শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ শহীদ  বুদ্ধিজীবীদের

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গতকাল পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -পিআইডি

রায়েরবাজারের যে স্থানে এখন বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ একাত্তরে এ স্থানে ছিল পরিত্যক্ত ইটখোলা। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের আগ মুহূর্তে ১৪ ডিসেম্বর এখানেই পাকিস্তানের ঘাতক সেনাবাহিনী তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের সঙ্গে নিয়ে দেশের কৃতী শিক্ষক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিল্পী, চিকিৎসক, দার্শনিক, আইনবিদ, রাজনীতিকসহ বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে তাঁদের তুলে এনে নির্মম নির্যাতন করে এই ইটখোলায় হত্যা করেছিল। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর এখান থেকে বুদ্ধিজীবীদের হাত বাঁধা মৃতদেহ পাওয়া যায়। প্রকাশ হয়ে যায় বাঙালিদের মেধাশূন্য করতে পাকিস্তানের খুনি বাহিনীর ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। সেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণেই এখানে তৈরি করা হয়েছে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। গতকাল ছিল জাতির সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের দিন। শোক ও শ্রদ্ধায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করেছে জাতি। বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতিসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষ। দিনের শুরুতে সকাল ৭টায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সামনে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। মিরপুরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ সারা দিন মুখর ছিল দেশাত্মবোধক গান, আবৃত্তি আর শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা অগণিত মানুষের সমাগমে। তাঁরা ফুলে ফুলে ভরিয়ে তোলেন স্মৃতিসৌধের বেদি। মন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক-ছাত্র, রাজনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ব্যানার আর পুষ্পস্তবক নিয়ে শোভাযাত্রা করে বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে আসেন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।

শ্রদ্ধা জানাতে যারা এসেছেন তাদের মধ্যে তরুণ ও শিশু-কিশোরদের উপস্থিতিই ছিল বেশি। সংগঠন ছাড়া ব্যক্তিগতভাবেও এসেছেন বহু মানুষ। অনেকেই কালো ব্যাজ ও কালো পাঞ্জাবি বা সাদা-কালো প্রিন্টের শাড়ি পরেছিলেন। জাতীয় পতাকা, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ছবিসংবলিত পোস্টার, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনার ছবি, পত্রিকার কাটিং, ব্যানার আর ফুলে ফুলে সাজানো হয়েছিল বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ চত্বর। এর দক্ষিণ প্রান্তের সবুজ চত্বরে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ছবি, ফুল ও পতাকা দিয়ে একটি স্থাপনা তৈরি করে। তার পাশের ইটের স্তূপের ওপরে খেলাঘরের ছোট ছোট শিশুরা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মৃতদেহের অনুসরণে শুয়ে থেকে সেদিনের সেই দৃশ্যপট তৈরি করে। এ ছাড়া স্মৃতিসৌধের উত্তর প্রান্তে ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনার ছবি নিয়ে একটি বড় স্থাপনাকর্ম।

মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন সেক্টরের ছবির বড় বড় ডিজিটাল প্রিন্ট, ব্যানার, প্লাকার্ড দিয়ে এ প্রান্ত সুসজ্জিত করেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন ‘ব্রিগেড-৭১’। এ ছাড়া শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে স্মৃতিসৌধের মূল চত্বরের সামনে উন্মুক্ত স্থানে ব্যানার টাঙিয়ে আবৃত্তি, সংগীত পরিবেশনার আয়োজন করা হয়। এতে কবিতা পাঠ করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী স্বরলিপিসহ অনেকে। ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি’ এমন দেশাত্মবোধক গানে গানে অন্য রকম আবহ সৃষ্টি হয়েছিল স্মৃতিসৌধ চত্বরে।

বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে মন্ত্রীদের মধ্যে সকালে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এ সময় ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে। ভবিষ্যতেও এ বিচারকাজ চলতে থাকবে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ আরও অনেকে।

শ্রদ্ধা জানানো হয় সিপিবি, বাসদ, আওয়ামী যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীসহ বিভিন্ন শ্রমজীবী পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে। এ ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, স্মৃতি একাত্তরসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

সর্বশেষ খবর