রবিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

সংঘাতের আশঙ্কায় রূপগঞ্জে কঠোর নিরাপত্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজকের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে অন্যতম হটস্পটে পরিণত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনটি। প্রচারণার শুরুর দিন থেকে এই আসনে ঘটেছে একের পর এক সহিংসতার ঘটনা। সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান ভূঁইয়া কেটলি প্রতীক নিয়ে স্থানীয় এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় আসনটিতে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। এতে সংঘাতের আশঙ্কায় আজ পুরো রূপগঞ্জ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে থাকবে বলে নিশ্চিত করেছে প্রশাসন। সহিংসতা, ভোটে বিঘ্ন সৃষ্টি বা ভোটারদের ভোটদানে বাধা দিলে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।

গতকাল সরেজমিন রূপগঞ্জের বিভিন্ন সড়কে সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়। মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশের প্রহরা। সন্দেহভাজন কাউকে দেখলেই তল্লাশি করা হচ্ছিল। এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার আহসান মাহমুদ রাসেল গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট সম্পন্ন করতে আমরা সবাই তৎপর। প্রচণ্ড ইচ্ছা একটা ভালো নির্বাচন করার। ভোটে বিঘ্ন সৃষ্টি বা সহিংসতার চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। রূপগঞ্জজুড়ে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন টিম। ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভায় টহলে আছেন। ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে বিজিবি, আনসার, পুলিশ আছে। পুলিশ আলাদাভাবেও টহল দিচ্ছে। নাশকতা ঠেকাতে ভোট কেন্দ্রগুলোয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারা বসানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত রূপগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক আছে। এখানে অশান্তি সৃষ্টির সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না।

আজকের ভোটে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্রসহ ৯ জন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে তৎপর রয়েছেন নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী, কেটলি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান ভূঁইয়া, তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব ডক্টর তৈমূর আলম খন্দকার, জাতীয় পার্টির মো. সাইফুল ইসলাম ও জাকের পার্টির মো. যোবায়ের আলম। এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে দল থেকে বাধা না থাকায় অনেকগুলো আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় ও ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতারা। রূপগঞ্জ আসনেও মো. শাহজাহান ভূঁইয়া কেটলি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় ঝুঁকিতে পড়েছেন ১৫ বছর ধরে সংসদ সদস্য থাকা বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। স্থানীয়রা বলছেন, জনপ্রিয়তা কমায় গাজী সাহেব টাকা দিয়ে ভোট কিনতে কর্মীবাহিনী নামিয়েছেন। সম্প্রতি গাজীর পক্ষে ভোট কিনতে টাকা বিতরণের বেশ কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এ ছাড়া শাহজাহান ভূঁইয়ার একাধিক নির্বাচনি ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ ও কর্মীসমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এদিকে গতকাল তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের সংবাদ সম্মেলনে আশরাফুজ্জামান ভুঁইয়া নামের তার এক সমর্থক গণমাধ্যমের সামনে জানান, গত শুক্রবার রাতে বরপা এলাকায় গাজীর পক্ষে ভোট দিতে তাকেও টাকা দেওয়া হয়েছে।

নৌকায় ভোট দিতে টাকা পাওয়া অনেকে বলছেন, অনেকেই হয়তো শত্রুতা এড়াতে টাকা নিচ্ছেন কিন্তু ভোট গাজীকে দেবেন না। কারণ, গত ১৫ বছর সংসদ সদস্য থাকাকালে রূপগঞ্জে সাধারণ মানুষের হাজার হাজার বিঘা জমি দখল, মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টার, প্রকৃত আওয়ামী লীগারদের সরিয়ে হাইব্রিডদের মূল্যায়ন, নিজের পরিবারের নামে সব সেতু, স্কুল-কলেজ, কমিউনিটি সেন্টারের নামকরণ, শত শত ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে অবমূল্যায়ন ও নিজস্ব বলয়ের সন্ত্রাসীদের দ্বারা রূপগঞ্জে একক শাসন কায়েম করায় জনপ্রিয়তায় চরম ভাটা পড়েছে গাজীর। শুধু তার থেকে যারা সুবিধা নিয়েছেন, তারা ভোট দিলে রূপগঞ্জে নৌকার ভরাডুবি হবে। পরাজয়ের বার্তা পেয়েছেন বলেই টাকা দিয়ে ভোট কিনতে চাইছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখলে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ভোট কেন্দ্রে হামলাও করাতে পারেন। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক বলেছেন, রূপগঞ্জে ভোট নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। বিজিবি, র‌্যাব, আর্মড পুলিশ, পুলিশের মোবাইল টিম, পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স, ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে তৎপর থাকবে। সুষ্ঠু ভোটে বাধা দিলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

 

সর্বশেষ খবর