শিরোনাম
রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

এমপির সন্তানরা তিন বছরেই কোটিপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

এমপির সন্তানরা তিন বছরেই কোটিপতি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এমপি প্রার্থীদের হলফনামা এখন দেশজুড়ে আলোচনায়। গত নির্বাচনগুলোর হলফনামার সঙ্গে তুলনা চলছে এবারের দাখিল করা হলফনামার। বিশ্লেষণে দেখা যায়, অধিকাংশ এমপি প্রার্থীর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। কারও কারও স্ত্রী-সন্তানদেরও আয় বেড়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিরা প্রার্থীদের নির্বাচনি আমলনামা বিশ্লেষণ করে পাঠিয়েছেন।   

সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর ব্যাংকে জমা টাকা বেড়েছে দ্বিগুণ লালমনিরহাট : গত পাঁচ বছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের আয় কমলেও ব্যাংকে জমা রাখা টাকার পরিমাণ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুজ্জামান আহমেদের নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের পর তিনি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এরপর ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে নুরুজ্জামান সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। হলফনামা অনুযায়ী, তার বার্ষিক আয় ৩২ লাখ ৬ হাজার ৪০৬ টাকা। যা একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ছিল ৩৪ লাখ ৩৫ হাজার ৮৫৫ টাকা। পাঁচ বছরের তার বার্ষিক আয় কমেছে প্রায় ২ লাখ টাকার মতো। তবে নগদ টাকার পরিমাণ কমলেও ব্যাংকে জমার পরিমাণ বেড়েছে। তার অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নগদ অর্থের পরিমাণ ৯৫ লাখ ৭৮ হাজার ২৫৪ টাকা আর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ২ কোটি ১৪ লাখ ৪ হাজার ৯৯৭ টাকা। গত সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৪২ লাখ ৮২ হাজার ২১০ টাকা আর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ১ কোটি ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮৩ টাকা। এতে নগদ অর্থের পরিমাণ কমলেও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ একমাত্র ছেলে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুজ্জামান আহমেদ এবং তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ হলফনামায় উল্লেখ করেননি।

এমপির ছেলেমেয়ে তিন বছরে কোটিপতি

নওগাঁ : সাবেক এমপি ইসরাফিল আলমের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া নওগাঁ-৬ (রানীনগর ও আত্রাই) আসনে ২০২০ সালে ১৭ অক্টোবর উপনির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন আনোয়ার হোসেন হেলাল। এমপি হওয়ার পর গত তিন বছরের ব্যবধানে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে আড়াই কোটি টাকার ওপরে। স্ত্রীর সম্পদ কিছুটা কমলেও এই সময়ের মধ্যে শূন্য থেকে কোটিপতি বনে গেছেন তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। ২০২০ সালে উপনির্বাচনের সময় আনোয়ার হোসেনের দাখিল করা হলফনামায় তার সন্তানদের নামে স্থাবর-অস্থাবর কোনো সম্পদই উল্লেখ করেননি। তবে এবার প্রার্থী হিসেবে তার দাখিল করা হলফনামায় বড় ছেলের নামে নগদ টাকা, ব্যাংকে স্থায়ী আমানত ও ডিপিএস-এফডিআর হিসেবে করা বিনিয়োগসহ মোট ৩ কোটি ৯৮ লাখ ৭৬ হাজার ৭৪৮ টাকা সম্পদ উল্লেখ করা হয়েছে। ছোট ছেলের নামে নগদ টাকা ও ব্যাংকে আমানত হিসেবে জমানো ৮১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬২ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া মেয়ের নামে নগদ টাকা, ব্যাংকে সঞ্চয় ও স্থায়ী আমানত হিসেবে জমা ২ কোটি ২৩ হাজার ৭৬৩ টাকার সম্পদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এবারের নির্বাচনে দেওয়া হলফনামায় রানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নিজেকে স্বশিক্ষিত উল্লেখ করেছেন। পেশা উল্লেখ করেছেন ঠিকাদার, ইটভাটা, কমিশন এজেন্ট, সরবরাহকারী ও সাধারণ ব্যবসায়ী। হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, ব্যবসা থেকে সবচেয়ে বেশি ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার ৪৯২ টাকা বছরে আয় করে থাকেন তিনি। এ ছাড়া বাড়ি ও  দোকান ভাড়া থেকে আয় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত হিসেবে করা বিনিয়োগ থেকে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩৯ টাকা আয় করেন তিনি। এ ছাড়া এমপি হিসেবে ভাতা ও অন্যান্য খাত থেকে বার্ষিক আয় হয় ২৫ লাখ ৯ হাজার ৪৪৬ টাকা। মোট আয় ৬৭ লাখ ৩৮ হাজার ৮৭৭ টাকা। ২০২০ সালের হলফনামায় বলা হয়, আনোয়ার হোসেন ব্যবসা থেকে ১১ লাখ ৯৬ হাজার ৪১০ টাকা, বাড়ি ও দোকান ভাড়া বাবদ ২ লাখ ১০ হাজার এবং সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে ৮ হাজার ৩০৫ টাকা বার্ষিক আয় করতেন। তখন আয় ছিল ১৪ লাখ ১৪ হাজার ৭১৫ টাকা। তিন বছরের ব্যবধানে বার্ষিক আয় বেড়েছে সাড়ে ৪ গুণের বেশি।

