রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
বিজনেস আই-এর গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা

অর্থনৈতিক উন্নয়নের চরিত্র দুর্বৃত্তায়িত হতে দেওয়া যাবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থনৈতিক উন্নয়নের চরিত্র দুর্বৃত্তায়িত হতে দেওয়া যাবে না

জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গতকাল ইংরেজি দৈনিক ‘বিজনেস আই’ আয়োজিত ‘ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপরচুনিটিস’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন ড. খলীকুজ্জমান আহমদ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে হবে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নের চরিত্র দুর্বৃত্তায়িত হতে দেওয়া যাবে না। এজন্য প্রয়োজন সবার সমান সুযোগ তৈরি করা।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গতকাল ইংরেজি দৈনিক ‘বিজনেস আই’ আয়োজিত ‘ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপরচুনিটিস’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় এ অভিমত উঠে আসে।

এতে দেশের শিক্ষা, অর্থনীতি ও কর্মের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার তাগিদ দিয়ে বলা হয়, আমাদের আয়ের বৈষম্য বেড়েছে। বেড়েছে আয় ও সম্পদ আহরণের বৈষম্যও। আমাদের নীতি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে নীতির বাস্তবায়ন নিয়ে। একটা নীতি প্রণয়নের পর বাস্তবায়নের জন্য একটা কমিটি করতে লেগে যায় ৮-১০ বছর। আমলাতান্ত্রিক এ জটিলতা থেকে    বেরিয়ে আসতে হবে।

গোলটেবিল অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান এবং সভাপতিত্ব করেন বিজনেস আই সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন। বক্তাদের মধ্যে ছিলেন পিকেএসএফের সাবেক চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. এম শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি আমীন হেলালী, অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক রাষ্ট্রদূত মাসয়ূদ মান্নান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গ্লোবাল টিভির সিইও সৈয়দ ইসতিয়াক রেজা। ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, মানুষকে শুধু কিছু টাকা দিলেই আর্থিক অন্তর্ভুক্তি (ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন) হয় না। এটার ব্যাপকতা অনেক বেশি। মানুষকে তার অধিকার বুঝিয়ে দেওয়া এবং আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করানোই আর্থিক অন্তর্ভুক্তি। তিনি বলেন, আমরা একটা দুষ্টচক্রের মধ্যে ঢুকে পড়েছি। এ দুষ্টচক্রের হাত অনেক লম্বা। আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীটা কাজ করছে। নইলে বৈষম্য অন্য দেশের তুলনায় আরও বাড়তে পারত। তিনি আরও বলেন, আমরা কিন্তু রোবট নই যে কতগুলো টাকা হলেই চলবে। আমাদের সংস্কৃতি ও বিনোদনের ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিটাকে দেখাতে হবে। তবে আয় ও সম্পদ বৈষম্য অনেক বেড়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও বৈষম্য বেড়েছে। এ বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে। আমাদের কোটিপতির সংখ্যা যে হারে বেড়েছে সে হারে তো করদাতার (কর জিডিপি রেশিও) সংখ্যা বাড়েনি। এটা খুবই লজ্জাজনক যে, আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি, অথচ আমাদের কর জিডিপির হার এখনও ১০ শতাংশের নিচে। এটা অবশ্য আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। ড. আতিউর রহমান বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের জন্য সবচেয়ে কষ্টকর বিষয় হলো মূল্যস্ফীতি। এ মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে হবে। আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে এ প্রসঙ্গে ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া ঋণ ও কর খেলাপিদের জেলে নেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করারও ঘোষণা দিয়েছে। এতে উদার গণতান্ত্রিকতার কথাও বলা হয়েছে। বাংলাদেশে উদার গণতন্ত্রের চর্চা রয়েছে। এজন্যই আর্থিক খাতে সুশাসনের কথা বলা হয়েছে। দুর্নীতিকে জিরো টলারেন্স হিসেবে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ড. এম শামসুল আলম বলেন, বৈষম্য বেড়েছে দুর্নীতির কারণে। কেননা দুর্নীতি বৈষম্যকে উৎসাহিত করে। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে। সব ক্ষেত্রেই উন্নয়ন হয়েছে। একটা সময় সরকারি বিনিয়োগ ছিল ৮৭ শতাংশ। আর এখন সেটা হয়েছে উল্টো। বেসরকারি খাতই এখন চালিকাশক্তি। বেসরবকারি খাতের মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতিতে একটা বিপ্লব ঘটে গেছে। তবে আমাদের সুযোগসুবিধার আওতা গ্রামাঞ্চলে বাড়াতে হবে। অবশ্য সেটা হয়েছে, হচ্ছে। এখন গাড়ি নিয়েই প্রত্যন্ত গ্রামে চলে যাওয়া যায়। প্রায় শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের হারও কমে এসেছে। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দেশের সব মানুষ যাতে উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। উন্নয়নটাও হতে হবে সুষম ভিত্তিতে। যারা ওপর তলায় আছেন তারা সম্পদ ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখছেন। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নইলে বৈষম্য আরও বাড়বে। স্বাগত বক্তব্যে ‘বিজনেস আই’ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫২ বছর হলো। আমরা আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে অর্থনৈতিক মুক্তি, ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়া এবং নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অনন্য সাফল্য অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর