বৃহস্পতিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
বিশিষ্টজনদের অভিমত

ক্লিন ইমেজ বিবেচনায় মন্ত্রীদের দফতর বণ্টনের প্রত্যাশা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মন্ত্রিসভায় কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি, সন্ত্রাস ও মাদক ব্যবসায় আশ্রয়দানকারী, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত, হলফনামায় বিশাল সম্পদ দেখানো ব্যক্তি, ব্যাংক লুটে সহায়তাকারী ও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থদের দেখতে চান না দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। তাদের মতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দেশ চালাতে ইতিবাচক ইমেজের রাজনীতিবিদদের মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিলে সরকার আরও গতিশীল হবে। প্রতিষ্ঠিত হবে স্মার্ট বাংলাদেশ, বাস্তবায়ন হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, আদর্শ ও শেখ হাসিনার দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা। তাদের মতে, এই সরকারকে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। সেই দিক বিবেচনা করেই মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করা উচিত।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ বারের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক বেশি। যারা শিক্ষিত, ক্লিন ইমেজের অধিকারী, দেশের জন্য ত্যাগ করার মানসিকতা রয়েছে ও দেশপ্রেমিক- তাদের যথাযোগ্য মর্যাদায় স্থান দেওয়া উচিত। আমাদের লক্ষ্য এখন স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। যারা দক্ষ, বিতর্কমুক্ত আর স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য অবদান রাখতে পারবেন তাদেরই মন্ত্রিসভায় স্থান দিতে হবে। কোনো ব্যাংক লুটেরা, অর্থ পাচারকারীকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে না বলেই প্রত্যাশা করি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এস এম এ ফায়েজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ক্লিন ইমেজ, সমাজে মর্যাদাসম্পন্ন, দক্ষ, দেশকে এগিয়ে নিতে অগ্রগামী ভূমিকা রাখবে এমন ব্যক্তিকে জনগণ মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়। দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ব্যক্তিকে মন্ত্রী হিসেবে বাছাই করা হোক। তরুণদের প্রাণচাঞ্চল্য এবং প্রবীণদের অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করা উচিত। পাশাপাশি যারা মন্ত্রী হবেন তাদেরও মনে রাখতে হবে, দেশের মানুষ তাদের অনুসরণ করে, তাদের কথাবার্তা খেয়াল করে। তাই সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা বজায় থাকে এমন আচরণ তারা করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের রাজনীতি বিরাজনীতিকরণ হয়ে গেছে। ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং অনেক ক্ষেত্রে বিতর্কিত ব্যক্তিরা নির্বাচনি অঙ্গনে প্রবেশ করেছেন। এসব বিতর্কিত ব্যক্তিরা আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গন কলুষিত করছে। এ অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটানো দরকার। এ জন্য স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের লোক দরকার। সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত ব্যক্তিদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করলে অনেক সমস্যা সমাধান হবে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ মুহূর্তে বাংলাদেশ বিরাট একটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়াতে হলে বিদেশি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। এগুলো ব্যবস্থা করার জন্য যোগ্য ও দক্ষ মন্ত্রী লাগবে। গত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা ও মেট্রিকসগুলোর হিসেবে প্রধানমন্ত্রী যদি দুর্নীতিবাজদের বাদ দেন, অযোগ্যদের না রাখেন, দূরদর্শী ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা নেই এমন লোকদের বাদ দিয়ে দেন এবং যোগ্যদের মন্ত্রিসভায় নেন, তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবেন। যে লোক কথা বলতে পারে না, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, তাকে কেন মন্ত্রী বানাতে হবে? এ মন্ত্রিসভা হওয়ার পর অন্যান্য জায়গাও পরিবর্তন করতে হবে। সব জায়গায় সঠিক লোক নির্বাচন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দফতর চালানোর জন্য যারা অভিজ্ঞ তাদের দায়িত্ব দিতে হবে। এটা করা গেলেই শেখ হাসিনার যে স্বপ্ন সেটা ২০৪১ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজরা মন্ত্রিসভায় আসলে উন্নয়নের বদলে দেশ আরও পিছিয়ে যাবে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা চাই যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নেই, ব্যাংক লুটের অভিযোগ নেই, মাস্তানির অভিযোগ নেই, তারা মন্ত্রিসভায় আসুক। যারা এলাকার মানুষের কথা শোনেন, যাদের জনসেবা করার রেকর্ড রয়েছে, ক্লিন ইমেজ রয়েছে, তাদেরই মন্ত্রিসভায় আনা উচিত। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, যাদের যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হবে, তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উপযুক্ত হতে হবে। কোনো অসুস্থ, জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিকে মন্ত্রিসভায় আনা হবে না- এটা দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে। যারা অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে তাদেরই নতুন মন্ত্রিসভায় আনতে হবে। একই সঙ্গে যাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও সাম্প্রদায়িকতার রেকর্ড আছে, তাদেরও বাদ দিতে হবে। বিচারপতি মানিক বলেন, সাধারণ মানুষের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা অনেক। এবারের নির্বাচনে এটা আবারও প্রমাণ হয়েছে। এখন তিনি যদি, বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেন, তাহলে এই জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে। সঙ্গে তাঁর দল আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তাও বাড়বে। সাবেক আইনমন্ত্রী প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি প্রত্যাশা করি নতুন মন্ত্রিসভায় কোনো বিতর্কিতদের রাখা হবে না। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-ব্যাংক লুটের অভিযোগ রয়েছে, তাদের বাইরে রাখা হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের একটি বিতর্কমুক্ত ভালো মন্ত্রিসভা উপহার দেবেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, সীমান্ত এলাকায় অনেক রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় প্রশ্রয় দেওয়া, মাদকব্যবসায় জড়ানোর অভিযোগ আছে। যাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আছে তাদের মন্ত্রিসভায় স্থান না দেওয়ার দাবি জানাই। রাজনীতিতে ত্যাগী, সৎ, নিবেদিত ব্যক্তিদের কথা বলা হয়। কিন্তু মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে শুধু এগুলোই যোগ্যতা হতে পারে না। এসব যোগ্যতা থাকতেই হবে, বরং এসবের পাশাপাশি মন্ত্রণালয় চালানোর জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকতে হবে। আমাদের লক্ষ্য এখন স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করা। তাই স্মার্ট বাংলাদেশের মন্ত্রিসভাও স্মার্ট হতে হবে।

অনেক মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা না থাকায় জনগণের ভোগান্তি বেড়েছে। যারা এর আগে মন্ত্রণালয়ে কোনো গতি আনতে পারেনি, আগের প্রকল্প শেষ করতে পারেননি, যারা এলাকা থেকে জনবিচ্ছিন্ন ছিলেন, দেশের কল্যাণে তাদের বাদ দিয়ে স্মার্ট ও পরীক্ষিতদের মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর