শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
বরিশালে বিশাল জনসভায় শেখ হাসিনা

অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দিন

রফিকুল ইসলাম রনি ও রাহাত খান, বরিশাল থেকে

অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দিন

বরিশালে আওয়ামী লীগের জনসভায় লাখো মানুষের ঢল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে বরিশালবাসীকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে নৌকায় ভোট চেয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই দেশের উন্নয়ন হয়েছে। যখন জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিল তখন উন্নয়ন হয়নি। দেশ পিছিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ আসলে দেশ এগিয়ে যায়। কাজেই এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের অগ্রগতি। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। বরিশাল বঙ্গবন্ধু উদ্যানে গতকাল বিকালে বিশাল জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। আবারও ক্ষমতায় আসতে পারলে বরিশালে ছয় লেনের রাস্তা, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।  নতুন ভোটারদের কাছে নৌকায় ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন- আমার আহ্বান, যারা প্রথমবার ভোট দিতে আসবেন, নিশ্চয়ই চাইবেন না যে, আপনার ভোট ব্যর্থ হোক। কাজেই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমাদের রাজনীতি মানুষের কল্যাণে আর ওদের (বিএনপি-জামায়াত) রাজনীতি মানুষ পোড়ানোর। দেশের মানুষ তাদের চায় না।  টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের কাছে আহ্বান- আপনারা ৭ তারিখে একেবারে সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে যাবেন। মার্কাটা কি? নৌকা মার্কা। এই নৌকা মার্কা হচ্ছে নুহ নবীর নৌকা, যা মহাপ্লাবন থেকে মানুষকে রক্ষা করেছিল। এই নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে, দারিদ্র্যবিমোচন হয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। নৌকা মার্কায় ভোট দিলে এবার স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। তাছাড়া জলবায়ু অভিঘাতে দক্ষিণাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে- সেটা মাথায় রেখে ২১০০ সাল পর্যন্ত ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি। এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।  জনসভায় বরিশাল বিভাগের আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদের জন্য নৌকায় ভোট চান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বরগুনায় ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সুলতানা নাদিরা, পটুয়াখালীতে আ স ম ফিরোজ, এস এম শাহজাদা, মহিব্বুর রহমান, ভোলায় তোফায়েল আহমেদ, আলী আজম, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, আবদুল্লাহ আল জ্যাকব, বরিশালে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, জাহিদ ফারুক এরা আওয়ামী লীগের প্রার্থী। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও সদর আসনের নৌকার প্রার্থী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জাহিদ ফারুককে মনোনয়ন দিয়েছি। তাকে আমি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছি। অত্যন্ত দক্ষতা ও সততার সঙ্গে সে তার দায়িত্ব পালন করছে। কাজেই তাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। বরিশালের দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, আরেকজনকে মনোনয়ন দিয়েছি, মেজর জেনারেল আবদুল হাফিজ মল্লিক। তিনি বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সঙ্গে যুক্ত আছেন। বঙ্গমাতা হাসপাতাল দেখাশোনা করেন। ঝালকাঠিতে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর। ওই সন্ত্রাসী দল (বিএনপি) ছেড়ে সে এখন নৌকায় উঠেছে। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে। এ ছাড়া ঝালকাঠিতে আমির হোসেন আমু, পিরোজপুরে শ ম রেজাউল করিম, বরিশাল-২ আসনে আমাদের রাশেদ খান মেনন, তিনি ১৪ দলের শরিক। আর বরিশাল-৪ আসনে আমাদের শাম্মী আহম্মেদকে দিয়েছি। যদিও তার মনোনয়নটা হাই কোর্টে আটকা পড়ে আছে, কিন্তু আওয়ামী লীগ তাকেই মনোনয়ন দিয়েছে। পিরোজপুরে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, তিনি আমাদের ১৪ দলের শরিক।  বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ গতকাল বিকালে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু উদ্যানে নির্বাচনি জনসভার আয়োজন করে। তবে বরিশাল বিভাগের চারটি জেলা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সর্বত্রই ছিল নির্বাচনি আমেজ, ভোটের উৎসব। প্রধানমন্ত্রী ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে যাবেন কি না- জানতে চাইলে লাখ লাখ মানুষ দুই হাত তুলে এবং নৌকা মার্কার স্লোগান তুলে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার অঙ্গীকারের কথা জানান। শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বরিশাল বিভাগে নৌবাহিনীর ঘাঁটি করেছি, সেনানিবাস করেছি, এলাকার উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হয়েছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি, সেখানে সোলার প্যানেলসহ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছি। ভোলার গ্যাস সিএনজি করে ঢাকায় নিচ্ছি। ভবিষ্যতে বরিশালেও নিয়ে আসব, যাতে আরও শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে। তিনি বলেন, বরিশাল ছিল শস্য ভান্ডার। আবারও সেই সুদিন ফিরিয়ে আনতে চাই। এ জন্য খাদ্য সংরক্ষণাগার করে দিয়েছি। তিনি বলেন, তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল কুয়াকাটায় চলে আসবে, সেখানে স্থাপন করা হবে যাতে দক্ষিণাঞ্চলের ইন্টারনেট নির্বিঘ্ন হয়। বরিশাল ছিল অন্ধকার। এখন প্রতিটি ঘরে আলো জ্বলছে। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল কুয়াকাটা এবং পায়রা পোর্ট পর্যন্ত ছয় লেনের রাস্তা তৈরি করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যেই আমাদের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়ে গেছে। এই বরিশালে আর কোনো দুর্ভোগ থাকবে না।  গতকাল সকাল ৯টায় ঢাকা থেকে প্রটোকল ছাড়াই ব্যক্তিগত গাড়িতে করে সড়কপথে রওনা হয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে বেলা ১টায় বরিশালে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সার্কিট হাউসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম শেষে বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা ও তাঁর বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জনসভায় যোগ দেন শেখ হাসিনা।

