সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
ইসির নির্দেশনা

ব্যালট বাক্স ছিনতাই হলে ভোট বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ব্যালট বাক্স ছিনতাই হলে ভোট গ্রহণ বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বিকালে ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান সারা দেশের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা পাঠান। এ ছাড়াও বেশকিছু বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে রয়েছে- নির্বাচনে ভীতি প্রদর্শন, চাপ সৃষ্টি করা হলে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করে দেবে নির্বাচন কমিশন; ভোটকক্ষে একই সময়ে একাধিক ব্যালট বাক্স ব্যবহার না করতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। এ ছাড়া নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে অবাঞ্ছিত ব্যক্তিরা যাতে প্রবেশ করতে না পারে, তা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়, প্রিসাইডিং অফিসারের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে যদি কোনো সময় ভোট গ্রহণ বিঘিœত বা বাধাগ্রস্ত হয় এবং তা ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুনরায় শুরু করা সম্ভব না হয়, তা হলে তিনি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ২৫-এর বিধান অনুসারে অনতিবিলম্বে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেবেন। এবং নিকটস্থ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ঘটনাবলি সম্পর্কে অবহিত করার পাশাপাশি রিটার্নিং অফিসারকেও তা অবহিত করবেন।

এ ছাড়া ভোট কেন্দ্রে ব্যবহৃত কোনো স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রিসাইডিং অফিসারের হেফাজত থেকে বেআইনিভাবে ও জোরপূর্বক অপসারণ করা হলে বা দুর্ঘটনাক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট করা হলে বা হারিয়ে গেলে বা এরূপ ক্ষতিগ্রস্ত বা বিকৃত হলে, যে ক্ষেত্রে ওই ভোট কেন্দ্রের ফলাফল নির্ধারণ করা যাবে না, সে ক্ষেত্রেও প্রিসাইডিং অফিসার ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেবেন এবং রিটার্নিং অফিসারকে অবহিত করবেন। রিটার্নিং অফিসার অনতিবিলম্বে ওই ঘটনা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের নিকট একটি প্রতিবেদন পেশ করবেন এবং যথাসম্ভব, নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন নিয়ে নতুনভাবে ভোট গ্রহণের জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করবেন। নির্দেশনায় আরও বলা হয়, যে ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ হবে সেই ভোট কেন্দ্রের ফলাফল ব্যতীত যদি ওই নির্বাচনি এলাকার ফলাফল বাকি ভোট কেন্দ্রের ফলাফল দ্বারা নির্ধারিত না হয়, তা হলে নির্বাচন কমিশন ওই ভোট কেন্দ্রে পুনঃভোট গ্রহণের জন্য রিটার্নিং অফিসারকে নির্দেশ প্রদান করবে। রিটার্নিং অফিসার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশক্রমে ওই ভোট কেন্দ্রে/ভোট কেন্দ্রসমূহে ভোট গ্রহণের জন্য একটি দিন ও সময় ধার্য করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবেন। মনে রাখবেন, এমন ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ভোট কেন্দ্রাধীন সব ভোটার ভোট দিতে পারবেন এবং বন্ধ ঘোষিত নির্বাচনে ভোট গণনা করা যাবে না।

ভীতি প্রদর্শন, চাপ সৃষ্টি হলে পুরো আসনের ভোট বাতিল -ইসি : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভীতি প্রদর্শন, চাপ সৃষ্টি করা হলে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করে দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক পরিপত্র জারি করে এমনটি জানিয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমানের সই করা পরিপত্রে বলা হয়েছে, কতিপয় ক্ষেত্রে কমিশনের নির্বাচনি কার্যক্রম বন্ধ করার ক্ষমতা : গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ এর ৯১-এর বিধান অনুসারে কমিশনের কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে, নির্বাচনে বল প্রয়োগ, ভীতি-প্রদর্শন এবং চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে ন্যায়ানুগ ও নিরপেক্ষভাবে এবং আইন অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করতে সক্ষম হওয়া যাবে না, সেক্ষেত্রে যে কোনো ভোট কেন্দ্র বা ক্ষেত্রমতো সম্পূর্ণ নির্বাচনি এলাকায় যে কোনো পর্যায়ে ভোট গ্রহণ বন্ধ করতে পারবে কমিশন। তা ছাড়া, কোনো ব্যালট পেপার নাকচ বা গ্রহণসহ, এ অধ্যাদেশ বা বিধিমালার অধীন কোনো কর্মকর্তার দেওয়া কোনো আদেশ পুনর্বিবেচনা করতে পারবে কমিশন। নির্বাচন নিরপেক্ষ, ন্যায়ানুগ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান ও ক্ষমতা প্রয়োগসহ প্রাসঙ্গিক অন্যান্য আদেশও দিতে পারবে।

ভোটকক্ষে একই সময়ে একাধিক ব্যালট বাক্স ব্যবহার নয় -ইসি : সংসদ নির্বাচনের ভোটকক্ষে একই সময়ে একাধিক ব্যালট বাক্স ব্যবহার না করতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছেন। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভোট গ্রহণের জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার করতে হবে। এসব ব্যালট বাক্স ছাড়া অন্য কোনো প্রকার বাক্স ব্যবহার করা যাবে না। এ ছাড়া, কোনো ভোটকক্ষে একই সময়ে একাধিক ব্যালট বাক্স ব্যবহার করা যাবে না। যখন একটি বাক্স ভর্তি হয়ে যাবে, তখন বাক্সটি উপস্থিত সবার সামনে সিল করে নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে এবং ভোটকক্ষে ওই বাক্সের স্থলে নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে অন্য একটি স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ভোট গ্রহণের জন্য রাখতে হবে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সটি এমন স্থানে রাখতে হবে, যা উপস্থিত প্রার্থী, নির্বাচনি এজেন্ট, পোলিং এজেন্ট ও ভোট কেন্দ্রে কর্মরত ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার দৃষ্টিসীমার মধ্যে থাকে এবং সেখানে ভোটাররা সহজে পৌঁছতে পারেন।

ভোট কেন্দ্রে অবাঞ্ছিত ব্যক্তির প্রবেশ নয় -ইসি : সংসদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে অবাঞ্ছিত ব্যক্তিরা যাতে প্রবেশ করতে না পারে, তা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিশ্চিত করতে বলেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান নির্দেশনাটি পাঠিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, যেসব ব্যক্তি ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেন অর্থাৎ ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করার যোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা সংবলিত একটি পোস্টার প্রণয়ন করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক কপি মুদ্রণ করা হয়েছে। ওই মুদ্রিত পোস্টারের প্রয়োজনীয় সংখ্যক কপি প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ভোট গ্রহণের দিন ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই ভোট কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ পথে ও ভোট কেন্দ্রের প্রকাশ্য স্থানে ওই পোস্টার প্রদর্শনের জন্য প্রিসাইডিং অফিসারদের নির্দেশ দিতে হবে এবং ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত থাকার যোগ্য ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ যাতে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই অবাঞ্ছিত ব্যক্তিকে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। প্রিসাইডিং অফিসারদের ভোট গ্রহণ চলাকালে ভোট কেন্দ্রের সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ করতে নির্দেশ দেবেন।

নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব না দিলে মামলা করবে ইসি : সংসদ নির্বাচনের কোনো প্রার্থী নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব জমা না দিলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নির্বাচনি ব্যয়ের রিটার্ন দাখিল সংক্রান্ত বিধান সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়ে দেবেন। তারপরও যদি কেউ ওই বিধান কেউ লঙ্ঘন করেন, তা হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। যে ক্ষেত্রে নির্বাচনের বিরুদ্ধে নির্বাচনি মামলা দায়ের হবে না, সেক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার দিন হতে ছয় মাসের মধ্যে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে হবে এবং যে নির্বাচনে অপরাধ সংঘটিত হবে যদি ওই নির্বাচন হাই কোর্ট বিভাগের বিচারাধীন থাকে এবং হাই কোর্ট বিভাগ ওই অপরাধ সম্পর্কে কোনো আদেশ দিলে তার তিন মাসের মধ্যে রিটার্নিং অফিসারকে উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে। এতে আরও বলা হয়েছে, মামলা দায়েরের জন্য নির্বাচন কমিশনের পূর্বানুমতির প্রয়োজন নেই।

সর্বশেষ খবর