হুইপ সামশুলের স্ত্রীর সম্পদ বেড়ে ৫ গুণ

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম-১২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর স্ত্রী কামরুন নাহারের অস্থাবর সম্পদ পাঁচ বছরে ৬৫ লাখ টাকা থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। হলফনামায় সামশুলের সম্পদ বিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে তার স্ত্রীর ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকার এফডিআর, ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ২টি বেসরকারি কোম্পানির ১২ লাখ টাকা শেয়ার রয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সামশুলের স্ত্রীর কাছে এসব সম্পদ ছিল না। এর বাইরেও কামরুন নাহারের কাছে নগদ ২৮ লাখ ২৬ হাজার ৯৮৬ টাকা, ব্যাংকে ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৮২ টাকা, ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার স্বর্ণ রয়েছে। এদিকে সম্মানি বাবদ সামশুলের আয় বছরে ২৩ লাখ ৬৯ হাজার ১১৮ টাকা। বাড়ি ও দোকান ভাড়া বাবদ ১৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ও চাকরির বেতন ১১ লাখ ৪ হাজার টাকা পান তিনি। তিনি হলফনামায় চারতলা বাণিজ্যিক ভবনের মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ ছাড়া তার প্রায় ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার এফডিআর আছে, যেটা পাঁচ বছর আগে ছিল না। সামশুলের শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক। তার কাছে ১০ হাজার ৩২ ইউএস ডলার আছে। তার কাছে অস্ত্র থাকলেও নাম কিংবা ধরন উল্লেখ করেননি। তার দুটি ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি আছে, যার মূল্য ১ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

কুষ্টিয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর আয় বেশি

কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়া-৩ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী পারভেজ আনোয়ার তনুর বার্ষিক আয় অনেক বেশি। কুষ্টিয়া-২ আসনে অপর হেভিওয়েট প্রার্থী জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনের আয়ও অনেক বেশি।  হলফনামায় দেওয়া হিসাব মোতাবেক আয়ের দিক থেকে কুষ্টিয়ার প্রার্থীদের মধ্যে সবার ওপরে আছেন কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলীর ছেলে পারভেজ আনোয়ার তনু। তার বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৫ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ আয় তার ও তার ওপর নির্ভরশীলদের ব্যবসা থেকে আসে। তবে সিংহভাগ অর্থাৎ ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা আয় আসে তনুর নিজের ব্যবসা থেকে। বছরে আয় এত, কিন্তু সম্পদ দেখানো হয়েছে মাত্র ৩ কোটি ৮৭ লাখ। এ আসনেই নৌকার প্রার্থী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের আয় দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ৬৪ লাখ ২৪ হাজার ১০ টাকা। কুষ্টিয়া-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিনের আয়ও অনেক। তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তার ও তার ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬৬ টাকা। তাদের সম্পদের পরিমাণ ১১ কোটি ৭৩ লাখ ৭১ হাজার ৮১ টাকা। চার বছরে সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৮ গুণ। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে তিনি ২০১৯ সালের ২৬ ফেরুয়ারি যে হলফনামা দিয়েছিলেন সেখানে তার সম্পদ উল্লেখ ছিল ১ কোটি ৩৮ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩৫ টাকা। এ আসনের প্রার্থী জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও তার ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় মাত্র ৩৩ লাখ ৭৮ হাজার ৮০৪ টাকা। এবার তার মোট সম্পদ দেখানো হয়েছে ৫ কোটি ৭০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। পাঁচ বছর আগে তার সম্পদ ছিল ৩ কোটি ১২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি আসনের প্রার্থীদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থী ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের পাঁচ বছরে সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ৩ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সম্পদের পরিমাণ অপরিবর্তিত রয়েছে। এমপি প্রার্থী ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের কাছে নগদ অর্থ না থাকলেও তার স্ত্রীর কাছে রয়েছে নগদ ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৮২৪ টাকা। ২০১৮ সালে তার কাছে নগদ অর্থ ৬ লাখ ৫১ হাজার ২৬০ টাকা থাকলেও স্ত্রীর কাছে নগদ কোনো টাকা ছিল না। বর্তমানে তার নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৫৪ লাখ ৮১ হাজার ৫৩৪ টাকা। গতবার ছিল ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। বর্তমানে তার স্ত্রীর রয়েছে ১৯ লাখ ৯২ হাজার ৬৫৪ টাকা। কিন্তু গতবার তার স্ত্রীর কাছে কোনো অর্থ ছিল না। তার নামে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ২৬৩ টাকার শেয়ার। গতবার তাদের কোনো শেয়ার ছিল না। এ ছাড়া তার নামে ১ কোটি ৬ লাখ ৩৬ হাজার ৭০৩ টাকা মূল্যমানের বাস, ট্রাকসহ মোটরগাড়ি রয়েছে।

সর্বশেষ খবর