বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ

চার দিক দিয়ে ঘিরে নির্যাতন করে মন্ত্রী গাজীর সন্ত্রাসীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার পক্ষে প্রচারণা চালানোর সময় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা ও নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পালিত সন্ত্রাসী শমসের ও তার বাহিনী তাদের ওপর হামলা করে। তবে ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরও মূল হামলাকারী গ্রেফতার  না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন মুক্তিযোদ্ধারা। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা এ তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. চাঁন মিয়া। অন্যদিকে, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় গতকাল ছয়জনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা চাঁন মিয়া বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার প্রচারণার সময় ২৫ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় চনপাড়ার রাসেল নগর ইউনিয়নে যান ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় ৩৫ জন। এ সময় জাতির বীর সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর গোলাম দস্তগীর গাজীর পালিত সন্ত্রাসী শমসেরের নেতৃত্বে দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে। তিনি বলেন, শমসের ও তার লোকজন মুক্তিযোদ্ধাদের চারদিক দিয়ে ঘিরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে শমসের ও তার লোকজন প্রচারণা ও গণসংযোগকালে মুক্তিযোদ্ধা হাসান মাসুদ, মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক, মুক্তিযোদ্ধা ছানাউল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা চাঁন মিয়াসহ উপস্থিত ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে মারধর করে এবং নির্বাচনি প্রচারণায় বাধা দেয়। এতেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা হাসান মাহমুদকে পেছন থেকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হকের অ-কোষে লাথি দিয়ে গুরুতর আহত করে। মুক্তিযোদ্ধা চাঁন মিয়া বলেন, ঘটনার পর ২৫ ডিসেম্বর আমি বাদী হয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা করি। কিন্তু সংসদ সদস্য গাজীর কারণে শমসেরকে এখনো পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি। আমরা চাই তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হোক। কিছুদিন আগেও শমসেরকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, গাজীর শক্তির কারণে তাকে ছেড়ে দিতে হয়েছে। অপরাধ করে গাজীর বাড়িতে আশ্রয় নেয় শমসের। ফলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না। চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে শমসেরের নেতৃত্বে ১২৮টি মাদকের কেন্দ্র পরিচালিত হয়। গাজী ও গাজীর পুত্র পাপ্পা গাজী এবং তাদের এপিএস এমদাদের নেতৃত্বে এসব মাদকের কারবার পরিচালনা করে শমসের। এখান থেকে কোটি কোটি টাকা মাসোহারা পায় গাজী পরিবার ও এপিএস এমদাদ। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক বলেন, আমরা প্রচারণা করছিলাম। হঠাৎ আমাদের ওপর নৌকার মিছিল থেকে হামলা করা হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার অ-কোষে লাথি দেয় সন্ত্রাসীরা। এ ছাড়াও আমার গায়ে লাথি-ঘুসি মারে। বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ সেলিম বলেন, শাহজাহান ভূঁইয়া রূপগঞ্জের ছেলে। কিন্তু গোলাম দস্তগীর গাজী এ এলাকার সন্তান নন। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপক উন্নয়ন করলেও গাজী পরিবার রূপগঞ্জে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। তাদের কুকীর্তি, জোর করে জমি দখল, মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয় দেওয়ার তথ্য রূপগঞ্জের জনসাধারণ জানে। তাই নির্বাচনের সময়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, পোস্টার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা করছে। তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার বিচার চাই। শাহজাহান ভূঁইয়া রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রায় পাঁচ বছর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। গাজীর দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে আমরা নৌকার পরীক্ষিত সৈনিক ও রূপগঞ্জের সন্তানের প্রচারণা করছি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ছানাউল্লাহ মিয়া, ফজলুর করিম মোল্লা, নজরুল ইসলাম, আক্তার হোসেন মোল্লা, হাসান মাহমুদ, মো. আক্তারুজ্জামান (বাবুল), মো. ইব্রাহিম খলিল, আবদুল মান্নান আজাদ, মো. আবুল ফয়েজ ভূঁইয়া, মো. নাজীম উদ্দিন, মো. আবদুল ওহাব মিয়াসহ আরও অনেক মুক্তিযোদ্ধা।

মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলায় গ্রেফতার ৬ : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের মারধরের ঘটনায় ছয় সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা সবাই নৌকার সমর্থক বলে জানিয়েছে রূপগঞ্জ পুলিশ। গতকাল জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছয়জনকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ সুপার জানান, সোমবার দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা মো. চাঁন মিয়া নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (কেটলি) শাহজাহান ভূঁইয়ার পক্ষে ভোটের প্রচার চালান। তাঁর সঙ্গে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এ সময় নৌকা প্রতীকের প্রচারে থাকা শমসের আলীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচারে বাধা দেওয়া হয়। এ সময় তাঁদের হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করা হয়। পরে এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা চাঁন মিয়া রূপগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ এবং গোয়েন্দা পুলিশ সোমবার রাতে ১১ জনকে আটক করে। পরে যাচাই-বাছাই করে ছয়জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তারা হলেন- ইমন মাহমুদ রবিন (২৫), সেন্টু তালুকদার (৪৯), মো. ডন শরীফ (৪৫), আনিসুর রহমান শাওন (৩২), রাসুকুল ওরফে রাকিব (৩০) ও মো. চান মিয়া (২৭)।

সর্বশেষ খবর