রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইসিতে ৫৬১ আপিল, আছে পাল্টাপাল্টিও

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে রিটার্নিং অফিসারদের আদেশের বিরুদ্ধে ৫৬১টি আপিল জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনে। এর মধ্যে বৈধ ঘোষিত প্রার্থীকে অবৈধ ঘোষণার দাবিতে অন্তত ৩০টি আপিল হয়েছে। গতকাল আপিলের শেষ দিনে মোট ১২৩টি আবেদন জমা পড়েছে। এদিকে নির্বাচনে অংশ নিতে এবার সারা দেশে মনোনয়নপত্র জমা পড়ে ২ হাজার ৭১৬টি। ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাচাই-বাছাইয়ে এগুলোর মধ্যে বাদ পড়ে ৭৩১টি। বাদ পড়াদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ৪২৩ জন, যাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। দলীয় প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৭ জন কাটা পড়েছেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের। জাতীয় পার্টির ৩০ জন এবং তৃণমূল বিএনপির বাদ পড়েছেন ২৪ জন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চারজন, গত নির্বাচনে নৌকা নিয়ে লড়াই করা বিকল্প ধারার দুজনের মনোনয়নপত্রও বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ ছিল ৫ থেকে ৯ ডিসেম্বর। এ আপিলে কেবল প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার আবেদন করা যায়- এমন নয়, বৈধ ঘোষিত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিলের আবেদনও করা যায়।

গতকাল আপিলের শেষদিনে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুনানি করে সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন। রবিবার বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচির অনুমতির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের করণীয় আছে কি না- এ প্রশ্নে ইসি সচিব বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম দেখভাল করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা সেখান থেকেই গণমাধ্যমকে জানতে হবে।

শাহজাহান ওমরের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল : হলফনামায় মামলার তথ্য গোপনের অভিযোগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান ওমরের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন বাদ পড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুজ্জামান। গতকাল স্বতন্ত্র এ প্রার্থীর পক্ষে তার প্রতিনিধি জাকির আপিলটি জমা দেন। জানতে চাইলে মনিরুজ্জামান বলেন, হলফনামায় মামলার তথ্য গোপন করেছেন ও সম্পদবিবরণীতে সঠিকভাবে দেয়নি বলে গণমাধ্যমেও এসেছে। সংক্ষুব্ধ হয়ে শাহজাহান ওমরের বিরুদ্ধে আমার পক্ষ থেকে সাব্বির নামে একজন আপিলটি করেছেন।

সাদিক-ফারুক পাল্টাপাল্টি আপিল : এদিকে বরিশাল-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ মনোনয়নপত্রের হলফনামায় মামলার বিষয়ে অসত্য তথ্য দেওয়ার অভিযোগে প্রার্থিতা বাতিল চেয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহিদ ফারুক।

গতকাল সাদিক আবদুল্লাহর এ আপিল আবেদন জমা দেন মো. ইফতাউল কামাল নামে এক ব্যক্তি। এর আগে ৬ ডিসেম্বর হলফনামায় অসত্য তথ্য দেওয়ার অভিযোগে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা সেরনিয়াবত সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়নপত্র বাতিলের দাবিতে আপিল করেছেন ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীম।

এবার এ কে আজাদের প্রার্থিতা বাতিল চান শামীম : ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম হক শনিবার হলফনামায় অসত্য তথ্য, সম্পদবিবরণী ও নির্ভরশীলদের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের মনোনয়নপত্র বাতিল চেয়েছেন। জানতে চাইলে শামীম বলেন, আইনজীবী সব বিষয় তুলে ধরেছেন আপিলে। নির্বাচন কমিশন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের সব অসত্য তথ্য, দলিলাদি দেখে সঠিক সিদ্ধান্ত দেবেন আশা করি। এর আগের দিন শুক্রবার স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ হলফনামায় অসত্য তথ্য দেওয়ার অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম হকের মনোনয়নপত্র বাতিল চেয়ে আপিল করেছিলেন।

পঙ্কজের প্রার্থিতা বাতিল ও নিজেরটি ফিরে চেয়ে শাম্মীর আপিল : যাচাই-বাছাইয়ে বাতিল হয়ে যাওয়া প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া শাম্মী আহমেদ। সেই আসনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথের প্রার্থিতা বাতিলের আবেদনও জানিয়েছেন তিনি। গতকাল নির্বাচন কমিশনে শাম্মী আহমেদ আপিল দুটি করেন। তবে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের দিন পঙ্কজের আবেদনে শাম্মীর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা বরিশালের জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম। তিনি সেদিন বলেন, শাম্মী আহম্মেদের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করা হয়েছে। এ আদেশের বিরুদ্ধে সেদিনই আপিল করার কথা জানিয়েছিলেন শাম্মীর বড় ভাই শাহাব উদ্দিন আহমেদ।

সর্বশেষ খবর