নির্বাচনি প্রচারের ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ নিজ নির্বাচনি এলাকা ও জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার জনসভায় তাঁর পক্ষে ভোট চাইবেন। পরে কোটালীপাড়ায় অপর নির্বাচনি জনসভায় যোগ দিয়ে ভোট চাইবেন। সেখান থেকে ঢাকায় ফেরার পথে মাদারীপুরের কালকিনিসহ অপর একটি নির্বাচনি জনসভায় যোগ দিতে পারেন বলে জানা গেছে। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে নির্বাচনি জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ১৪ দলের প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টি জেপি’র চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, বরিশালের মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, দলের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, কেন্দ্রীয় সদস্য গোলাম কবির রাব্বানী চিনু, আনিসুর রহমান, অভিনেতা মীর সাব্বির, অভিনেত্রী তারিন জাহান, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, বিএনপি থেকে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদানকারী নৌকার প্রার্থী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, মেজর জেনারেল (অব.) হাফিজ মল্লিক, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর, পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান, ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুল কাদের মজনু, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আফজালুর করিমসহ বরিশাল বিভাগের চারটি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। জনসভা পরিচালনা করেন বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন এবং বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না প্রমুখ।

অবিশ্বাস্য জনস্রোত : কীর্ত্তনখোলা নদীর তীরে দেশের শস্যভান্ডার বলে খ্যাত বরিশালে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে পুরো বরিশালের মানুষের মধ্যে এক অন্যরকম উন্মাদনার সৃষ্টি হয়। সকাল থেকেই বরিশালের চারটি জেলার ২১টি আসন থেকে দলটির নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের ঢল নামে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের নির্বাচনি জনসভাস্থলে। বেলা সাড়ে ১২টার মধ্যে বিশাল এই উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। নগরীর চতুর্দিক প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত হয়। আয়োজকরা দাবি করেন, জনসভায় ৮ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটেছে।

সর্বশেষ খবর