মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বলেই অংশ নিচ্ছি

শাহজাহান ওমর

গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বলেই অংশ নিচ্ছি

বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম বলেছেন, আমি গণতন্ত্র ও নির্বাচনে বিশ্বাসী। তাই এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করায় এলাকায় দলমতনির্বিশেষে সবার কাছেই আমার একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোটারদের মধ্যে তেমন কোনো বিভাজন নেই। অতীতেও আওয়ামী লীগের লোকেরা আমাকে ভোট দিয়েছেন। আর বিএনপির লোকজন তো আমাকেই ভোট দিতেন। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে ভার্চুয়ালি আলাপকালে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগে যোগদানের প্রশ্নে সাবেক এই বিএনপি নেতা বলেন, ১৯৯১ সালেই আমি আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করার জন্য গিয়েছিলাম। তখন তাদের মনোনয়ন আগেই চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ায় সে সময় আমি মনোনয়ন পাইনি। প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ রাজনীতিক শাহজাহান ওমর আরও বলেন, আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমি চেয়েছিলাম, বিএনপি নির্বাচনে যাক। কিন্তু দেখলাম, বিএনপি নির্বাচনে যেতে চায় না এবং এই নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের ধারণা- তৃতীয় কোনো পক্ষ এসে তাদের ক্ষমতায় বসাবে। আমি এটার বিপক্ষে। কারণ নিজের বল ছাড়া অন্যের শক্তি দিয়ে শক্তিমান হওয়া সম্ভব নয়। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করব- আর নির্বাচনেই যাব না, এটার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমি নির্বাচনমুখী মানুষ, সে জন্য আমি নির্বাচনে গেছি। তাছাড়া আমি তো অনেক আগে থেকেই বিএনপির এ ধরনের কর্মকাণ্ড বা ক্রিয়াকলাপের প্রতিবাদ করেছিলাম। কারণ এভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলে না। রাজনৈতিক কিছু সংস্কৃতি ও আচরণ আছে। সেগুলো না মানলে তো রাজনীতি করা যায় না। এসব বিষয়ে আমি দলের হাইকমান্ডকেও বলেছিলাম, কিন্তু আমার কথা শোনেননি। ফলে আমি বিএনপিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলাম না। অ্যাডজাস্ট করতে পারছিলাম না। তাই দল পরিবর্তন করেছি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বীরউত্তম খেতাব পাওয়া স্বনামধন্য মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান ওমর বলেন, আমি ১৯৭১ সালে জয়বাংলা স্লোগান দিয়েই মুক্তিযুদ্ধ করেছি। এই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই তখন দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি মিলিটারি একাডেমিতে আমার শিক্ষক ছিলেন। তিনি ১৯৭৮ সালে যখন রাজনীতি শুরু করেন, তখন আমাকে ডেকে নিয়ে তাঁর দলে যুক্ত করেছিলেন। তখন তো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সমস্যা ছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ছিলেন না। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন কেমন হবে? বিজয়ের বিষয়ে কতটা আশাবাদী? জানতে চাইলে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বলেন, আমি ভোট করছি। ভোট দেবে জনগণ। জনগণ যদি ভোট দেয়, তাহলে জিতব। ভোট না দিলে জিতব না। এটাই তো গণতন্ত্র। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের লোকেরাও আমাকে অতীতেও ভোট দিয়েছেন। আর বিএনপির লোকজন তো আমাকেই ভোট দিতেন। কাজেই আমি এই নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদী। একই সঙ্গে আগামী ৭ জানুয়ারির ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলেও প্রত্যাশা করি। আদালত থেকে জামিনে মুক্তিলাভের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক বলেন, সিনিয়র আইনজীবী জয়নাল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, নিতাই রায় চৌধুরী ও আমি এই চারজন একসঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আবেদন করেছিলাম। আদালতে হাজির হয়ে তারা তিনজনই আইনজীবী হিসেবে জামিন পেয়েছেন। তার দুই দিন আগে মাত্র আমি গ্রেফতার হয়েছিলাম। তা না হলে সেদিনই তাঁদের সঙ্গেই আমি জামিন পেতাম। কাজেই আমার জামিনটাও আইনের স্বাভাবিক গতিতেই হয়েছে। এর আগে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় গ্রেফতার হন তিনি। তাকে রিমান্ডেও নেওয়া হয়। সব শেষে গত ২৯ নভেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি লাভ করেন। মুক্তিলাভের পরদিনই ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং জাতীয় সংসদের ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এভাবেই বিএনপির সঙ্গে ৪৪ বছরের রাজনীতির সব সম্পর্কের অবসান ঘটে বিএনপির সাবেক এই ভাইস চেয়ারম্যানের। ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, বীরউত্তম এখন পুরোদস্তুর আওয়ামী লীগ নেতা।

সর্বশেষ খবর