বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা হয়নি ৫২ বছরেও

আরাফাত মুন্না

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। ঠিক তার দুই দিন আগেই বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামসরা। এরপর ৫২ বছর কেটে গেলেও এখনো হয়নি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের কোনো পূর্ণাঙ্গ তালিকা।

স্বাধীনতার এত বছর পরও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ না হওয়া নিয়ে আক্ষেপ করেছেন শহীদদের সন্তানরাও। তারা বলেন, এই দেশে   যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। তবে সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা আজও করা সম্ভব হলো না। জানা গেছে, শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রণয়নে ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর গবেষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে যাচাই-বাছাই কমিটি করা হয়। এই কমিটি ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর প্রথম সভায় প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ২২২ জন বুদ্ধিজীবীর তালিকা অনুমোদন দেয়। পরের বছর ২৫ মার্চ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রথম তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রথম দফার তালিকায় স্থান পায় ১৯১ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম। পরে গত বছর ২০ জুন আরও ১৪৩ জনের নাম যুক্ত করে দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা মোটামুটি আমরা করে দিয়েছি, বাকি আছে কিছু। তাও করে দেব। তিনি বলেন, এটা চলমান প্রক্রিয়া। আবেদন আসছে, আবেদন যাচাই-বাছাই শেষ হলেই পূর্ণাঙ্গ তালিকা করা সম্ভব হবে। জানতে চাইলে শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে অভিনেত্রী শমী কায়সার বলেন, আজকে বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়েছে, আমরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারছি। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। তবে আমাদের আক্ষেপের জায়গা একটি, তা হলো বাংলাদেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা এখনো হয়নি। স্বাধীনতার ৫২ বছরেও একটা তালিকা করতে পারলাম না। আমরা বার বার দাবি জানিয়েছি কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। আরেক শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীর বলেন, শহীদদের যে জায়গায় পৌঁছে দেওয়া দরকার তা পারিনি। তবে আমাদের কাছে প্রতিদিনই ১৪ ডিসেম্বর। রাষ্ট্রের কাছে প্রত্যাশা দ্রুত শহীদ বুদ্ধিজীবীদের একটা পূর্ণাঙ্গ তালিকা করবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকা যাচাই-বাছাই করে পিতার নাম ও ঠিকানাসহ মতামত দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় কমিটিকে। মুক্তিযুদ্ধকালীন শহীদদের মধ্যে কারা শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন সেই সংজ্ঞা নির্ধারণ করতেও বলা হয় কমিটিকে। বিভিন্ন গবেষণা গ্রন্থ, পত্রিকা কাটিং, টিভি রিপোর্ট, অন্যান্য সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রস্তুত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় কমিটিকে। একই সঙ্গে কমিটিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা, জেলা-উপজেলা ও অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত ব্যক্তিদের আবেদন যাচাই-বাছাই ও শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করতে বলা হয়। এদিকে কমিটি নির্ধারিত শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যে সব সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী, রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী, সংস্কৃতিসেবী, চলচ্চিত্র, নাটক, সংগীত ও শিল্পকলার অন্যান্য শাখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, যারা বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী কিংবা তাদের সহযোগীদের হাতে শহীদ কিংবা চিরতরে নিখোঁজ হয়েছেন তারা শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিবেচিত হবেন।

সর্বশেষ খবর