শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নির্বাচন কমিশনের অগ্নিপরীক্ষা

-----শান্তনু মজুমদার

নির্বাচন কমিশনের অগ্নিপরীক্ষা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য প্রথমেই প্রার্থীদের সহিংস আচরণের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে শূন্য সহনশীলতার নীতি অবলম্বন করতে হবে। এখনই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও ক্ষমতাসীন দলের স্বীকৃতি নিয়ে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী, তাদের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় সংঘাতের খবর আসছে। এটা চলতে থাকলে নির্বাচনের চিত্র একেবারেই পাল্টে যাবে। এমনিতেই অন্যতম একটি বড় দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় নির্বাচনের সৌন্দর্য ক্ষুণ হয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর রয়েছে এই নির্বাচনের দিকে। সংঘাত, সহিংসতা, জালিয়াতির ঘটনা ঘটলে মুখ দেখানোর জায়গা থাকবে না। নির্বাচন কমিশনের জন্য এটা একটা অগ্নিপরীক্ষা।

প্রার্থীরা আন্তরিক ও সচেতন না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা দুরূহ হয়ে পড়বে- সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এমন বক্তব্যেও পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের এখন দরবেশ-সন্ন্যাসীর মতো আধ্যাত্মিক কথা বলার সুযোগ নেই। এখন সচেতনতা সৃষ্টির সময় নয়। সচেতন করতে যুগের পর যুগ লাগবে। এখন আচরণ পরিবর্তনের সময়। যে প্রার্থীরা অপকর্মের দিকে যাচ্ছেন, তাদের আচরণ পরিবর্তনে বাধ্য করতে হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের এমন নরম-শরম কথাবার্তা নির্বাচনের পরিবেশের জন্য অনুকূল নয়। এ ধরনের কথাবার্তায় বিপথ-প্রিয় প্রার্থীরা আশকারা পেয়ে যাবেন এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে ভোটারদের মধ্যে সংশয় তৈরি করবে।

শান্তনু মজুমদার বলেন, যে কারণেই হোক, এই নির্বাচনের বড় বাস্তবতা হচ্ছে অন্যতম বিরোধী দল আসেনি। এতে নির্বাচনের  সৌন্দর্যটা ক্ষুণœ হয়েছে। তবে যারা আসেনি, তাদের এখন আর আনার সুযোগ নেই। তাই এটা নিয়ে আলোচনা করেও লাভ নেই। এখন যারা নির্বাচনে এসেছে তাদের একটা সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ ভোট উপহার  দেওয়া নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। এখানে কয়েকটা বিষয় আছে।  কোনো পক্ষই যেন ভোট জালিয়াতির চেষ্টা করতে না পারে,  ভোটারদের কেউ যেন নিরুৎসাহিত করতে না পারে, হুমকি-ধমকি দিতে না পারে। এ বিষয়গুলো যত দ্রুত সম্ভব নিশ্চিত করতে হবে। 

কোনো ব্যক্তি বা সমাজের কোনো একটি অংশের ভোট নয়া পাবার আশঙ্কায়, ভোট দিতে বাধাগ্রস্ত করা হলে নির্বাচনের সৌন্দর্য আরও নষ্ট হবে। গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই শিক্ষক বলেন, গত কয়েক মাস ধরেই বাংলাদেশের নির্বাচন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচ্য বিষয়। ২০২৪ সালে বিশ্বে ২৯-৩০টি নির্বাচন হবে। এর মধ্যে প্রথম নির্বাচনটা হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। বিভিন্ন প্রভাবশালী রাষ্ট্র ছাড়াও যেসব সংগঠন নির্বাচন নিয়ে কাজ করে তারা এই নির্বাচনের দিকে নজর রাখছে। এখানে আন্তর্জাতিক ইমেজের একটা ব্যাপার আছে। একটা বড় দল নির্বাচনে না আসায় এমনিতেই কিছুটা সমালোচনা রয়েছে। এই সমালোচনা বা খুঁত আরও বড় হয়ে উঠবে নির্বাচনটা যদি সহিংস হয়, ভোট জালিয়াতি হয়। সেটা অনেক বেশি ইমেজ বিপর্যয় ঘটাবে এবং ভোটারদের জন্য মনোবেদনার কারণ হবে। পছন্দের দল না থাকায় কড়া-সমর্থকদের একটা অংশ হয়তো ভোট দিতে আসবে না, কিন্তু যারা ভোট দিতে চান, তারা যদি সহিংসতার কারণে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ভোট দিতে যেতে নিরুৎসাহিত হন, কিংবা ভোটের দিন যদি  ভোট জালিয়াতি হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক বেশি ইমেজ ক্ষুণ হবে। নির্বাচন কমিশনের এটা একটা অগ্নিপরীক্ষা। সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ যাতে বিঘিœত না হয় সে ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দলেরও দায়িত্ব রয়েছে।

শান্তনু মজুমদার বলেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রধানের পক্ষ থেকে বার বার বলা হয়েছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কেউ যাতে বিরক্ত না করে। এটা বজায় থাকলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। একই সঙ্গে জাতীয় পার্টির মতো বড় দল আছে, আরও কিছু দল আছে। এক ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সেটার মধ্যে খুঁত থেকে গেলে নির্বাচনের মান প্রশ্নবিদ্ধ হবে। কিছু কিছু জায়গায় আবার স্বতন্ত্র প্রার্থীর শক্তি ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর  চেয়েও বেশি। সবকিছু মাথায় রেখে নির্বাচন কমিশন এমন একটা পরিবেশ তৈরি করবে যাতে কে স্বতন্ত্র, কে বড় দল, কে ছোট দল- এমন কিছু থাকবে না। সবার জন্য জিরো টলারেন্স। এ ছাড়া নির্বাচনি পর্যবেক্ষকদের পায়ে নানা রকমের বেড়ি পরানোর দরকার আছে বলেও মনে করি না।

সর্বশেষ খবর