বৃহস্পতিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

রূপগঞ্জে জড়ো হচ্ছে অস্ত্রধারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র দুই দিন বাকি। ভোটের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে হলেও নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের চিত্র এখন ভিন্ন। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এ আসনে বাড়ছে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা। চিহ্নিত সন্ত্রাসী ছাড়াও অপরিচিত মুখের সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। অস্ত্রধারীরা প্রকাশ্যে মহড়া দিচ্ছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর সন্ত্রাসীরা হুমকিধমকি, নির্বাচনি ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রেখেছে। হালে গাজী বাহিনীর অস্ত্রের মহড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সোমবার অস্ত্র ও মাদকসহ গাজী বাহিনীর এক সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। এ অবস্থায় এ আসনের ভোট নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সাধারণ মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

রূপগঞ্জে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ায় নির্বাচন কমিশনে নারায়ণগঞ্জের এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল ও রূপগঞ্জের ওসি দীপক চন্দ্র সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন রূপগঞ্জের তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ড. তৈমূর আলম খন্দকার, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান ভূঁইয়া। আর এসব কারণে রূপগঞ্জে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শাহজাহান ভূঁইয়া প্রায় প্রতিদিনই সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কার কথা বলে আসছেন। গত সোমবার রাতে উপজেলার গোলাকান্দাইল এলাকা থেকে গাজীর সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য মাহফুজকে বিদেশি পিস্তল ও মাদকসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিন নাওড়া ও পোনাব এলাকায় কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মো. শাহজাহান ভূঁইয়ার ক্যাম্প পুড়িয়ে দেওয়া হয়। গুতুলিয়া এলাকায় এক কেটলি সমর্থকের বাড়িতে হুমকি দিয়ে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করা হয়। এর আগে কালনী বাজারে কেটলির ক্যাম্প পুড়িয়ে দেওয়া হয়। চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের শাহিন নামে এক বাস ড্রাইভারকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে নৌকার সমর্থকরা। কিছুদিন আগে গাজীর সমর্থক কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসূল কলির সন্ত্রাসী বাহিনী প্রকাশ্যে কাঞ্চন বাজারে বড় রামদা, চাপাতি ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে এক মিষ্টির দোকানে হামলা করে। এক সপ্তাহ আগে কেটলি প্রতীকে গণসংযোগ করার সময় ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে পিটিয়েছে গোলাম দস্তগীর গাজী সমর্থিত ডাকু শমসের মেম্বার ও তার বাহিনী। সন্ত্রাসী এসব কর্মকাণ্ডের কারণে রূপগঞ্জে সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠান নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জানা গেছে, মাদক ব্যবসার কমিশন, দমন-নিপীড়নে সন্ত্রাসী বাহিনী প্রেরণের মূল কাজটি করে গোলাম দস্তগীর গাজীর এপিএস এমদাদুল হক দাদুল। গাজীর নিজস্ব বলয় গড়তে দলীয় পদে সন্ত্রাসীদের পদায়নের কাজটিও করে দাদুল। এমদাদুল হক দাদুলের সারা রূপগঞ্জে রয়েছে সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক। রূপগঞ্জে চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র মূলত মাদকের আখড়া ও সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আভাসস্থল। এ পুনর্বাসন কেন্দ্রে রয়েছে ২২ হাজার ভোট। আর এখানে চিহ্নিত দাগি সন্ত্রাসীও রয়েছে অসংখ্য। এমদাদের বাহিনীতে রয়েছে ডেঞ্জারম্যান শমসের আলীসহ দাগি সব সন্ত্রাসী। যাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে। জানা গেছে, রূপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকার হাসমত দয়ার ছেলে শমসের আলী খান ওরফে ডাকু শমসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শমসেরের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি ও মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে। নির্বাচনের আগেই রূপগঞ্জ থানায় হওয়া ১৩টি মামলার আসামি ছিল সে। এ ছাড়া শমসেরের সঙ্গে আছে বহু মামলার আসামি শাহাবুদ্দিন, টাক রবিনসহ অসংখ্য সন্ত্রাসী। ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকায় প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, গুম, খুন, মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় তার হাতে। চনপাড়ার বাসিন্দাদের মাদক কারবার ও অস্ত্র ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে যুক্ত হতে বাধ্য করে। প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে আলোচিত চনপাড়া বস্তিতে ডনগিরি করছে শমসের। মাছিমপুর এলাকার আফসার উদ্দিনের ছেলে তাওলাদ মেম্বার। এলাকায় নানা অপরাধ কাণ্ড করে ত্রাস সৃষ্টি করেছে। মন্ত্রীর এপিএস ‘এমদাদের লোক’ পরিচয়ে দেদার অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। রূপগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ডাকাতি, হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর, অবৈধ অস্ত্র বহন এবং মাদকের দুটি মামলা রয়েছে (নম্বর ১১(১০)২২ ও ২২(৮)২৩)। পূর্ব কালাদী গ্রামের সুরুজ মিয়া মুন্সীর ছেলে মো. আলী হোসেন ওরফে আলী বান্দা মন্ত্রীর এপিএস এমদাদের ছত্রচ্ছায়ায় নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা রয়েছে (নম্বর ৩৮(১২)২২)। স্থানীয়রা জানান, জনমত জরিপে নৌকার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে কেটলি। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে রূপগঞ্জে বাড়ছে নৌকার পক্ষে সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি। নির্বাচনের দিন সন্ত্রাসীদের রুখতে না পারলে সুষ্ঠু ভোট রূপগঞ্জে হবে না বলে জানিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শাহজাহান ভূঁইয়া, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ডক্টর তৈমূর আলম খন্দকার ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলাম। এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, সন্ত্রাসী ও মাদকের বিরুদ্ধে আমরা সব সময় সোচ্চার। সন্ত্রাসী যেই হোক তাকে গ্রেফতার করা হবে।

সর্বশেষ খবর