সোমবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

গাজীর সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব

রূপগঞ্জে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্ট থাকায় মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলা কেন্দ্র দখল করে ভোট

নিজস্ব প্রতিবেদক

সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় দাউদপুর ইউনিয়নের আসুলিপাড়া গ্রামে ভাতাপ্রাপ্ত মরহুম এক বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালায় বলে জানায় ভুক্তভোগী পরিবার।

মুক্তিযোদ্ধার ছেলে বিপ্লব হাসানের স্ত্রী ঋতু আক্তার প্রতিবেদককে বলেন, আমার শ্বশুর ফরহাদ মিলিটারি ভাতা প্রাপ্ত একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তার অবর্তমানে আমার শাশুড়ি এখন ভাতা পাচ্ছেন। আমার দেবর মেহেদী হাসান সজীব কেটলি প্রতীকে অংশ নেওয়া শাহজাহান ভূঁইয়ার এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। রূপগঞ্জের ভোটে গোলাম দস্তগীর গাজী বিজয়ী হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বাড়িতে এক থেকে ১৫০ সন্ত্রাসী রামদা, চাপাতি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। ঘরের থাই, আসবাবপত্র, হাঁড়ি পাতিল, বাথরুমের ট্যাবসহ পুরো বাড়ি ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। এ সময় আমার বয়বৃদ্ধা শাশুড়ি দেলোয়ারা বেগম আমার এক নবজাতক সন্তানসহ দুই সন্তানকে কোলে নিয়ে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করছিলেন। সে অবস্থায় হামলাকারীরা লাঠি দিয়ে তার দুই হাতে আঘাত করে। এ সময় আমার চার মাসের নবজাতক মেয়ে শিশু আমার শাশুড়ির হাত থেকে ছিটকে মাটিতে পড়ে গুরুতর আহত হয়। শাশুড়ির হাতও জখম হয়।

হামলার শিকার ওই নারী জানান, দাউদপুর ইউনিয়নের আসুলিপাড়ার নুরুন্নেসা স্কুলে তার দেবর মেহেদী হাসান সজীব কেটলি প্রতীকের এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের পূর্বে একাধিকবার নির্বাচন পরবর্তী সময়ে এমন হামলার আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন। তবুও নির্বাচনে হারজিত থাকে, এ বিষয়টি মাথায় রেখে আমার দেবর এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। আমরা এ মুহূর্তে সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

কেন্দ্র দখল করে নৌকায় ভোট : জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে গতকাল ভূতুড়ে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। নয়জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও নৌকা প্রতীক ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্ট ভোট কেন্দ্রে দেখা যায়নি। ভোট কেন্দ্রের আশপাশে ভিড়তে পারেনি অন্য প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা। কেন্দ্রের মধ্যে ঈগল-আলমারির এজেন্ট সেজে নৌকার পক্ষে কাজ করতে দেখা গেছে অনেককে। ভোটের লাইনে ভোটার না থাকলেও কাগজে-কলমে প্রতি ঘণ্টায় হু হু করে বেড়েছে ভোটের সংখ্যা। ভোট হয়ে যাওয়ায় অনেক ভোটার কেন্দ্র থেকে ফিরে গেছেন। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিন টিমের সরেজমিন পর্যবেক্ষণে রূপগঞ্জে ভোটের এমন চিত্র উঠে এসেছে।  সরেজমিনে জানা যায়, ভোট গ্রহণ শুরুর পরপরই বিভিন্ন কেন্দ্র দখলে নেয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর সমর্থকরা। মারধর করে বের করে দেওয়া হয় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আলহাজ শাহজাহান ভূঁইয়ার এজেন্টদের। গাজীর ছেলে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী গোলাম মূর্তজা ও আলমারি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমানের এজেন্টরা কাজ করে নৌকার পক্ষে। মারধর করে বের করে দেওয়া হয় তৃণমূল বিএনপি তৈমূর আলম খন্দকারসহ অন্য প্রার্থীর এজেন্টদের। প্রকাশ্যে অন্য প্রার্থীর সমর্থন করা ভোটারদের ঠেকাতে প্রতিটা ভোট কেন্দ্রের বাইরে মহড়ায় ছিলেন বিপুল সংখ্যক কিশোর-তরুণ। এ ছাড়া গোলাম দস্তগীর গাজীর এপিএস এমদাদকে বিভিন্ন কেন্দ্রে দলবল নিয়ে মহড়া দিতে  দেখা গেছে। চনপাড়ার বিভিন্ন কেন্দ্রে নারী এজেন্টদের শারীরিকভাবে হেনস্তার অভিযোগও পাওয়া গেছে। গতকাল সকাল ১০টার দিকে সোনালি আঁশ প্রতীকের সমর্থক চনপাড়ার ফাতেমা বলেন, সকালবেলায় চনপাড়ার সব কেন্দ্রে আমি এজেন্ট নিয়ে যাই। কাউকে থাকতে দেয়নি নৌকার সমর্থকরা। নারী এজেন্টদের ওড়না, বোরকা টেনে ছিঁড়ে ফেলেছে। আমাকে গায়েব করে ফেলার হুমকি দিয়েছে। এক সপ্তাহ আগে একবার বাড়িতে গিয়েও হুমকি দিয়ে এসেছিল। এ ছাড়া পুরুষ এজেন্টদের গতকালই ভোট কেন্দ্রে না আসতে বলেছিল। তবুও যারা এসেছিল তাদের মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছে।

তারাবো পাট গবেষণা উপকেন্দ্রের ১৯ নম্বর ভোট কেন্দ্রে গিয়েও দেখা যায় গোলাম দস্তগীর গাজীর লোকজন নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ভোট কেন্দ্রের আশপাশের পুরো এলাকা। অন্য কোনো প্রার্থীর নির্বাচনি কর্মী-সমর্থক চোখে পড়েনি। কেন্দ্রের বাইরে ছিল না অন্য কোনো প্রার্থীর স্লিপ বিতরণ বুথও। ওই কেন্দ্রের ৮ নম্বর বুথে আলমারি ও ঈগল প্রতীকের এজেন্ট সেজে ১৬ জনকে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করতে দেখা যায়। এসব এজেন্ট নামধারীর অনেকের কোনো কার্ডও ছিল না। নারী ভোটারদের দিয়ে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ মিলেছে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে। কাঞ্চন ভারতচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুজন নারী ভোটারকে একসঙ্গে সিল মারতে দেখা গেছে। এই বুথে নৌকা ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্ট ছিল না।

সর্বশেষ খবর