বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নির্বাচনি সহিংসতায় একজন নিহত

স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থককে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ

প্রতিদিন ডেস্ক

নির্বাচনি প্রচার জমে উঠতে না উঠতেই বিভিন্ন স্থানে ঘটছে একের পর এক সহিংস ঘটনা। গতকাল নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে এ-জাতীয় ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ সদরে নির্বাচনি ক্যাম্পে মারামারিতে রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া রাজশাহীর দুর্গাপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থককে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নৌকার কর্মীদের বিরুদ্ধে। আর চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নৌকা ও ঈগলের সমর্থকদের সংঘর্ষে দুজন আহত এবং পটিয়ায় প্রচারে গেলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা স্বতন্ত্র প্রার্থী শামসুল হক চৌধুরীকে ধাওয়া দিয়ে এক        পর্যায়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। নেত্রকোনার সিংড়ায় নৌকার কর্মীদের হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর আট কর্মী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর মিছিলে হামলার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ সদরে নির্বাচনি ক্যাম্পে মারামারির এক পর্যায়ে ভাতিজাদের ঘুসিতে রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। মঙ্গলবার রাতে সদর উপজেলার চরভবানীপুর কোনাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। রফিকুল ওই এলাকার নূর হোসেনের ছেলে।

পুলিশ জানায়, কোনাপাড়া হোতারবাড়ি মোড় এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হকের একটি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। সেটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখেন রফিকের ছোট ভাই ফারুক হোসেন ও অন্য ভাই ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে জাকির হোসেন রাজু এবং আরিফুল ইসলাম সাজু। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর সেই ক্যাম্পে যান রফিকুল। তাকে সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন ফারুক। এ নিয়ে বাগ্বিতন্ডার এক পর্যায়ে কিলঘুসি শুরু করলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রফিকুল। ময়মনসিংহ মেডিকেলে নিয়ে গেলে রাত সাড়ে ৯টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার নাকের বাঁ পাশে কাটা জখম ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নিহতের মেয়ে রিক্তা আক্তার বলেন, ‘আমার চাচাদের সঙ্গে বাবার জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। মঙ্গলবার রাতে নির্বাচনি ক্যাম্পে গেলে কোনো কারণ ছাড়াই আমার বাবাকে হত্যা করেছে।’ ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় মামলার পর একজনকে আটক করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।

রাজশাহী : মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে দুর্গাপুর উপজেলার মাড়িয়া গ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমানের ব্যানার টানাতে গিয়ে আবদুুর রাজ্জাক নামে এক ব্যক্তি আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন। রাজ্জাককে রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে।

এদিকে বাগমারার নরদাশ, ভবানীগঞ্জ গোডাউন মোড়, যাত্রাগাছী এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান এমপি এনামুল হকের নির্বাচনি কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। নৌকার সমর্থকরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। তবে ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এনামুল হক বহিরাগতদের এনে নৌকার সমর্থকদের মারধর করছেন। উল্টো আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন।’

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রনি দাশ (২৯) ও জসিম উদ্দিন (৩২) নামে দুই যুবক আহত হয়েছেন। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ জানান, দুই পক্ষের সমর্থকরা মুখোমুখি হয়ে গেলে কিছু ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

এদিকে চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে নির্বাচনি প্রচারে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের রোষানলে পড়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শামসুল হক চৌধুরী। গতকাল বিকাল ৪টার দিকে তিনি পটিয়ার কাশিয়াইশ ইউনিয়নের পিংগলা শেখপাড়া গ্রামে গণসংযোগ করতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় নৌকা সমর্থিত ও স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা শামসুলকে ধাওয়া দেয় এবং একপর্যায়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। এ প্রসঙ্গে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী শামসুল নিজের লোকজন দিয়ে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তার লোকজন আমাদের কর্মী-সমর্থকদের প্রতিনিয়ত নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে।’

নাটোর : সিংড়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শফিকের ঈগল প্রতীকের গণসংযোগের সময় নৌকার কর্মীদের হামলায় আটজন আহত হয়েছেন। কয়েকটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার সাতপুকুরিয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন জুয়েল হোসেন, ফারুক হোসেন, সোহান আলী, রনি হোসেন, শামীম হোসেন, সালাম খান, ফরিদ আলী ও সালাম আলী।

সিংড়া থানার ওসি আবুল কালাম জানান, দুই গ্রুপের সংঘর্ষের খবর জানার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক।

নেত্রকোনা : কেন্দুয়ায় আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। কেন্দুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আপেল মাহমুদ বাদী হয়ে মাসকা ইউপি চেয়ারম্যান সালাম বাঙ্গালীসহ ১৯ জনের নামে মঙ্গলবার রাতে মামলা করেন। মামলাসূত্রে জানা যায়, ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে নেত্রকোনা-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইফতিখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টুর কর্মী-সমর্থকরা মাসকা বাজারে মিছিল বের করে। এ সময় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অসীম কুমার উকিলের সমর্থক মাসকা ইউপি চেয়ারম্যান সালাম বাঙ্গালীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতা-কর্মা দেশি অস্ত্র নিয়ে পিন্টুর মিছিলের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় পিন্টুর ৩০ কর্মী-সমর্থক আহত এবং তার নির্বাচনি কার্যালয়সহ পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে কেন্দুয়া থানার ওসি এনামূল হক বলেন, আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর