বুধবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

১০ কোটি টাকা ফেরত দিয়ে জামিনে মুক্ত রাসেল

ইভ্যালির কাছে এখনো পাওনা হাজার কোটি টাকা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

১০ কোটি টাকা ফেরত দিয়ে জামিনে মুক্ত রাসেল

গ্রাহকের শত শত কোটি টাকার ক্রয়াদেশ নিয়ে পণ্য না দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত ই-কমার্স ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। সোমবার বিকালে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাড়া পান তিনি। গতকাল কেন্দ্রীয় কারাগার-১-এর জেলার মো. তরিকুল ইসলাম তার এ মুক্তির বিষয়টি জানান। তার এ জামিনের আগে গত কয়েক মাসে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকেরা ফেরত পেয়েছেন মাত্র ১০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় দায়ের করা এক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এরপর বিভিন্ন ই-কমার্স কোম্পানির ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরতের উদ্যোগ নিলেও ইভ্যালির টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্ণধার জেলে থাকায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে শর্ত সাপেক্ষে গত ৬ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ছাড়া পান। তার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ইভ্যালির ২ হাজার ৮৮২ জন গ্রাহককে অর্থ ফেরত দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেলের তথ্য অনুযায়ী গত নভেম্বর পর্যন্ত ১০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের। সূত্র জানায়, সম্প্রতি ই-কমার্সগুলোর আটকে থাকা অর্থ ফেরত প্রক্রিয়া নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হয়। ওই সভায় উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইভ্যালি গ্রাহকদের সর্বমোট কত টাকা পাওনা রয়েছে, তার সঠিক হিসাব জানা যায়নি। তবে ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির যেসব গ্রাহক তৃতীয় মাধ্যমে পণ্য কেনার জন্য অর্থ দিয়েছে, তার কিছু হিসাব পাওয়া গেছে। সে হিসাবে বর্তমানে নগদ-এর কাছে ১৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, বিকাশের কাছে ৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা, এবং এসএসএল কমার্সের কাছে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা আটকে ছিল। এর মধ্যে নগদ হতে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা, বিকাশ থেকে ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা এবং এসএসএল থেকে ২১ লাখ টাকা গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়েছে। জানা গেছে, এখনো লাখ লাখ গ্রাহকের হাজার কোটি টাকা আটকে আছে প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে। কিন্তু অভিযুক্ত ইভ্যালির কর্মকর্তারা কোনো হিসাবই দিচ্ছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব চাওয়ার পর নানা টালবাহানা করে বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির জামিনে মুক্তি পাওয়া চেয়ারম্যান শামিমা নাসরীন। এ অবস্থায় জামিনে মুক্তি পেলেন প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী ও সিইও মো. রাসেল। কর্মকর্তারা জানান, প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী এতদিন বেশ কয়েকটি মামলায় কারাগারে থাকায় সার্ভার চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন জামিনে বের হওয়ায় সার্ভার চালুর বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে উদ্যোগ নিতে বলা হবে। ইভ্যালিতে গ্রাহকদের কত কোটি টাকা পাওনা আছে, তা প্রতিষ্ঠানটির সার্ভার চালু করলে জানা যাবে। এর বাইরে তৃতীয় পক্ষ ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে যেসব লেনদেন হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিকাশ ও নগদ-এ লেনদেনের কিছু হিসাব পাওয়ার পর অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু হলেও হিসাব না পাওয়ার কারণে আটকে আছে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ। সূত্র জানায়, সার্ভারের বাইরে ইভ্যালির বিপুল সংখ্যক গ্রাহক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অর্ডার দিয়েছেন। সে কারণে প্রতিষ্ঠানটিতে কুরিয়ার কোম্পানিগুলোর তালিকা ও গ্রাহকের ক্রয়াদেশ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ২৮ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়ে জানান, গ্রাহকের ক্রয়াদেশের বিষয়ে কুরিয়ার সার্ভিসগুলো তাদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে না।

সর্বশেষ খবর