শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভোট পর্যন্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি নিষিদ্ধ

ওয়াজেদ হীরা

ভোট পর্যন্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি নিষিদ্ধ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ১৮ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের কোনো সভা, সমাবেশ বা অন্য কোনো প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে পুলিশের আইজিপি, কমিশনার, রেঞ্চ ডিআইজি, এসপিসহ সব ওসির কাছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভাগীয় কমিশনারসহ সব ডিসি ও ইউএনওর কাছেও আদেশের কপি পাঠানো হয়েছে।

এর আগে ১২ ডিসেম্বর নির্বাচনি প্রচারণা ব্যতীত সভা-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি আয়োজনের অনুমতি না দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির নির্দেশনা দেওয়ার দুই দিন পর গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো। এ ছাড়াও ইসির চিঠির আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা চিঠি দেওয়া হয়েছে পুলিশপ্রধানের কাছে। নির্বাচনের ২১ দিন আগে সরকার এমন নির্দেশনা দিল। এতে ভোটে না আসা রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনীতি আরও সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে। ইসিতে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ ২৮টি দল যখন ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল এখনো নির্বাচনের তফসিল বাতিলের দাবিতে অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১৮ ডিসেম্বর থেকে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা ছাড়া নির্বাচনি কাজে বাধা হতে পারে বা ভোটাররা ভোট দিতে নিরুৎসাহিত হতে পারেন এরূপ কোনো প্রকার সভা, সমাবেশ বা অন্য কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা থেকে সবাইকে বিরত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। এর আগে ইসির নির্দেশনা বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংসদ নির্বাচনের আগে অতীতে কখনো এ ধরনের নির্দেশনা দেখিনি। আগেও নির্বাচন হয়েছে, সে সময় এরকম কিছু কিন্তু হয়নি। এর বেশি কিছু বলতে চাই না। তবে শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ কেউ করলে বাধা দেওয়ার অধিকার নেই বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইস্যুটি নির্বাচন কমিশনের নয়। ইসির ইস্যু হচ্ছে- সুস্থ, সুন্দর শান্তিপূর্ণ উপায়ে ভোট সম্পন্ন করা। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা। তাদের বিধিবিধান বা যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেখানে কোথাও কি এমন কিছু আছে কি না তারা বলতে পারেন। আমার জানামতে নেই। এটি ইসির বিষয় নয়। কোন আইনের বলে সরকারের কাছে এমন অনুরোধ বা নির্দেশনা দিয়েছে সেটি ইসি ভালো বলতে পারে। তবে এর আগের যে কোনো নির্বাচন কমিশন এরকম কিছু করেনি। তিনি আরও বলেন, দেশে একটি সরকার আছে, রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ ঘিরে যদি কোনো আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, সেই সরকারের কাছে যথেষ্ট সক্ষমতা আছে মোকাবিলা করার। সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান আরও বলেন, আমাদের সংবিধান আরপিওতে এরকম ক্ষমতা বা পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। নতুনভাবে এরকম ক্ষমতা দিয়েছে কি না সে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আমার জানার বাইরে তারা ক্ষমতা পেতে পারেন। এরকম আদেশে জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণœ হতেই পারে।

এদিকে প্রজ্ঞাপন জারির একদিন আগে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানান, ইসির এ নির্দেশনা কোনো রাজনৈতিক দলের অধিকার ক্ষুণ হয়নি। শান্তিপূর্ণ কোনো কর্মসূচিতে আমাদের বাধা নেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার অনুমতি নিয়ে তারা এ ধরনের কর্মসূচি পালন করতে পারবে। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে যদি বাধা সৃষ্টি করে, হুমকি-ধমকি দেয়, জ্বালাও-পোড়াও করে, সেটা বন্ধ করতে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর