সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

থেমে নেই সংঘাত সহিংসতা

♦ নির্বাচনি প্রচারে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৪ ♦ চান্দিনায় স্বতন্ত্র সমর্থক ৬ যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে জখম ♦ নাটোরে নৌকার অফিসে আগুন ♦ সেনবাগে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকের বাড়ি ভাঙচুর-গুলিবর্ষণ ♦ চুয়াডাঙ্গায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর নৌকা সমর্থকদের হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত-সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচনি সংঘাতের উত্তাপ লেগেছে রাজধানীতেও। রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার মসজিদের সামনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির নানকের গণসংযোগের সময় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে রাম-দা, চাপাতি নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নির্বাচনি গণসংযোগ ও মিছিলের মধ্যে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- মো. মেরাজ (১৮), মো. সিয়াম (১৮), মো. বাপ্পি (১৯) ও  মো. সৌরভ (১৮)। তারা সবাই ছাত্রলীগকর্মী বলে পুলিশ জানিয়েছে। জানা গেছে, সংঘর্ষে লিপ্ত হয় মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুল হাসান রাসেল সমর্থিত একটি গ্রুপ ও সহসভাপতি কিশোর গ্যাং চক্রের প্রধান সাজ্জাদ হোসেনের গ্রুপ। গতকাল নির্বাচনি প্রচারের সময় জাহাঙ্গীর কবির নানকের কাছে গিয়ে একজন চাপাতি উঁচিয়ে ধরলে নেতা-কর্মীরা তাকে সরিয়ে নেন। দুই দিন আগে নৌকার প্রচারে বাড়ির মালিকদের সঙ্গে লালমাটিয়ায় মতবিনিময় করতে যান জাহাঙ্গীর কবির নানক। এ সময় ছাত্রলীগের সভাপতি রাসেলের কর্মীদের সঙ্গে সাজ্জাদের কর্মীদের শরীরে ধাক্কা নিয়ে বাগবিতন্ডা হয়। সেখানে তাদের থামিয়ে দেওয়া হলে যে যার মতো চলে যায়। গতকাল সকালে গণসংযোগ চলাকালে মিছিলের মধ্যে সাজ্জাদের গ্রুপের কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা চাদর গায়ে দিয়ে চাদরের ভিতর রাম-দা, চাপাতি নিয়ে এসে আচমকা হামলা করে। এ সময় যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে। হামলায় কাটাসুর ও রায়েরবাজার এলাকার দুই গ্রুপের ছাত্রলীগের লোকজন জড়িত বলে সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহাকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আজিজুল হক জানান, পূর্ব শত্রুতার জেরে নির্বাচনি মিছিলে দুই গ্রুপে মারামারির ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ যাওয়ার আগেই তা থেমে গেছে। এদিকে সারা দেশ থেকে সংঘাত-সহিংসতার খবর পাঠিয়েছেন আমাদের জেলা প্রতিনিধিরা-

কুমিল্লা : স্বতন্ত্র প্রার্থী সমর্থক ৬ যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে জখম : কুমিল্লা-৭ চান্দিনা আসনের বরকইটে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুনতাকিম আশরাফ টিটু সমর্থিত (ঈগল প্রতীক) ৬ যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে আহতের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বরকইট ইউনিয়নের মধ্যমতলা ও ফইরখোলা গ্রামের মধ্যবর্তী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- বরকইট ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাসুদ, যুবলীগের সদস্য রায়হান, কামরুল ইসলাম, সিদ্দিকুর রহমান, গিয়াস উদ্দিনসহ ছয়জন। এদের মধ্যে পাঁচজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহত মাসুদ মেম্বার বলেন, শনিবার রাতে ঈগলের নির্বাচনি প্রচার শেষে আমরা বাড়ি ফিরছিলাম। তখন একটি মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল করে প্রায় ১৫ জন সন্ত্রাসী আমাদের পথরোধ করে হকিস্টিক ও পাইপ দিয়ে মারধর করে। তাদের অনেকেরই মুখে মাস্ক পরা ছিল। হামলার নেতৃত্ব দেওয়া দুজনকে আমরা চিনতে পেরেছি। তারা হলেন নৌকার সমর্থক শ্রীমন্তপুরের শাহাজান ও চান্দিয়ারার নাজমুল।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মুনতাকিম আশরাফ টিটু বলেন, চান্দিনায় টানা চার দিন বিভিন্ন স্থানে নৌকার কর্মীরা আমাদের নেতা-কর্মীর ওপর হামলা করছে। একাধিক অভিযোগ দিলেও প্রশাসন এ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

নাটোর : নৌকার অফিসে আগুন : নাটোরের বাগাতিপাড়ায় নৌকার প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বকুলের নির্বাচনি অফিসে আগুন দিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। শনিবার রাতে উপজেলার দয়ারামপুর ইউনিয়নের তালতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে ওই অফিসের একাংশ পুড়ে যায়। সকালে স্থানীয়রা ওই এলাকায় গিয়ে আগুন জ্বলতে দেখে তা নিয়ন্ত্রণে আনে। বাগাতিপাড়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নান্নু খান জানান, এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। এদিকে নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকারের নির্বাচনি পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল ভোরে নাটোর সদর উপজেলার হয়বতপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নৌকার সমর্থকরা পোস্টার ছিঁড়েছে বলে অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আহাদ সরকার।

