রবিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কারা থাকছেন নির্বাচনি লড়াইয়ে

মনোনয়ন প্রত্যাহার শেষ আজ, কাল প্রতীক বরাদ্দ

গোলাম রাব্বানী

কারা থাকছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লড়াইয়ে তা চূড়ান্ত হবে আজ। নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, আজ বিকাল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে। মূলত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পর চূড়ান্ত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট কতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এরপর চূড়ান্ত হবে প্রার্থী তালিকা। কাল চূড়ান্ত প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেবেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসাররা। এর পরই ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা। এদিকে আওয়ামী লীগের শরিকরা ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে  জোটবদ্ধ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক ব্যবহারের জন্য। তবে কাল প্রতীক বরাদ্দের পর স্পষ্ট হবে কারা কোন প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ইচ্ছাকে বিবেচনায় রেখে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ করবেন রিটার্নিং অফিসার। তবে একই প্রতীক বরাদ্দের জন্য একাধিক প্রার্থী দাবি জানালে লটারিতে নির্ধারণ হবে প্রতীক। 

এদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ে বাদ পড়ার পর নির্বাচন কমিশনে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ২৮০ জন প্রার্থী। বাছাইয়ে বৈধ হওয়ার পরও আপিলে প্রার্থিতা হারিয়েছেন পাঁচজন। সব আপিল নিষ্পত্তি শেষে গত শুক্রবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ তথ্য জানিয়েছে। গত ৪ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে মোট বৈধ প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৯৮৫ জন। আপিল নিষ্পত্তি শেষে সব মিলিয়ে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৬০ জনে। এবারের সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৯৮টি আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিল। মনোনয়নপত্র বাছাই ও আপিল শেষে এখন দলটির বৈধ প্রার্থী আছে ২৯৩টি আসনে। ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। এবার ৩০০ সংসদীয় আসনে ২ হাজার ৭১৬টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বাছাইয়ে ৭৩১টি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে করা আপিল নিষ্পত্তি গত শুক্রবার শেষ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আপিল শুনানিতে অনেক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। অবশ্য ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ প্রার্থীরা উচ্চ আদালতে যেতে পারবেন। সেখান থেকেও প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার সুযোগ আছে। তাই আপিল নিষ্পত্তি হওয়া প্রার্থীদের সার্টিফায়েড কপি দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। গতকালও সকাল থেকেই অনেক প্রার্থী ইসির আইন শাখা থেকে সার্টিফায়েড কপি সংগ্রহ করেছেন। এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ২৮টি দল অংশ নিচ্ছে। বিএনপিসহ বেশ কিছু দল অংশ নিচ্ছে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তারা আন্দোলনে রয়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত সব দল অংশ নিয়েছিল। এবার বিএনপির বর্জনে আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ইসিতে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া ব্যক্তিদের বড় অংশও স্বতন্ত্র প্রার্থী। ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ছয় দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান আপিল শুনানি করেন। সব আপিল নিষ্পত্তি শেষে শুক্রবার বিকালে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, এবার ইসিতে মোট ৫৬০টি আপিল দায়ের হয়। এর মধ্যে ৩৫টি আপিল ছিল মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিরুদ্ধে। সচিব জানান, আপিলে ২৮০ জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। আর প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে পাঁচজনের।

একই প্রতীক একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী দাবি করলে লটারি : প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ইচ্ছাকে বিবেচনায় রেখে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অনুকূলে প্রতীক বরাদ্দ করতে হবে। একই প্রতীক বরাদ্দের জন্য একাধিক প্রার্থী দাবি জানালে তাদের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রতীক পছন্দের আহ্বান জানাতে পারেন বলে রিটার্নিং অফিসারদের জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এতে সমাধান না হলে লটারি করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের জারি করা পরিপত্রে এ তথ্য জানানো হয়। ইসি জানায়, যদি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হন তাহলে লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করবেন। উল্লেখ্য, একাধিক স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে কোনো প্রার্থী এর আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে অথবা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে থাকলে তিনি তার পছন্দের প্রতীক প্রাধিকার ভিত্তিতে বরাদ্দ পাওয়ার অধিকারী হবেন। যদি না তা কোনো দলের জন্য সংরক্ষিত হয় বা এরই মধ্যে অন্য কাউকে বরাদ্দ করা হয়।

প্রার্থীকে প্রতীকের নমুনা প্রদান : প্রতীক বরাদ্দের পর পরই প্রতীকের একটি নমুনা সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে সরবরাহ করবেন। কারণ তা তার প্রচারণার জন্য প্রয়োজন হবে। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রতীকসমূহের নমুনা পাওয়া যাবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি এমন কোনো বৈধভাবে মনোনীত প্রার্থী যদি মৃত্যুবরণ করেন তবে নির্বাচনি এলাকার নির্বাচন কার্যক্রম বাতিল করতে হবে। অতঃপর গৃহীত ব্যবস্থা তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। কমিশন ওই নির্বাচনি এলাকার জন্য নতুন নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করবেন। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে নির্বাচন অনষ্ঠানে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে বলে জানিয়েছে ইসি।

সর্বশেষ খবর