বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আরেকবার সুযোগ দিন

রংপুরে জনসভায় শেখ হাসিনা

নজরুল মৃধা, রংপুর

আরেকবার সুযোগ দিন

রংপুরের পীরগঞ্জে গতকাল জনসভা মঞ্চে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও রংপুর-৬ আসনের প্রার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী -পিআইডি

নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আরেকবার সেবা করার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। সবার জীবনমান উন্নয়ন হয়েছে। চিকিৎসা, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আরেকবার সুযোগ দিয়েন যেন আপনাদের জীবনমানের আরও উন্নয়ন করতে পারি। গতকাল রংপুরের পীরগঞ্জ, তারাগঞ্জ ও মিঠাপুকুরে পৃথক নির্বাচনি জনসভায় তিনি এ কথা বলেন। জনসভায় উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, সালমান এফ রহমান, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

নৌকায় ভোট দেওয়ায় মানুষের জীবনমান পরিবর্তন হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কোনো মানুষ যেন অবহেলিত না থাকে সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সকালে ভোটারদের নিয়ে কেন্দ্রে যান। আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন।

পীরগঞ্জ, তারাগঞ্জ ও মিঠপুকুরের প্রতিটি জনসভায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে রংপুর জেলায় সাজসাজ রব পড়ে যায়। সভায় রংপুর বিভাগের আট জেলার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যোগ দেন। মাঠের বাইরেও হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনে।

শেখ হাসিনা শ্বশুরবাড়ি পীরগঞ্জের লালদীঘি ফতেহপুরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং স্বামী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করেন। সেখানে তিনি দুপুরের খাবার খান।

পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াতকে উদ্দেশ করে বলেন, মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। যারা বাসে-ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ মারার ফাঁদ তৈরি করেছে তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যারা আগুন দিয়ে মা ও শিশুকে পুড়িয়ে মারে তাদের ধরে পুলিশে দিতে হবে। অগ্নিসন্ত্রাস যারা করতে আসবে, তাদের সঙ্গে সঙ্গে ধরে শাস্তি দিতে হবে। তাদের পুলিশে দিতে হবে। তিনি বলেন, দিনরাত কাজ করি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। সেখানে তারা আসে ধ্বংস করার জন্য। বাড়ির কাছে রেললাইন থাকলে প্রয়োজনে পাহারা দিতে হবে। কোনো বাস-গাড়িতে আগুন দিতে গেলে ধরে ফেলতে হবে। জনগণকেই এটা প্রতিহত করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসে জনগণের সেবা করতে। জাতির পিতাকে হত্যা করে যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা এসেছিল লুটপাট করতে। লুটপাট, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক এগুলোই ছিল তাদের কাজ। তারা মানুষের কল্যাণে কোনো কাজ করেনি। একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রত্যেকের ভাগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। শিক্ষায়-দীক্ষায় সব দিক দিয়ে মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে। সব থেকে বেশি মঙ্গাপীড়িত এলাকা এ রংপুর। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আর কোনো দিন মঙ্গা হয়নি। তিনি পীরগঞ্জ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে রংপুরের অঞ্চলিক ভাষায় বলেন, কি বাহে একনা ভোট পাইম না। শিরীন শারমিন জয় ও পুতুলের বোন। শিরীন শারমিন লেখাপড়ায় কোনো দিন প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হয়নি। ভালো মানুষ। আপনারা তাকে ভোট দিয়েন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে। দেশে ধারাবাহিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশ এখন স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। তিনি যুবসমাজকে উদ্দেশ করে বলেন, যুবসমাজকে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। তাদের কাজ করতে হবে। অর্থ উপার্জন করতে হবে। কোনো জমি অনাবাদি রাখা যাবে না। প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করতে হবে। বাড়ির আঙিনায় ফসল ফলাতে হবে। তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বলেন, ইসরায়েলি এ আগ্রাসনের ধিক্কার জানাই। তিনি বলেন, কৃষক যাতে ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় এর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কৃষককে ১০ টাকায় হিসাব খোলা হয়েছে। ২ কোটি কৃষক বিভিন্ন উপকরণ পাচ্ছে। পারলে আপনারা ফলের গাছ লাগান, ভেষজ গাছ লাগান, বনজ গাছ লাগান যা থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। তিনি বলেন, আমরা ওয়াদা করেছিলাম দেশের সব ঘরে বিদ্যুৎ দেব। আমরা যে কথা দিয়েছি, সে কথা রেখেছি। এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ জ্বলছে। দুর্গম এলাকায় সোলার প্যানেল জ্বলছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মা-বাবা, ভাইসহ সব স্বজনকে হারিয়েছি। সব শোক-ব্যথা বুকে নিয়ে রাস্তায় নেমেছি। লক্ষ্য একটাই- দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। ১৫ আগস্টের পর বাংলার মানুষ ছিল অবহেলিত। তাদের মাথাপিছু আয় বাড়েনি। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে আমি এগিয়ে এসেছি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার জন্য মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীর আদর্শ স্কুল মাঠে পথসভায় দলীয় প্রার্থী রাশেক রহমানের নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে বলেন, উন্নয়নের মার্কা নৌকা। নৌকা স্বাধীনতার মার্কা, বঙ্গবন্ধুর মার্কা। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আফসার মিয়া। তারাগঞ্জে নির্বাচনি প্রচারে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে এখানে এসেছিলাম। আপনারা নৌকাকে নির্বাচিত করেছেন। নৌকা মার্কা বিজয়ী হয়ে বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আমি জাতির জনকের সেই স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, একসময় রংপুর-নীলফামারীসহ এ অঞ্চলে মঙ্গা লেগেই থাকত, রাস্তাঘাট ছিল না। কথা ছিল নির্বাচিত হলে মঙ্গা দূর করব। এখন এ অঞ্চলে মঙ্গা নেই। রাস্তাঘাট হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষককে ভর্তুকিতে সার-বীজসহ বিভিন্ন উপকরণ দেওয়া হচ্ছে। কৃষক এখন কলের লাঙল দিয়ে চাষ করে। পঞ্চাশ থেকে সত্তর শতাংশ কৃষিতে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিকিৎসাসেবার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি। সাধারণ মানুষ বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা দিয়েছিলাম, এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন। শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বই দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেক এলাকায় মানুষের জন্য ভাগ্য পরিবর্তনের কাজ করছি। ৫৬২টি মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করা হয়েছে সারা দেশে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্ট ধর্মের জন্য সমানভাবে উন্নয়ন করব। যাদের বাড়ি নেই, তাদের জমি ও বাড়ি দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো ভূমিহীন থাকে তাহলে আমাকে খবর দেবেন। ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার ছোট বোন রেহানা ও আমি বিদেশে থাকায় বেঁচে গিয়েছি। মুষ্টিমেয় কিছু লোকের কারণে মানুষ একসময় ভালো ছিল না। এখন মানুষ ভালো আছে। নৌকা ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হবে, আপনারা ভালো থাকবেন। আমি আপনাদের নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। পীরগঞ্জের জনসভায় সভাপতিত্ব করেন নুরুল আমিন রাজা। আরও বক্তব্য দেন রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, দলের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, রংপুর মহানগর আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর