সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইনুর নগদ অর্থ বেড়েছে ৫২ গুণ

পিছিয়ে নেই অন্য এমপিরা ♦ সম্পদ ও ঋণ বেড়েছে দীপু মনির ♦ ঋণগ্রস্ত শামীম ওসমান

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইনুর নগদ অর্থ বেড়েছে ৫২ গুণ

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ চলছে। আগের নির্বাচনের তুলনায় অধিকাংশ মন্ত্রী, এমপির সম্পদ ও নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। কারও কারও বেড়েছে অনেক গুণ। কেউ কেউ লাখপতি থেকে হয়েছেন কোটিপতি। কারও নিজের চেয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের সম্পদ বেড়েছে। আগের নির্বাচনের হলফনামার সঙ্গে চলতি নির্বাচনের হলফনামার বিশ্লেষণ করে পাঠিয়েছেন আমাদের জেলা প্রতিনিধিরা।   

কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়া-২ আসনের টানা তিনবারের এমপি ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর গত ১০ বছরে নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫২ গুণ। এ সময়ের মধ্যে ইনুর স্ত্রীর নগদ অর্থ বেড়েছে ২৫ গুণের বেশি। মহাজোট সরকারের তথ্যমন্ত্রীও ছিলেন হাসানুল হক ইনু। কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে তিনি হলফনামা জমা দিয়েছেন। ওই হলফনামার সঙ্গে বিগত দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। দশম সংসদ নির্বাচনে ইনুর দেওয়া হলফনামায় নগদ টাকা ছিল ৬ লাখ ৮৫ হাজার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছিল ৫০ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় নগদ টাকা দেখিয়েছেন ৩ কোটি ৫৬ লাখ ১৫৫ টাকা। (এর মধ্যে গাড়ি বিক্রি বাবদ রয়েছে ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।) দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইনুর স্ত্রীর নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৩৮ হাজার ৯০ টাকা। একাদশ সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় ছিল ৬০ লাখ ৩ হাজার ২৫৮ টাকা। এবার নির্বাচনে এসে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৬১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪৩ টাকা। হলফনামায় দেওয়া তথ্যমতে, ইনুর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ১৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা; এ খাতে পাঁচ বছর আগে ছিল ৪৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা। ১০ বছর আগে ছিল ৩৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে এবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ২৭০ টাকা। পাঁচ বছর আগে ছিল ১৪ লাখ ২৮ হাজার ৬৭৭ টাকা। ১০ বছর আগে ছিল মাত্র ৮০ হাজার ৪৯৩ টাকা।

মুজিবুল হকের চেয়ে স্ত্রীর সম্পদ বেশি

কুমিল্লা : কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসন থেকে টানা তিনবারের এমপি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক রেলমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাঁচ বছর। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী তিনি। নির্বাচনি হলফনামার তথ্য বলছে, তাঁর চেয়ে স্ত্রী হনুফা আক্তার ও সন্তানদের অর্থ-সম্পদ বেশি।

হলফনামায় মুজিবুল হকের বার্ষিক আয় উল্লেখ করা হয়েছে ১৬ লাখ ১৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে এমপি হিসেবে সম্মানী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা এবং আয়কর আইনজীবী হিসেবে প্রাপ্ত পেশাগত আয় ১৪ লাখ ১১ হাজার টাকা। বাসা ভাড়া ২ লাখ টাকা, কৃষি খাত থেকে আয় ৬ হাজার। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ আছে ৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদ হিসেবে কৃষিজমি রয়েছে এক দশমিক ৩৩ একর। মূল্য ৬ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। অকৃষি জমি রয়েছে দশমিক ১৬ একর। মূল্য ১১ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। ১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা মূল্যের দুটি আবাসিক দোতলা ভবন ও একটি বাণিজ্যিক ছয়তলা ভবন রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট।

মুজিবুল হকের চেয়ে তাঁর স্ত্রী হনুফা বেগমের সম্পদ বেশি। তাঁর স্ত্রীর নগদ রয়েছে ২০ লাখ ৫৪ হাজার ৬৬৮ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ১১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে শেয়ার ক্রয় ও জীবন বীমায় ৬৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। স্থায়ী আমানত ৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। স্বর্ণ রয়েছে ৮৭ ভরি। ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্যের একটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। এ ছাড়া সন্তানদের নামে ২ কোটি ৩০ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সম্পদ রয়েছে।

এমপি বাবুর জমি বেড়েছে ৪২ গুণ

নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে আওয়ামী লীগের এমপি নজরুল ইসলাম ওরফে বাবু ও তাঁর স্ত্রীর সহায়-সম্পত্তি বহুগুণ বেড়েছে। ১৫ বছরের ব্যবধানে নজরুল ইসলামের অকৃষিজমি বেড়ে ৪২ গুণ হয়েছে। তাঁর স্ত্রী শূন্য থেকে ৩৫৫ শতাংশ অকৃষি জমির মালিক হয়েছেন। আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে তাঁর দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার এ তথ্য পাওয়া গেছে। নজরুল ইসলাম এবার নিয়ে চতুর্থ দফায় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী (আমদানিকারক ও সরবরাহকারী) বলে উল্লেখ করেন। তাঁর স্ত্রী সায়মা ইসলাম আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে নজরুল ইসলাম তাঁর হলফনামায় পেশার ঘরে উল্লেখ করেছিলেন তিনি প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার। ওই ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। তখন তাঁর স্ত্রীর চিকিৎসা থেকে আয় দেখানো হয় ১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে নজরুল ইসলামের নগদ ৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা। সে সময় স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে নজরুল ইসলাম শুধু নিজের নামে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ অকৃষি জমি দেখিয়েছিলেন, যার মূল্য ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তবে স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের নামে কোনো সম্পদ ছিল না। গত ১৫ বছরে এই এমপি ও তাঁর স্ত্রীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বহুগুণ বেড়েছে। হলফনামায় নজরুল ইসলাম নিজের নামে অকৃষি জমি ৩৬১ শতাংশ দেখিয়েছেন, যার মূল্য ২ কোটি ৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ২ দশমিক ২ শতাংশ জমির ওপর দালানের মূল্য দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। এ ছাড়াও রয়েছে ৩ হাজার ২০০ বর্গফুটের ৮১ লাখ টাকার মূল্যের ফ্ল্যাট একটি, পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট ৪১ লাখ টাকাসহ মোট ৩ কোটি ২৯ লাখ ১২ হাজার টাকার সম্পত্তি।

শামীম ওসমান ঋণগ্রস্ত

নারায়ণগঞ্জ : টানা দুই মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে এমপির দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে এম শামীম ওসমান। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামার সঙ্গে বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই এমপির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাড়লেও আয় বেড়েছে অল্প পরিমাণে। তবে এই পাঁচ বছরের ব্যবধানে ঋণের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। শামীম ওসমান আওয়ামী লীগ থেকে ১৯৯৬, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।

হলফনামায় তিনি জানান, শামীম ওসমানের নগদ টাকা রয়েছে ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫৯২ টাকা। ব্যাংকে নিজ নামে জমা রয়েছে ৭৩ লাখ ৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া রয়েছে বন্ড ও শেয়ার জেড এন শিপিংয়ের নামে ১ কোটি, মাইশা এন্টারপ্রাইজে ৯৫ লাখ, উইসডম নিটিংয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার, জেড এন করপোরেশনে ১ কোটি ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৪ টাকা, খান ব্রাদার্সে ২ লাখ ৫০ হাজার। এমপি শামীম ওসমানের নামে আইএফআইসি ব্যাংকে এফডিআর রয়েছে ২ কোটি ৪৯ লাখ ১ হাজার টাকা। হলফনামায় উল্লেখ করা ঋণের মধ্যে রয়েছে- বিদেশে কর্মরত বন্ধুর কাছ থেকে সুদবিহীন ঋণ নিয়েছেন ২৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯৫০ টাকা। আইএফআইসি ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ শাখা থেকে নিয়েছেন ৭৩ লাখ ৪ হাজার ৬৮৯ টাকা। গাড়ি বাবদ ঋণ নিয়েছেন ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৭ টাকা। ক্রস চেকের মাধ্যমে ঋণ নিয়েছেন ১ কোটি টাকা। এ ছাড়া জেড এন শিপিং লাইন লিমিটেডের নামে আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন ১৫ কোটি টাকা এবং মাইশা এন্টারপ্রাইজের নামে ৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে।

ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ডা. দীপু মনির

চাঁদপুর : চাঁদপুর-৩ আসনের এমপি ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সম্পদের পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের পরিমাণও বেড়েছে গত পাঁচ বছরে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সদর ও হাইমচরের এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী টানা তিনবারের এই এমপির জমা দেওয়া হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণে এসব তথ্য জানা গেছে। আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি পেশা হিসেবে চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী ও রাজনীতিক উল্লেখ করেছেন। ২০১৮ ও ২০২৩ সালের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৮ সালে তিনি স্থাবর সম্পদ হিসেবে ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের দুটি ফ্ল্যাটের মালিক ছিলেন। এবার তিনি তিনটি ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করেছেন; যেগুলোর মূল্য দেখিয়েছেন ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ ছাড়া স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৩৪ লাখ টাকা মূল্যের ১০ কাঠা অকৃষি জমি। আগেও এ পরিমাণ জমিই দেখিয়েছিলেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় দীপু মনি স্বামীর নামে ৪০ লাখ টাকার দুটি ফ্ল্যাট দেখালেও বর্তমানে সেখানে দেখিয়েছেন ১৫ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট। পাশাপাশি ২০১৮ সালের নির্বাচনে গাড়ি বাবদ এক্সিম ব্যাংকে ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৯০৫ টাকা ঋণ দেখালেও এবার ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। তিনি ১ কোটি ১১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যক্তিগত ঋণ দেখিয়েছেন।

গোলাপের নগদ অর্থ বেড়েছে ৪ গুণ

মাদারীপুর : মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপের নগদ অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪ গুণ বেড়েছে পাঁচ বছরের ব্যবধানে। কিনেছেন কোটি টাকার বিলাসবহুল গাড়ি; সঙ্গে বেড়েছে স্ত্রীর অর্থ। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক গোলাপ মাদারীপুর-৩ (সদরের একাংশ, কালকিনি ও ডাসার উপজেলা) আসনের এমপি। নির্বাচনি হলফনামায় তিনি বলেন, পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালের হলফনামায় গোলাপ নগদ টাকার ঘরে নিজের নামে ৭৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা এবং স্ত্রী গুলশান আরার নামে ১ কোটি ১১ লাখ ১৪ হাজার টাকা রয়েছে উল্লেখ করেছিলেন। এবার ১৫ লাখ ২৮ হাজার ৬১৪ টাকা দেখিয়েছেন। তবে গোলাপের স্ত্রীর টাকা বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।

২০১৮ সালে গোলাপের নিজের নামে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৩৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৫১ লাখ ৯ হাজার টাকা জমা দেখিয়েছেন। বর্তমানে তাঁর জমা অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ৪৫ লাখ ৩ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর নামে ২৮ লাখ ১৮ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। সে অনুযায়ী গোলাপের নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ৪ দশমিক ৩১ গুণ। ২০১৮ সালের হলফনামা অনুযায়ী, স্ত্রীর কাছে ৯৮ হাজার ১১৮ ইউএস ডলার ছিল। কিন্তু চলতি বছরে তাঁর কাছে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা নেই।

সর্বশেষ খবর