রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ব্যাংক খাতে ৯২ হাজার কোটি টাকা লুটপাট

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যাংক খাতে ৯২ হাজার কোটি টাকা লুটপাট

দেশের ব্যাংক খাত থেকে অনিয়মের মাধ্যমে গত ১৫ বছরে (২০০৮-২০২৩) ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। এ সময়ে যে পরিমাণ অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে, তা বর্তমান মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ। এ ধরনের লুটপাট ঠেকাতে ব্যাংক খাতে নিয়মকানুন বাস্তবায়ন ও সংস্কার জরুরি। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) কার্যালয়ে ?‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৩-২৪ : চলমান সংকট ও করণীয়’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন  প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এ সময় সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম, রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন। দেশের মূলধারার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাংক খাতের অনিয়ম নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ তথ্য তুলে ধরে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংক খাত ব্যক্তিস্বার্থের হাতে কুক্ষিগত হওয়ার কারণে এ খাতে সংকট বাড়ছে। যারা ব্যাংক থেকে বড় দাগে ঋণ নিচ্ছেন, তারাই আবার ঋণ পুনঃতফসিলের নানা নিয়মকানুন তৈরি করতে প্রভাব বিস্তার করছেন। শুধু ব্যাংক খাত নয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন স্বার্থান্বেষী মহলের হাতে জিম্মি। যার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকিং খাতে নিয়মকানুন বাস্তবায়ন ও সংস্কার জরুরি। অনুষ্ঠানে সিপিডি জানায়, ২০০৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ব্যাংক খাতের সূচকগুলোর অবনমন হচ্ছে। খেলাপি ঋণের পাশাপাশি অন্যান্য সূচকে অবস্থার অবনতি হচ্ছে। গত ১৫ বছরে ব্যাংক থেকে যে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে, তা বর্তমান মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ। এ অর্থ চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের ১২ শতাংশের বেশি।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ঋণ, অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ, অর্থ লোপাটসহ নানা ধরনের আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকে যে স্ক্যাম বা অনিয়মগুলো হয়, সেগুলো অফিশিয়াল সূত্রে পাওয়া যায় না। সেগুলো সংবাদ মাধ্যমে আসে। গণমাধ্যম কর্মীরা সেগুলো হয়তো অফিশিয়াল সূত্রেই আনেন। এগুলোকে একত্রীকরণ করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, ২০০৮-২৩ সাল পর্যন্ত গণমাধ্যমে ২৪টি ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এসব ঘটনায় ৯২২.৬১ বিলিয়ন টাকা বা ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ বা অপচয় হয়েছে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের উচ্চ পর্যায় থেকে পদক্ষেপ দরকার। উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি বন্ধে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন, যাতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিয়ম অনুযায়ী কাজ করতে পারেন। দেশের ব্যাংক খাত ব্যক্তিস্বার্থের হাতে কুক্ষিগত হওয়ায় এ খাতে সংকট আরও বাড়ছে। যারা এ খাত থেকে বড় বড় ঋণ নিচ্ছে, তারাই আবার ঋণ পুনঃতফসিলের নানা নিয়মকানুন তৈরিতে প্রভাব বিস্তার করছে। শুধু ব্যাংক খাত নয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন স্বার্থান্বেষী মহলের হাতে জিম্মি। ফলে এসব খাতে কতটা সংস্কার করা যাবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খেলাপি ঋণের যে তথ্য প্রকাশ করা হয়, তা পুরোটা নয়। ১০ বছর আগে খেলাপির পরিমাণ ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা থাকলেও সবশেষ গত সেপ্টেম্বর শেষে তা ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়। এ ছাড়া ঋণ পুনঃতফসিল, মামলার কারণে খেলাপি দেখাতে না পারা ও অবলোপন করা খেলাপি ঋণের তথ্য দেখানো হয় না বলে জানান তিনি।

 

সর্বশেষ খবর