সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা

লন্ডনে বসে হুকুম দেয় এখানে আগুন দেয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

লন্ডনে বসে হুকুম দেয় এখানে আগুন দেয়

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়ায় এবং মৃত্যুর ফাঁদ পেতে মানুষ হত্যা করে। লন্ডনে বসে হুকুম দেয়। এখান থেকে আগুন দেয়। বাংলাদেশের মানুষ কখনো এটা মেনে নেবে না। দেশের মানুষকে আহ্বান জানাব, অগ্নিসন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। গতকাল বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস-খুন করে জনগণের হৃদয় জয় করা যায় না। দুর্বৃত্ত, অগ্নিসন্ত্রাসী, খুনি; যারা রেললাইন কেটে রাখে আর আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়, এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আওয়ামী লীগকে এভাবে (হরতাল-অবরোধ দিয়ে) তারা কোনো দিনই উৎখাত করতে পারবে না, দাবাতেও পারবে না। তিনি বলেন, ওরা হরতাল দিয়ে লুকিয়ে থাকে। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে। ওই টাকা পায় কোথায়? জনগণের সব টাকা মানি-লন্ডারিং করে বাইরে নিয়ে গেছে। জানি না বিএনপির নেতারা কী করে। তাদের একজন বলেছিল, আমরা যখন পল্টনে তারেক কেন লন্ডনে? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই বার্তাটা সবাইকে পৌঁছে দিতে হবে যে, এরা (বিএনপি) মানুষের কল্যাণ চায় না, লুটপাটের রাজত্ব চায়। এরা ভোটে যেতে সাহস পায় না। কারণ এদের বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেবে না। সে জন্যই তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়।

আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আমিরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, মেরিনা জাহান কবিতা, ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছে। সেই সুযোগ নিয়ে গুপ্ত স্থান থেকে তারা হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দেয়। মানুষ হত্যার নির্দেশ দেয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর পকেট থেকে উঠে আসেনি। আওয়ামী লীগ এ দেশের মাটি-মানুষের সংগঠন। এ সংগঠনের শেকড় অনেক দূর প্রোথিত।

টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারির পর এলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন। এসব মোকাবিলা করে আমরা যখন এগিয়ে যাচ্ছি, তখন তারা (বিএনপি) অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।

আগামীতে জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলন-সংগ্রাম করে আমরা ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। নির্বাচনি সংস্কার করেছি। জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে কাকে তারা নির্বাচিত করবে।

মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকার পাকিস্তানের পক্ষে ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা সরকার পাকিস্তানকে সহযোগিতা করলেও মার্কিন জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণের পাশে ছিল। সোভিয়েত রাশিয়া থেকে শুরু করে অন্য ইউরোপিয়ান দেশগুলোও আমাদের সমর্থন করে। সবার সমর্থন নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাই। তিনি বলেন, বাঙালি বীরের জাতি। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন- বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। কেউ দাবায়ে রাখতে পারে নাই, ভবিষ্যতেও পারবে না। এবারের বিজয় দিবসে বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আমাদের পাশে ছিল মিত্রবাহিনী। ভারতের জনগণ, ভারতের তৎকালীন সরকার, বিশেষ করে ইন্দিরা গান্ধী এবং ভারতের সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে ২০০১ সালের জুলাই মাসে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। ২৬ বছরে প্রথম শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়। এর আগে একবারও এমন হয়নি। সেই নির্বাচনে ব্যাপকভাবে অনিয়ম করে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দেওয়া হয়। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসে। তবে গ্যাস দিতে পারেনি। তিনি বলেন, বিএনপির দুঃশাসন, দুর্নীতির কারণে দেশে ইমার্জেন্সি হয়। ইমার্জেন্সি সরকারের কথা ছিল তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দেবে। তারাও ক্ষমতার লোভে চেপে বসে। ধন্যবাদ জানাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে। সবাই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে আমার মুক্তির জন্য ২৫ লাখ মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার অফিসে পৌঁছে দেয়। এটা অন্য কোনো দলের পক্ষে সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ জনগণের হয়ে লড়াই করে। ২০০৮ সালে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৩ সাল থেকে বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস করছে। যারা মানুষকে পুড়িয়ে মারে, রেললাইন কেটে দেয়, সেই দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সোচ্চার হতে হবে।

সর্বশেষ খবর