শিরোনাম
রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

লাপাত্তা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা

স্থায়ী কমিটির ১৯ ও ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নেতাদের মধ্যে আটক মাত্র ৯৩ জন। বাকিরা বাড়িতে মোবাইল রেখে সরে পড়েছেন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নেতাদের খুঁজে পাচ্ছেন না কর্মীরা। অপেক্ষায় থাকতে হয় লন্ডনের নির্দেশের। কর্মীরা নাজেহাল

শফিউল আলম দোলন ও শফিকুল ইসলাম সোহাগ

লাপাত্তা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা

বাড়িতে মোবাইল ফোন রেখে পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন বিএনপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতা। দলের কোনো কর্মসূচিতে তাদের দেখা যাচ্ছে না। শুধু আটকের ভয়ে তারা আর ঘরে ফিরছেন না। অন্যদিকে মামলা না থাকার পরও অনেক জেলা নেতাকে সক্রিয় অবস্থানে আর দেখা যাচ্ছে না।

গতকাল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর নম্বরে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদসহ কাউকে ফোন করে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে টকশো মুখ ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাও রাজপথের কর্মসূচিতে আসেন না। দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের অনেকে কারান্তরিন থাকলেও বাইরে যারা আছেন তারা চলছেন গা বাঁচিয়ে। অনেক মাঠপর্যায়ের কর্মীর অভিযোগ, ঝুঁকি নিতে কেউ রাজি নন।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল বলেন, মামলা মোকদ্দমার কারণে নেতারা আত্মগোপনে। সময়মতো সবাই বেরিয়ে আসবে। আন্দোলন থামেনি। আমরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।

বিএনপি এই কঠিন পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করবে তা জানতে চাইলে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এর আগেও বিএনপি বেশ কয়েক বার কঠিন সময় অতিক্রম করেছে। বিশেষ করে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর, স্বৈরাচার এরশাদের আমলে এবং ওয়ান-ইলেভেনের সময়। বিএনপি হলো- পুরোপুরি কর্মী ও সমর্থক ভিত্তিক রাজনৈতিক দল। আর বিএনপির সমর্থক হলো, এ দেশের আপামর সাধারণ জনগণ। চলমান আন্দোলনের মাধ্যমেই বিএনপি যে কোনো সময় ঘুরে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, মাত্র একজন ভাইস চেয়ারম্যান ছাড়া আর কাউকেই আওয়ামী লীগ বহু চেষ্টা করেও দল থেকে নিতে পারেনি। ক্ষমতাকে অবৈধভাবে ধরে রাখতে ডামি নির্বাচনের আয়োজন করেছে। এতে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ রক্ষা হবে না।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরের সূত্রে জানা গেছে, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে কারাগারে আছেন মাত্র চারজন।

আর ৫০২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি এবং ৯০ সদস্যের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের নেতাদের মধ্যে মোট গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন মাত্র ৯৩ জন। আর বাকি ৫০০ জন নেতাই গ্রেফতার এড়াতে প্রায় দুই মাস ধরে গা ঢাকা দিয়ে আছেন।

এ বিষয়ে সাবেক এমপি ও দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপির কঠিন সময় আজ হঠাৎ করে শুরু হয়নি। দীর্ঘ ১৫ বছর আগেই এটা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি দুটো বৃহৎ সাফল্য অর্জন করেছে। এক. সরকারের ব্যাপক চেষ্টা সত্ত্বেও বিএনপিকে ভাঙতে পারেনি। দুই. দেশের ছোট-বড় সব বিরোধী দলকে একসঙ্গে একই ছাতার নিচে আনতে পেরেছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি এখনো অনেক বাকি। দেখেন না কী হয়। আওয়ামী লীগের নিজেদের (দল মনোনীত ও বিদ্রোহী) প্রার্থীদের ভিতরেই যা শুরু হয়েছে, ইলেকশন আদৌ হয় কি না- সেটা ৭ তারিখই বোঝা যাবে।

বিএনপির দফতর সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারপারসন ও মহাসচিব ছাড়া বিএনপি স্থায়ী কমিটির মোট সদস্য ১৭ জন। তাদের মধ্যে কারাগারে আছেন দুজন। তারা হলেন, মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। দেশের বাইরে আছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।

দল ও অঙ্গসংগঠনের কারান্তরিন ও সাজাপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, আবদুস সালাম পিন্টু, দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, আতাউর রহমান ঢালী, হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি, দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন ও আসলাম চৌধুরী। হাবিব উন-নবী খান সোহেল আত্মগোপন রয়েছেন। তিনি সাজাপ্রাপ্ত। কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন, সাজাপ্রাপ্ত।

কারান্তরিন অন্য নেতারা হলেন- কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দীন আহমেদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারি হেলাল, সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছ, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দীন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ-বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম মজনু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব ফুটবলার আমিনুল হক, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, সহ-গ্রাম সরকার বিষয়ক সম্পাদক বেলাল আহমেদ, কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, সহ-ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক শফিকুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসভাপতি ইউসুফ বিন জলিল (মির্জা কালু)। বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আবদুল কাদির ভূইয়া জুয়েল সাজাপ্রাপ্ত। কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সাইফুল আলম নিরব সাজাপ্রাপ্ত ও কারান্তরিন। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবি সাজাপ্রাপ্ত ও কারান্তরিন। জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার টি এস আইয়ুব কারান্তরিন। জাতীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা কারান্তরিন। জাতীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য হাবিবুর রশিদ হাবিব সাজাপ্রাপ্ত। জাতীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য মামুন হাসান সাজাপ্রাপ্ত। জাতীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য সাবেরা নাজমুল মুন্নি, কারান্তরিন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্না।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান কারান্তরিন। কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান সাজাপ্রাপ্ত। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সাবেক সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর সাজাপ্রাপ্ত ও কারান্তরিন। কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টু সাজাপ্রাপ্ত। কেন্দ্রীয় যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার সাজাপ্রাপ্ত। কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুর রহমান মোসাব্বির সাজাপ্রাপ্ত। কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা মিয়া নুরুদ্দীন অপু কারান্তরিন। কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম মাওলা শাহিন কারান্তরিন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সম্পূর্ণ গায়েবি ও মিথ্যা মামলায় এই পৌনে দুই মাসে বিএনপির ২৫ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর