নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের পৃথক অভিযোগে কুমিল্লায় একজন যুগ্মসচিব ও একজন নির্বাচন কর্মকর্তাকে শোকজ করা হয়েছে। এ ছাড়া একই অভিযোগে কুষ্টিয়ায় বর্তমান এমপি আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশাহসহ মোট আটজনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি। এর বাইরে খুলনা-৪ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুস সালাম মুর্শেদী এমপির বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারার বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য-
কুমিল্লা : সাবেক রেলমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুজিবুল হক মুজিব এমপির উঠান বৈঠকে অংশ নেওয়ার অভিযোগে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের যুগ্মসচিব এ কে এম জি কিবরিয়া মজুমদারকে গতকাল শোকজ করেছেন আসনভিত্তিক নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান সিনিয়র সহকারী জজ সাইফুর রহমান। নোটিসে উল্লেখ করা হয়, এ কে এম জি কিবরিয়া মজুমদার একজন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা হয়েও ২৪ ডিসেম্বর মুন্সিরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এবং ২৫ ডিসেম্বর জগন্নাথদিঘি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনি সমাবেশে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রকাশ্যে নৌকা মার্কার প্রার্থীর পক্ষে বক্তব্য দেন। যার ভিডিও ক্লিপ ও স্থিরচিত্র অনুসন্ধান কমিটির কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত এ কে এম জি কিবরিয়া মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেছেন, ওই এলাকায় তার বাড়ি। প্রার্থীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকে মঞ্চে বসানো হয়।
এদিকে কুমিল্লার লালমাইতে অর্থমন্ত্রীর নির্বাচনি প্রচারে অংশ নেওয়ায় প্রিসাইডিং অফিসার ও লালমাই উপজেলার ‘অধ্যক্ষ আবুল কালাম মজুমদার মহিলা কলেজ’-এর প্রভাষক মো. আবদুল হালিমকে শোকজ করেছেন আসনভিত্তিক নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান, সিনিয়র সহকারী জজ রাজীব কুমার দেব। নোটিসে বলা হয়েছে, ২৫ ডিসেম্বর আপনি প্রভাষক মো. আবদুল হালিম লালমাই উপজেলার ভুলইন উত্তর ইউনিয়নের হাজতখোলা বাজারে কুমিল্লা-১০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের মেয়ে এবং ছোট ভাই গোলাম সারওয়ারের সঙ্গে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেছেন। প্রচারকালে আপনার হাতে নৌকার লিফলেট ছিল। আপনি প্রার্থীর কন্যাকে কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে মন্তব্য করেছেন ‘ওরা আমাদের দলের লোক।’ আপনি প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি প্রচারে অংশ নেন এবং ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেছেন।কুষ্টিয়া : আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে কুষ্টিয়া-১ আসনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশাহসহ আটজনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রকাশ্যে জনসভায় সাধারণ ভোটারদের নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘নৌকায় ভোট দিতেই হবে, না হলে সব সোজা করে দেব।’ ওই আসনের জন্য গঠিত অনুসন্ধান কমিটির প্রধান যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মোহা. আসাফ-উদ-দৌলা স্বাক্ষরিত কারণ দর্শাও নোটিস গতকাল সন্ধ্যায় তার কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালত পুলিশ পরিদর্শক মো. মনিরুল ইসলাম জানান, নোটিসে আগামী শুক্রবার সকাল ১০টায় অনুসন্ধান কমিটির প্রধানের কার্যালয়ে হাজির হয়ে লিখিত জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। নোটিসপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঝাউদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কেরামত আলী বিশ্বাস, ঝাউদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন মুন্সী মেহেদী হাসান, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সামসুর রহমান বাটুল, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার ফারুকুজ্জামান, ঝাউদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি চাঁদ আলী মালিথা ও যুবলীগ নেতা আমান উল্লাহ আমান। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে একাধিকবার মোবাইল ফোন করা হলেও আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ রিসিভ করেননি। এসএমএস দিলেও সাড়া দেননি।
খুলনা : খুলনা-৪ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুস সালাম মুর্শেদী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারার বিরুদ্ধে আলাদা অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে গতকাল খুলনা-৪ আসনের নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান তানিয়া সুলতানা লিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে সশরীরে হাজির হয়ে সালাম মুর্শেদীকে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। জানা যায়, তার বিরুদ্ধে নির্বাচনের সাদাকালো পোস্টারের পরিবর্তে অতিরিক্ত মাপের রঙিন পোস্টার-ব্যানার টানানো ও ২৬ ডিসেম্বব বাস, ট্রাক ও মোটরসাইকেলযোগে শোডাউন করে জনগণের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরির অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্যদিকে মোর্ত্তজা রশিদী দারা হুমকি দিয়েছেন মর্মে অভিযোগ তুলে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে লিখিত দিয়েছেন বারাকপুর ইউপি চেয়ারম্যান গাজী সাহগীর হোসেন। তিনি বলেন, ২৬ ডিসেম্বর মোর্ত্তজা রশিদী দারা গণসংযোগকালে আমার নামে অকথ্য গালিগালাজ ও হত্যার হুমকি দেন। নৌকার পক্ষে কাজ না করার হুমকি দেন; যা নির্বাচনি আচরণবিধির লঙ্ঘন।