শনিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে নিবন্ধ

বাংলাদেশে বিফল হচ্ছে বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশে পরাজিত হতে যাচ্ছে বলে এক নিবন্ধে উল্লেখ করেছে ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী এই সংবাদমাধ্যমটি নিবন্ধের শিরোনাম দিয়েছে, ‘বাইডেনের গণতন্ত্র প্রমোশনের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরল বাংলাদেশ’।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের মাত্র তিন দিন আগে বুধবার সদানন্দ ধুমের লেখা নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল। ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউয়ের সাবেক নয়াদিল্লি ব্যুরো প্রধান সদানন্দ ধুমে ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে প্রতি সপ্তাহেই ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে নিবন্ধ লিখে থাকেন। এ সপ্তাহের নিবন্ধে লেখা হয়েছে, ১৭ কোটি মানুষের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের আসন্ন নির্বাচনে টানা চারবারের মতো বিজয়ী হতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে পরাজিত হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের চাপ প্রয়োগমূলক পররাষ্ট্রনীতি। সদানন্দ ধুমে লিখেছেন, ৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যে কোনো নির্বাচিত নারী নেত্রীর চেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন। তার রয়েছে এমন সব অর্জন, যা অনেক উন্নয়নশীল দেশের নেতারাও দাবি করতে পারেন না। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদ দমন করেছেন, বিভিন্ন সময় ফিরে আসা সামরিক শাসনের বিপরীতে জনগণের শাসনের আধিপত্য নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়াও চরম দরিদ্রতা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করে আনা এবং নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, বাইডেন সরকারের অভিযোগ ছিল, বাংলাদেশে বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে হাসিনা সরকার। কিন্তু সেই অভিযোগ এরই মধ্যে ভুল প্রমাণ করেছে শেখ হাসিনার অদম্য নেতৃত্ব। নিবন্ধকার বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠেছে। তবে অর্থনীতির ওপরে বাইডেনের গণতন্ত্র প্রচারকে স্থান দেওয়ার সময় এখনো আসেনি বলেই জো বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি এখানে ব্যর্থ হয়েছে।

বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাস অনেক বেশি উজ্জ্বল বলেও নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। সদানন্দ ধুমের মতে, বাংলাদেশে সবসময়ই স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কিন্তু এমন অনেক দেশকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যাদের রেকর্ড বাংলাদেশের চেয়েও অনেক বেশি খারাপ। নিবন্ধে লেখা হয়েছে, ২০২১ সালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের একটি অপরাধ বিরোধী এবং সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এবারের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নিরঙ্কুশ বিজয়ের ইঙ্গিতই মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।

নিবন্ধকারের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বোঝা উচিত ছিল, কঠোর ভাষা আর আধাআধি মাপকাঠি বাংলাদেশের ওপর প্রভাব ফেলবে না। ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকার পরও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তানকে যেমন পরাজিত করেছে বাংলাদেশ, তেমনি এখন রাশিয়া, চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করে যুক্তরাষ্ট্রের সব চাপকে সমুচিত জবাব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। সর্বোপরি, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র নিয়ে যত সহজে কথা বলে, তাকে তত সফলভাবে প্রয়োগ করতে পারে না বলেও মন্তব্য করা হয়েছে নিবন্ধটিতে।

 

সর্বশেষ খবর