শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

শরিকদের সাত আসন ছাড়ল আওয়ামী লীগ জোটের প্রত্যাখ্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক

শরিকদের সাত আসন ছাড়ল আওয়ামী লীগ জোটের প্রত্যাখ্যান

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিকদের আপাতত সাতটি আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল রাতে আওয়ামী লীগ নেতা ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আজকে (গতকাল) ১৪ দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে আমরা বসেছিলাম। সেখানে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। জাসদকে তিনটি, ওয়ার্কার্স পার্টিকে তিনটি এবং জাতীয় পার্টিকে (জেপি) একটি আসন ছেড়েছি আমরা।’ ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে- বরিশাল-৩ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। রাজশাহী-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা ও সাতক্ষীরা-১ আসনে মোস্তফা লুৎফুল্লাহ আহসান। জাসদকে ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে- কুষ্টিয়া-২ আসনে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বগুড়া-৪ আসনে রেজাউল করিম তানসেন ও লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে মোশাররফ হোসেন। পিরোজপুর-২ আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জেপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে। এসব আসনে নৌকার প্রার্থী তুলে নেওয়া হবে। তবে ছাড় দেওয়া আসনেও আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মুখোমুখি হতে হবে তাদের। এসব আসনের মধ্যে নৌকা পেয়েছিলেন সাতক্ষীরা-১ আসনে ফিরোজ আহমেদ স্বপন, রাজশাহী-২ আসনে নৌকা দেওয়া হয়েছিল মোহাম্মদ আলীকে, বরিশাল-৩ আসনে নৌকা পেয়েছিলেন সরদার মো. খালেদ হোসেন। তবে কুষ্টিয়া-২ আসনে ফাঁকা রাখা হয়েছিল। এ ছাড়া লক্ষ¥ীপুর-৪ আসনে নৌকা পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী। বগুড়া-৪ আসনে নৌকা দেওয়া হয়েছিল হেলাল উদ্দিন কবিরাজকে। পিরোজপুর-২ আসনে নৌকা পেয়েছিলেন কানাই লাল বিশ্বাস। 

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, আজ ও কালকের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া আসন সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটকে ১৬টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে এবার শরিকদের আসন কমানোর যে সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ নিয়েছে, তা ‘বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান’ করার কথা জানিয়েছেন ১৪ দলের শরিক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেছেন, ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমু ভাই প্রাথমিকভাবে সাতটি আসনের নাম প্রস্তাব করেছেন। আমরা উনাকে বিনয়ের সঙ্গে আসন আরও বৃদ্ধির জন্য বলেছি এবং এটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে আমরা বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছি।’

ইনু আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি, প্রথমত আসন সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। দ্বিতীয়ত জোটের শরিকদের নিয়ে চাহিদা অনুযায়ী আসন বণ্টন করার জন্য বলেছি। তৃতীয়ত আমাদের যেসব আসনে ছাড় দেওয়া হবে সে আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এবং স্বতস্ত্র প্রার্থী উঠিয়ে নিতে হবে। চতুর্থত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহকারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার জন্য বৈঠক করতে হবে।’

জোট শরিক তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ‘আমু ভাই যে ঘোষণাটি দিয়েছেন, সেটি আনুষ্ঠানিক না। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, উনার প্রতি আমার আস্থা অতীতেও ছিল, এখনো আছে। আমি আশা করছি গতবারের মতো এবারও আসন পাব।’ তিনি বলেন, ‘আমি জোটে আছি, ছিলাম, থাকব’। গত দুটি নির্বাচনে জেতা সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর আসনটিতে এবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ারকে। তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান আসনটি ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে আছেন। তবে সেখানে নতুন নিবন্ধিত দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আলহাসানী আল মাইজভান্ডারীও প্রার্থী হয়েছেন। নজিবুল বশর ও সাইফুদ্দীন সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। সেখানে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিনও প্রার্থী হয়েছেন।  গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী শরিক দলগুলোর মধ্যে এবার সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া চট্টগ্রাম-১ এবং জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম ঢাকা-১৪ আসনে ছাড় দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। দৃশ্যত তারা এখনো হতাশার মধ্যেই রয়েছেন। এ বিষয়ে শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আজকের (গতকাল) বৈঠকে আমরা ছিলাম না। শুনেছি আমাদের একটি আসন দেওয়া হয়েছে। আশা করি আসন বাড়বে। যদি বাড়ানো না হয়, তাহলে আমাদের তো নিজস্ব প্রতীক আছেই। সেই প্রতীকে নির্বাচন করব।’ ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল জোটবদ্ধভাবেই নির্বাচন করে আসছে। তিনটি নির্বাচনের মধ্যে দুটিতে জাতীয় পার্টিও ছিল জোটে। বিএনপি-জামায়াতের বর্জনে ২০১৪ সালের ১০ম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মহাজোটে না থাকলেও তাদের সঙ্গে আসন সমঝোতা হয়েছিল। এবারও বিএনপি-জামায়াত ভোটে আসেনি। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের অঙ্কটা কী হয়, তা নিয়ে আছে নানা সমীকরণ। তবে ১৪ দল ও আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ নির্বাচন করবে, সেটি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগেই জানিয়ে দেওয়া হয় নির্বাচন কমিশনে।

৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার চতুর্থ দিন ৪ ডিসেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলের শরিক দলের নেতাদের বৈঠক হয়। সেই বৈঠক থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। জানানো হয়, পরদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলন করে তালিকা প্রকাশ করবেন। তবে কাদের সেদিন কোনো তালিকা প্রকাশ না করে জানান, ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে আসনের বিষয়ে সমঝোতার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা করেছেন দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু। তার অংশ হিসেবে গতকাল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আসন ছাড়ের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। আজ বা কাল আসন নিয়ে আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে।

সর্বশেষ খবর