বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রার্থিতা বাতিল কেন নয়, ব্যাখ্যা দিতে দুই এমপিকে তলব

আচরণবিধি লঙ্ঘন চরম পর্যায়ে গেলে প্রার্থিতা বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন চরম পর্যায়ে গেলে প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য এখন পর্যন্ত ২৫০ জনকে শোকজ করেছে অনুসন্ধান কমিটি। এর মধ্যে ১৫০ জন উত্তর দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনজনের নামে মামলার সিদ্ধান্ত দিয়েছে কমিশন। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

এদিকে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুই সংসদ সদস্যকে ইসিতে তলব করা হয়েছে। আজ বিকাল ৩টায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে প্রার্থিতা কেন বাতিল করা হবে না, সে বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। তারা হলেন, কুমিল্লা-৬ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও বরগুনা-১ আসনের নৌকার প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র বলতে কিছু নেই। আমাদের কাছে আছে গুরুত্বপূর্ণ বা অতি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। অতি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে আনসার সদস্যের পাশাপাশি পুলিশের সংখ্যা বেশি থাকে। আর গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে কিছুটা কম থাকে। চরাঞ্চল, দুর্গম এলাকা, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্বে সমস্যা হলে সেগুলোকে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। এ তালিকা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বাহার-শম্ভুকে ইসিতে তলব : আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী ও দুই সংসদ সদস্যকে নির্বাচন কমিশনে তলব করা হয়েছে। আজ বিকাল ৩টায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে প্রার্থিতা কেন বাতিল করা হবে না, সে বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা দিতে হবে। এই দুজনের মধ্যে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার লড়ছেন কুমিল্লা-৬ আসনে। আর ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ভোট করছেন বরগুনা-১ আসনে। বাহারকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ২০ ডিসেম্বর নির্বাচনি প্রচারণার সময় তিনি সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। তার নির্দেশে ব্যক্তিগত সহকারীসহ নেতা-কর্মীরা দুই সাংবাদিককে মারধর করেছেন। এ ছাড়া সংবাদকর্মীদের মোবাইল ফোন এবং লাইভ কভারেজের ডিভাইসও ছিনিয়ে নেওয়া হয়। আর বরগুনা-১ আসনের নৌকার প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত ১৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর আগেই তিনি প্রচারণায় নামেন। গত ২৮ নভেম্বর, ৭ ডিসেম্বর ও ৯ ডিসেম্বর ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু সহস্রাধিক সমর্থক নিয়ে মোটর শোভাযাত্রাসহ মিছিল, সভা করেছেন। তার বিরুদ্ধে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি ইতোমধ্যে চারটি প্রতিবেদন দিয়েছে। কমিটি একাধিকবার সতর্ক করার পরও তিনি ‘নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম’ করে যাচ্ছেন বলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এই অনিয়মের কারণে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী অর্থদন্ড ও প্রার্থিতা বাতিল কেন করা হবে না, তার ব্যাখ্যা দিতে হবে শম্ভুকে। এ ছাড়া কয়েকজন প্রার্থীকে শোকজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা।

নাটোর : নাটোরের বড়াইগ্রাম ইউপি কার্যালয়ে নৌকা প্রতীকের পক্ষে উঠান বৈঠক করার অভিযোগে চেয়ারম্যান ও সচিবকে কারণ দর্শানো নোটিস দেওয়া হয়েছে। সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রাসেল কারণ দর্শানোর নোটিস প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রাজবাড়ী : রাজবাড়ী-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিমের নৌকা প্রতীকের পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগে স্বতন্ত্র প্রার্থী নূরে আলম সিদ্দিকী হককে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। আগামীকাল দুপুর ১২টার মধ্যে তাকে সশরীরে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। জানা গেছে, নূরে আলম সিদ্দিকী হকের মনোনীত মো. হাসিবুল হাসান শান্ত মিনি পিকআপে প্রচার কালে লম্বা বাঁশ বেঁধে রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নে নৌকার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন।

আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) : আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নৌকার প্রচারণা করার অভিযোগে ছয় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ২ সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ ১২ জনকে শোকজ করা হয়েছে। তারা হলেন- দুপ্তারা সেন্ট্রাল করোনেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন সরকার, রোকন উদ্দিন মোল্লা গার্লস ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মইনুল হোসেন মানিক, গোপালদী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাদেকুর রহমান কামাল, জাঙ্গালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহেদুল হক, জাহানারা বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক, উজান গোবিন্দী বিনাইরচর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুজ্জামান খান এবং মুকুন্দী গাজীপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লোকমান হোসেন, প্যানেলভুক্ত পোলিং অফিসার উপজেলা কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী লুৎফুন্নাহার। বাকি চারজন আওয়ামী লীগ নেতা হলেন- খাগকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল হক রুবেল, যুবলীগের সভাপতি মাহবুবুল আলম, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিদা মোশারফ।

মুন্সীগঞ্জ : আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যানের আদালতে হাজির হয়ে গতকাল ব্যাখ্যা দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব। আদেশটি পরবর্তীতে জানানো হবে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। নোটিস থেকে জানা যায়, বিভিন্ন জায়গায় নৌকা প্রতীকের নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবের লোকজন মুন্সীগঞ্জ পৌরসভাকে নির্বাচনি প্রচার কেন্দ্র বানিয়ে সেখান থেকে পোস্টার, হ্যান্ডবিল বিতরণ এবং সার্বক্ষণিক নির্বাচনি কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছিলেন।

সর্বশেষ খবর