শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
২১ দেশের পর্যবেক্ষকদের সংবাদ সম্মেলন

নির্বাচন গ্রহণযোগ্য আন্তর্জাতিক মানের

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরাপদ’ ছিল বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা বিদেশিরা। গতকাল দুটি পৃথক সংবাদ সম্মেলনে ২১ দেশের এসব পর্যবেক্ষক জানিয়েছেন, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক মানের হয়েছে। সুষ্ঠু ভোটের পথে ভোটারদের প্রতি কোনো হুমকি দেখেননি তারা। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে তারা এসব পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করেন। সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে নির্বাচনি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সাতটি দেশের উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাবেক কংগ্রেসম্যান এবং সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধিদল। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও চিফ অব স্টাফের সাবেক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং আমেরিকান গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিসের সিইও আলেকজান্ডার বার্টন গ্রে, মার্কিন কংগ্রেসম্যান জিম বেটস, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য    শাওকেট মুসেলমানে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ওএসসিইর সার্টিফাইড নির্বাচন পর্যবেক্ষক টেরি এল ইসলে, ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ইকোনমিক ফোরামের কমিউনিকেশন ডিরেক্টর ক্রিস্টোফার জন ব্ল্যাকবার্ন। এ ছাড়া আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, নরওয়ে জাপানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আলেকজান্ডার বার্টন গ্রে বলেন, আমরা ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে এসেছি। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে আমরা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় মোট ২০টি ভোট কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছি। দেখেছি মানুষ তাদের ভোটাধিকারের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক যা বিশ্বের অন্য দেশে খুব কমই পাওয়া যায়। বিশ্বের অনেক দেশ আছে যারা ভোট না দেওয়ার জন্য জরিমানা আরোপ করে। অনেক দেশ ভোটকে উৎসাহিত করার জন্য অতিরিক্ত নাগরিক সুবিধা দেয়। কিন্তু বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভোট দেওয়ার আগ্রহ ও উৎসাহ রয়েছে যা আমরা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক বলে মনে করি। তিনি আরও বলেন, কিছু রাজনৈতিক দলের নির্বাচনবিরোধী প্রচারণা এবং একটি বড় রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ না থাকায় নির্বাচনের উৎসবমুখর পরিবেশে কিছুটা প্রভাব ফেলেছে বলে মনে হয়। সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিলে পরিবেশ আরও সুন্দর ও আনন্দময় হতো।

আলেকজান্ডার বার্টন গ্রে বলেন, আমরা যেসব কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছি সেখানে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে আমরা দেখতে পেয়েছি, ভোট দেওয়ার পথে তাদের কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী বা দল দ্বারা ভোটারদের ভয়ভীতির কোনো হুমকি দেখা যায়নি। এটি গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়। সরকারি প্রার্থী, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের সমর্থকদের মধ্যে কিছু বিচ্ছিন্ন ও অপ্রত্যাশিত সংঘর্ষের কথা শুনেছি। কিন্তু সার্বিক নির্বাচনি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে সেসব ঘটনা খুবই নগণ্য।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সব পর্যবেক্ষক একমত প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে এবং সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারা জানান, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে পর্যবেক্ষক দলের পক্ষ থেকে। এদিকে, দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অপর এক সংবাদ সম্মেলনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইরাক, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত, নেপাল ও মালদ্বীপের পর্যবেক্ষকরা। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউএসএআইডির দক্ষিণ এশিয়ার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রশাসক ও এশিয়া টাইমসের বিশেষ সংবাদদাতা জাভিয়ের পিয়েড্রা প্রমুখ। নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে অচল করে দিতে চালানো কর্মকাণ্ডের প্রতি নিন্দা প্রকাশ করে পর্যবেক্ষকরা এ ধরনের সহিংস নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। শ্রীলঙ্কার সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আলী জহির বলেন, আমরা ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে এসেছি। নির্বাচনের আগের দিন ও নির্বাচনের দিন নির্বাচনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছি। ৭ জানুয়ারি আমরা খুব ভোর থেকে ঢাকা সিটি ও আশপাশের প্রায় ৩০টি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। আমরা দেখেছি মানুষ লম্বা লাইনে ভোট দিচ্ছেন। এর মধ্যে নারী ও নতুন ভোটারদের উপস্থিতি আমাদের নজর কেড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা বলতে পারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর হয়েছে।

আলী জহির আরও বলেন, আমরা আসার পর জানতে পারি, ঢাকায় কিছু নির্বাচনবিরোধীরা একটি ট্রেনে আগুন দিয়েছে। আমরা ভোট কেন্দ্র, ব্যক্তিগত ও সরকারি যানবাহনে আগুন লাগানোর কিছু খবরও শুনেছি। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অচল করার জন্য এ ধরনের কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা জানাই। যারা এ ধরনের সহিংস নাশকতার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

 

 

সর্বশেষ খবর