শিরোনাম
বুধবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

রপ্তানিতে অশনিসংকেত

টানা তিন মাস ধরে কমছে আয়, নেতিবাচক প্রভাব তৈরি পোশাকেও

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

রপ্তানিতে অশনিসংকেত

রিজার্ভ সংকট কাটাতে দেশের রপ্তানি আয় বাড়ানোর ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হলেও এ খাতে এখন দেখা যাচ্ছে অশনিসংকেত। টানা তিন মাস ধরে রপ্তানি আয় কমছে। সর্বশেষ ডিসেম্বরের যে রিপোর্ট পাওয়া গেছে, তাতেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির হিসাবে সদ্যসমাপ্ত ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানিতে আয় এসেছে ৫৩০ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১ শতাংশ কম। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে অর্জিত রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৩৬ কোটি মার্কিন ডলার। সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো, যে তৈরি পোশাকে ভর করে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য গ্রহণ করেছে সরকার, ডিসেম্বরে এসে সেই খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। মাসভিত্তিক হিসাবে রপ্তানি আয়ের হ্রাসবৃদ্ধি ঘটলেও তৈরি পোশাক খাতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। তবে সদ্যসমাপ্ত ডিসেম্বরে এসে দেখা যাচ্ছে ভরসার খাত ওভেন পোশাক রপ্তানিও আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ১২ শতাংশ কমে গেছে। এ ছাড়া রপ্তানি কমেছে ক্যাপ, ফার্নিচার, কার্পেট, বাইসাইকেল, জুতা, হোম টেক্সটাইল, টেরি টাওয়েল, জাহাজ ও কাঁচা পাটের মতো সম্ভাবনাময় পণ্যে।

শুধু যে পণ্যভিত্তিক রপ্তানি আয় কমছে তাই নয়, দেশের পণ্য রপ্তানির বড় গন্তব্যগুলোতেও আয় কমে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে ধস নেমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর-এ পাঁচ মাসে ৩ হাজার ৬৪০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ২ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর প্রান্তিকে ৪ হাজার ৯ মিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে, গতবারের তুলনায় চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে রপ্তানি কমে গেছে প্রায় ৩৬৯ মিলিয়ন ডলারের। স্থানীয় মুদ্রায় যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৪০ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকার। বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির প্রায় ১৭ ভাগ আয় আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ফলে বৃহত্তম এ গন্তব্যে পণ্য রপ্তানি হ্রাসের বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। রপ্তানি কমেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বড় গন্তব্য জার্মানি, ইতালি, বেলজিয়ামেও। বড় বাজারগুলোর রপ্তানি কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে দেশের সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিন সংকট নতুন করে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধের একই সময়ে শ্রম খাতের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে শ্রম আন্দোলনের ঘটনা পণ্য রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আলোচ্য সময়ে গার্মেন্ট মালিকরাও বেশ কিছু গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ করে দেন। এসবেরই প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক রপ্তানি খাতে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাস অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল; নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে অক্টোবরে এসে। ওই মাসে ৩৭৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা ছিল আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৪ শতাংশ কম। নভেম্বরে রপ্তানি আয় আসে ৪ হাজার ৭৮ কোটি ডলারের; এটি আগের অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় ছিল প্রায় ৬ শতাংশ কম। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৫ শতাংশ, আগস্টে ৪ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল পণ্য রপ্তানি খাতে। মাসভিত্তিক হিসাবে রপ্তানি আয় সামান্য কমলেও সামগ্রিক হিসাবে এখনো ইতিবাচক রয়েছে প্রবৃদ্ধি। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ২ হাজার ৭৫৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১ শতাংশ বেশি। তবে সরকারের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে ৩ হাজার ১১ কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল সরকার।

হয়রানি কমালে রপ্তানি বাড়বে

রপ্তানি আয় কমে যাওয়া দুশ্চিন্তার

ক্রেতারা আসছেন না অস্থিরতার কারণে

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর