শুক্রবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
বিদেশিদের ব্রিফিং সিইসির

ভোটারদের চাপ দেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চান কূটনীতিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটারদের চাপ দেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চান কূটনীতিকরা

সিইসি হাবিবুল আউয়াল গতকাল বিদেশি কূটনীতিকদের নির্বাচন বিষয়ে ব্রিফ করেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ভোট দিতে যেতে সরকার বা নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটারদের কোনো চাপ দেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চেয়েছেন ঢাকার বিদেশি কূটনীতিকরা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে কূটনীতিকরা জানতে চেয়েছেন ভোটের মাঠে কী পরিমাণ অভিযোগ আসছে এবং সেগুলোর বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তারা ভোটের ফলাফল কেমন হতে পারে সে বিষয়েও জানতে চেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছ থেকে। গতকাল নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকাস্থ বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য আয়োজিত ব্রিফিং-এ তারা এসব প্রশ্ন করেন। ব্রিফিং শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এসব তথ্য জানান। কূটনীতিকরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, রাশিয়া, জাপান, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, সুইডেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রায় ৫০টি দেশ ও সংস্থার আবাসিক প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এরপর সোনারগাঁও হোটেলের সুরমা কক্ষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তথ্য অধিদফতর কর্র্তৃক স্থাপিত ‘মিডিয়া সেন্টার’ উদ্বোধন করেন সিইসি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে রাষ্ট্রদূতদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। কারণ তারা সব সময় আমাদের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী। তারা বিভিন্ন সময়ে আমাদের কার্যালয়ে এসেছেন, মতবিনিময় করেছেন। তাদের সবার প্রত্যাশা হলো, আগামী নির্বাচনটা যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ হয়। এ বিষয়ে তারা জোর দিতে চান। গতকালও তারা আমাদের কাছে এসব বিষয়ে মতামত জানিয়েছেন। আমরাও নির্বাচনের অবস্থা সম্পর্কে তাদের অবহিত করেছি। সিইসি বলেন, আমরা সর্বশেষ অবস্থাটা তাদের ব্রিফ করেছি এবং আমি একটা স্টেটমেন্ট রিড আউট করেছি। বিদেশি দূতরা সেটা শুনেছেন। তারা কিছু প্রশ্নও করেছেন। যে প্রশ্নগুলো এসেছে- তার মধ্যে একটি হলো, অভিযোগ কি পরিমাণ পাচ্ছি? আমরা জানিয়েছি, অভিযোগ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। ছোটখাটো অভিযোগ হতে পারে। কেউ কারও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলল বা কারও প্রচারণায় কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করল। আমরা এ ধরনের প্রায় ৬০০ অভিযোগ পেয়েছি। এর মধ্যে প্রায় ৪০০-এর মতো অভিযোগ নিয়ে কাজ করেছি। সেগুলোর সমাধানও করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ ছাড়া ‘নির্বাচনি আচরণবিধি’ লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোর বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তাও জানতে চেয়েছেন। আমাদের পদক্ষেপগুলো তাদের জানিয়েছি। কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, রাষ্ট্রদূতরা জানতে চেয়েছেন, সরকার থেকে বা নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটারদের কোনো চাপ দেওয়া হচ্ছে কি না- যার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের ভোট দিতে যেতে হবে। তাদের জানিয়েছি, আমাদের দিক থেকে চাপ সৃষ্টির কোনো কারণ নেই। আমরা ভোটারদের কাছে একটা আবেদন রাখি যেটা দায়িত্বের অংশ। আমরা বলি, আপনারা ভোট কেন্দ্রে এসে অবাধে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সেটা চাপ নয়, এটা হচ্ছে সচেতনতা। সিইসি বলেছেন, নির্বাচন ঘিরে সহিংসতার কোনো আশঙ্কা নেই। ভোটারদের ওপর নির্বাচন কমিশনের কোনো চাপও নেই। বরং ভোটারদের ভোট দিতে কেন্দ্রে আসার জন্য বোঝানো হচ্ছে। তবে যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না তারা নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা দিলে কিংবা ভোটারদের ভোট প্রয়োগে বাধা দিলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারে বলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন। তবে নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে মানা করেছে কি না- সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন বলে কূটনীতিকদের জানিয়েছেন। গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে নির্বাচন কমিশন ভোটারদের ভোট প্রয়োগে উৎসাহিত করছে, কিন্তু তাদের ভোট কেন্দ্রে যেতে কোনো প্রকার জোরারোপ করছে না। রাষ্ট্রদূতরা ভোটের ফলাফল কেমন হতে পারে সে প্রসঙ্গে জানতে চেয়েছেন। এ বিষয়ে আমরা তাদের জানিয়েছি, ফলাফলের ব্যাপারে আমরা একটা অ্যাপ তৈরি করেছি। স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজম্যান্ট অ্যাপ। আমরা তাদের অবহিত করেছি, প্রতিটি কেন্দ্রে পোলিং চলাকালে দুই ঘণ্টা পরপর যেসব তথ্য আমাদের প্রতিটি ইলেকশন সেন্টারে পাওয়া যাবে, তা আপলোড করা হবে। আপলোড করা হলে যে কোনো নাগরিক পৃথিবীর যে কোনো স্থান বা বিদেশ থেকে এক্সেস নিয়ে জানতে পারবেন ভোটের পরিমাণটা কীভাবে হচ্ছে। কূটনৈতিকরা আমাদের এসব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। এদিকে, কূটনীতিকদের ব্রিফিং শেষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ব্রিফিংয়ে কূটনীতিকরা কম প্রশ্ন করেছেন। দু-একজন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি আমার বক্তব্য তাদের বললাম, পাঁচ বছর পর পর ইলেকশন হয়। এমন একটা সুযোগ সব দেশের রাষ্ট্রদূতের হয় না। আমি নিজেও রাষ্ট্রদূত ছিলাম, সুযোগ আসেনি। যেহেতু তারা সুযোগ পেয়েছেন, এই সুযোগটাকে তারা যেন ভালোমতো ব্যবহার করেন। আমি বলেছি, আপনারা আরও প্রশ্ন করতে পারতেন।

এ বিষয়ে তারা জানিয়েছেন, ইসির সঙ্গে তাদের সবসময় যোগাযোগ হচ্ছে। তারা অনেক আপডেটেড, তাই তারা প্রশ্ন কম করেছেন। ব্রিফিংয়ে কূটনীতিকরা আশ্বস্ত হয়েছেন কি না- জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘সেটা তারা বলতে পারবেন। আমরা আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি। তবে ইলেকশন কমিশন যথাসাধ্য বোঝাতে সক্ষম হয়েছে। ভোটারদের ভোটে আনার ক্ষেত্রে চাপ প্রসঙ্গে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, এ ধরনের কোনো চাপ নেই, চাপ দেওয়ার সুযোগও নেই। তবে যারা ভোট বর্জন করেছে, তাদের পক্ষ থেকে ভোট না দেওয়ার জন্য ভোটারদের ওপর একটা চাপ আছে। ভারত ও মার্কিন দূতদের সশরীরে উপস্থিত না থাকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তাদের প্রতিনিধি আসছে। আমরা সবাইকে আমন্ত্রণ করি। আমাদের এখানে যতগুলো দূতাবাস আছে বা যতগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থা আছে। বেশির ভাগ আসছে।

 

 

সর্বশেষ খবর