পাবনা :  স্বতন্ত্র প্রার্থীর অফিস ও সাংবাদিকের বাড়ি ভাঙচুর : পাবনা-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল হামিদ মাস্টারের ট্রাক প্রতীকের নির্বাচনি অফিসে পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ উঠেছে। এদিকে কথা কাটাকাটির জেরে স্থানীয় কালের কণ্ঠের চাটমোহর প্রতিনিধি সাংবাদিক আবদুল লতিফ রঞ্জুর বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে।

শুক্রবার রাতে এবং শনিবার দুপুরে দুই দফা এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করেছেন সাংবাদিক আবদুল লতিফ রঞ্জু। অপরদিকে হামলা করে পাল্টা মামলা করেছে অভিযুক্তদের একজন। সাংবাদিক আবদুল লতিফ রঞ্জু জানান, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে নৌকা প্রতীকের একদল সমর্থক চাটমোহর রেলবাজার এলাকায় মিছিল করে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল হামিদ মাস্টারের ট্রাক প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। এনিয়ে ট্রাক প্রতীকের সমর্থকদের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। এ ঘটনার জেরে রাত সোয়া ২টার দিকে ব্যবসায়ী ফুরকান বিশ্বাস, তার শ্বশুর এস এম আলম বাবলুর নেতৃত্বে পাঁচজন লোক আমার বাসার গেটে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। এ সময় তারা বাসা-সংলগ্ন আমার ওষুধের দোকানে সার্টার ভাঙে। একপর্যায়ে দোকানের সামনের একটি সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়। শনিবার দুপুরেও নৌকার সমর্থকরা রেলবাজার এলাকায় আবারও ওই সাংবাদিকের বাড়ির সামনের দোকানে ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি পাবনা-৩ এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ তাজউল ইসলাম, চাটমোহর সার্কেলের এএসপি হাবিবুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

নোয়াখালী : স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকের বাড়ি ভাঙচুর-গুলিবর্ষণ : নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ি আংশিক) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিকের (কাঁচি) সমর্থক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহমানের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও গুলি ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে সেনবাগের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক। এতে তিনি নৌকার সমর্থকদের দায়ী করছেন। অন্যদিকে নৌকার প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করছেন। এর আগে শনিবার রাতে সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহমানের বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী মোরশেদ আলমের সমর্থক বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী সংবাদ সম্মেলনে সেনবাগ থানার ওসির অপসারণ দাবি করছেন।

নৌকার প্রার্থী মোরশেদ আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আবদুর রহমান চেয়ারম্যানের বাড়িতে তার কোনো লোকজন হামলা করেনি। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা নিজেরাই হামলা করে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। আবদুর রহমান একজন খারাপ লোক। ইতিপূর্বে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটূক্তি করে জেল খেটেছেন তিনি।

চুয়াডাঙ্গা : স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর নৌকা সমর্থকদের হামলা : নির্বাচনি প্রচারণাকালে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়াল ও সমর্থকদের ওপর নৌকা প্রতীকের নেতা-কর্মীদের হামলার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার রাতে সদর উপজেলার নতুন ভান্ডারদহ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রাতেই ২১ জনের নাম উল্লেখসহ ১২০ জনকে আসামি করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। মামলার আসামি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলী আহম্মেদ হাসানুজ্জামান মানিকসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- আলী আহম্মেদ হাসানুজ্জামান মানিক (৪০), নতুন ভান্ডারদহ গ্রামের আবদুল্লাহ আল ফারুক (৪৫) ও সুমন হোসেন (২১), যুগীরহুদা গ্রামের হাফিজুর রহমান (৪৫) এবং ফুলবাড়ী গ্রামের জেহের আলী (২২)।

পুলিশ জানায়, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়াল শনিবার রাতে নেতা-কর্মীসহ সদর উপজেলার নতুন ভান্ডারদহ গ্রামে নির্বাচনি প্রচার করছিলেন। এসময় নৌকা প্রতীকের নেতা-কর্মীরা প্রচারণায় বাধা দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের আক্রমণ করে। খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে ঘটনাস্থলে যান চুয়াডাঙ্গা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা এবং পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান।

ফরিদপুর : নৌকার পোস্টার লাগাতে বাধা, মারপিট : ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম হকের নির্বাচনি পোস্টার লাগাতে বাধা প্রদান ও মারপিট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল আলিয়াবাদ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পাটপাশা এলাকায় এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শামীম হকের পোস্টার লাগাতে রুবেল ম ল ও তার সহযোগীরা পাটপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সামনে যায়। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের ঈগল প্রতীকের সমর্থক সেন্টু ও কয়েকজন নৌকার পোস্টার লাগাতে বাধা দেয় এবং সেখান থেকে চলে যেতে বলে। এনিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে নৌকার পোস্টার লাগাতে যাওয়া রুবেল ম লকে চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি মারতে থাকে। পরে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর