আসনে। বিকল্পধারা, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, সুপ্রিম পার্টি, বিএনএফ এসব দল আরও ১৫ আসন চাইছে। এর বাইরে ইসলামপন্থি দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী ও সরকারের বিভিন্ন পক্ষ যোগাযোগ করছে। তারাও নিশ্চিতভাবে অন্তত ১০টি আসন প্রত্যাশা করছে। সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত যেসব দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, তাদের চাহিদা মেনে আসন সমঝোতা করলে অন্তত ৮০টি আসনে ছাড় দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর