মঙ্গলবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ব্যালট ভোটের দিন সকালে, ২৯ ডিসেম্বর থেকে সশস্ত্র বাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মহানগর, জেলা, উপজেলা সদরসহ অধিকাংশ এলাকায় ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে দুর্গম পার্বত্য এলাকা, হাওর, চরাঞ্চলসহ জেলা-উপজেলা-মহানগর থেকে বেশি দূরের যেসব কেন্দ্রে সকালে ব্যালট পেপার পাঠানো সম্ভব নয়, সেসব কেন্দ্রের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। এর ফলে ভোটে ‘স্বচ্ছতা বাড়বে’ বলে মনে করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, এটা অনেকের দাবি ছিল। ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার যাওয়ায় স্বচ্ছতা বাড়াবে। এদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ দিনের জন্য সশস্ত্র বাহিনী মাঠে নামছে। তবে মূল টিম মাঠে নামার আগে নির্বাচনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর অগ্রবর্তী টিমকে ভোটের মাঠে নামতে চিঠি দিয়েছে ইসি। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচনের ৯ লাখ ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ শুরু হবে আজ। সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে জাপানের ১৬ জনের একটি টিম আবেদন করেছে নির্বাচন কমিশনে।

প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৯৬-এ। এর মধ্যে ২৮ দলের প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্রও রয়েছেন। গতকাল সব আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করেছেন। প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ায় এখন আসনভিত্তিক ভোটার সংখ্যা অনুযায়ী প্রার্থীর নাম, প্রতীকসহ ব্যালট পেপার ছাপানোর প্রক্রিয়া শুরু করবে কমিশন। ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দেশের ৩০০ আসনে একটানা ভোট চলবে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও প্রচলিত ব্যালট পেপারে। ভোট সামনে রেখে নির্বাচনি মালামাল কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয় আগের দিন। নির্বাচনি এলাকায় থাকে ব্যাপক নিরাপত্তা। কেন্দ্রভিত্তিক থাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৬ থেকে ১৮ জন সদস্য। আর ব্যালট পেপার জেলা থেকে রিটার্নিং অফিসারের নির্দেশনা অনুযায়ী ভোটের দিন সকালে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার মধ্যে কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গতকাল বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা, নিরাপত্তা, দূরত্ব বিবেচনায় নিয়ে প্রত্যন্ত, দুর্গম এলাকা ছাড়া ভোট কেন্দ্রে সকালেই ব্যালট পেপার পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর দুর্গম এলাকায় স্থানীয় রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী সুবিধাজনক সময়ে পাঠানো হবে। ভোটকেন্দ্রে কখন পাঠানো হবে সে বিষয়টি কমিশন পরিপত্র জারি করেছে। ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত পরিপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ব্যালট পেপার ভোট গ্রহণের দিন সকালে নিরাপত্তার সঙ্গে কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য যাচাইবাছাই ও তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে রিটার্নিং অফিসারকে পরিকল্পনা গ্রহণ করে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩-এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।

 

ভোটের মাঠে ২৯ ডিসেম্বর থেকে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনে ইসির চিঠি

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে-পরে মিলিয়ে ১৩ দিন সেনা মোতায়েনের জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন; ভোটের মাঠে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনা চাওয়া হয়েছে। গতকাল ইসির উপসচিব আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এ চিঠি সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের কাছে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ১১ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের বৈঠকে সেনা মোতায়েনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এবার সেনা সদস্য ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় সাড়ে ৭ লাখ সদস্য নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এরপর রবিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভোটের মাঠে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে অনুরোধ জানান। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকের পরদিনই ইসি এ চিঠি পাঠাল।

এতে বলা হয়, ভোট গ্রহণের আগে, ভোট গ্রহণের দিন ও ভোট গ্রহণের পরে শান্তিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার নিমিত্ত ‘ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সমগ্র বাংলাদেশের ৩০০ নির্বাচনি এলাকায় ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত (যাতায়াত সময়সহ) সশস্ত্র বাহিনী নিয়োজিত হবে বলে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। নির্বাচনি এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা, ভৌত অবকাঠামো ও নির্বাচনি পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর ‘প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ’ করার জন্য প্রতি জেলায় সশস্ত্র বাহিনীর ছোট আকারের একটি করে অগ্রবর্তী টিম পাঠানো যেতে পারে বলেও মত দিয়েছে ইসি। চিঠিতে বলা হয়, মোতায়েন করা সেনা সদস্যরা নির্বাচনি কাজে নির্বাহী হাকিমের পরামর্শে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী বেসামরিক প্রশাসনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করবে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকার ‘নোডাল পয়েন্ট’ এবং সুবিধাজনক স্থানে নিয়োজিত থাকবে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে উপজেলা-থানায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হবে। ইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর টিমের সঙ্গে নির্বাহী হাকিম নিয়োজিত করা হবে এবং ‘আইন, বিধি ও পদ্ধতিগতভাবে’ কার্যক্রম গৃহীত হবে। বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের অনুরোধক্রমে চাহিদামতো আইনি অন্যান্য কার্যক্রমে সহায়তা করতে হবে। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত নির্দেশনা জারি করা হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছে ইসি। সেনা মোতায়েনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়েছে পত্রে। সবশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিনের আগে-পরে মিলিয়ে ১০ দিন বেসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার জন্য ‘এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ বিধানের অধীনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়। নির্বাচনি এলাকাগুলোয় ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি সেনাবাহিনী মোতায়েন রাখা হয়। এবারের ভোটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় সাড়ে ৭ লাখ সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে ইসি। এর মধ্যে আনসার সদস্য ৫ লাখ ১৬ হাজার, পুলিশ ও র‌্যাব ১ লাখ ৮২ হাজার ৯১, কোস্টগার্ড ২ হাজার ৩৫০, বিজিবি ৪৬ হাজার ৮৭৬ জন রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

 

৯ লাখ ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ শুরু আজ

এবারের সংসদ নির্বাচনের ৯ লাখ ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ শুরু হবে আজ। নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ-সংক্রান্ত চিঠি তিনি ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলমকে পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সব ধরনের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা হয়েছে। ১৯ ডিসেম্বর মাঠ পর্যায়ে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের (প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার) প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে। এতে মোট ৯ লাখ ৯ হাজার ৫২৯ জন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাকে (প্রিসাইডিং অফিসার ৪ লাখ ৬ হাজার ৩৬৪, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ২ লাখ ৮৭ হাজার ৭২২ ও পোলিং অফিসার ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৩) প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ৪২ হাজার ১৪৯টি কেন্দ্র ধরে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, এতে ভোটকক্ষ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৫৬৫টি। অঞ্চলভেদে একেকদিন একেক এলাকায় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে, যা চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

সর্বশেষ খবর