শুক্রবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

নতুন মেয়াদে যাত্রা শুরু

♦ প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীদের শপথ ♦ মন্ত্রণালয় বণ্টনে চমক ♦ অর্থে মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্রে হাছান শিক্ষায় নওফেল, স্বাস্থ্যে সামন্ত, জনপ্রশাসনে ফরহাদ, তথ্যে আরাফাত ও বাণিজ্যে টিটু

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন মেয়াদে যাত্রা শুরু

বঙ্গভবনে গতকাল শপথ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -পিআইডি

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৩৭ সদস্যের নবীন-প্রবীণের মন্ত্রিসভা গতকাল শপথ নিয়েছে। সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে টানা চতুর্থবার এবং সরকারপ্রধান হিসেবে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান।

পরে দুই দফায় প্রথমে ২৫ জন মন্ত্রী, এরপর ১১ জন প্রতিমন্ত্রী শপথ গ্রহণ করেন। তাদের শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। শপথ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে যাত্রা শুরু করল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা চার মেয়াদের সরকার।

এবারের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রণালয় বণ্টনে চমক দেখা গেছে। নবীন-প্রবীণের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে মন্ত্রিসভায়। দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের রাখা হয়েছে। আগের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী সহ ২৮ জন। গতকাল মন্ত্রিসভার শপথ শেষে রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দায়িত্ব বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। দায়িত্ব বণ্টনে বড় চমক দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রুলস অব বিজনেস অনুসারে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দায়িত্ব বণ্টন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নতুন সরকারের মন্ত্রীদের শপথ বাক্য পাঠ করাতে বঙ্গভবন বর্ণাঢ্য সাজে সাজানো হয়। দরবার হলে সহস্রাধিকের বেশি আমন্ত্রিত অতিথিদের বসার ব্যবস্থা ছিল। কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় শপথ অনুষ্ঠান। পরে সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। পরে অতিথিদের চা চক্রে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

গতকাল সন্ধ্যা ৭টার কিছু আগে দরবার হলে পৌঁছান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছোট বোন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা। এরপর দরবার হলে তারা আসন গ্রহণ করেন। ঘড়ির কাঁটায় ৭টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় শপথ অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী এরপর মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা শপথ গ্রহণ করেন এবং গেজেট বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

প্রধানমন্ত্রীর শপথ শেষে নিজ আসনে গিয়ে ছোট বোন শেখ রেহানা ও ছোট বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিকে জড়িরে ধরেন, আদর করেন। প্রথম সারিতে সরকার প্রধানের একপাশে ছিলেন শেখ রেহানা এবং অন্যপাশে ছিলেন রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রেবেকা সুলতানা। পরে নিজ আসনে বসে তিনি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ গ্রহণ দেখেন। শপথ শেষে মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া নেতাদের কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সালাম করতে দেখা যায়।

দরবার হলে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দীন, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী (বীরউত্তম), ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সভাপতি দিলীপ বড়ুয়া, স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, তিন বাহিনীর প্রধানরা, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মন্টিটাস্কি, ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মা, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনসহ অন্যান্য কূটনীতিক, সিনিয়র সাংবাদিক, সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা। বঙ্গভবনের বাইরেও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শুভেচ্ছা জানাতে বহু মানুষ অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে নবনিযুক্ত ২৫ মন্ত্রীকে শপথবাক্য পাঠ করান   -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কে কোন দায়িত্ব পেলেন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে রেখেছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। মন্ত্রীদের মধ্যে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ওবায়দুল কাদের, অর্থ মন্ত্রণালয় আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আনিসুল হক, শিল্প মন্ত্রণালয় নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ড. মো. হাছান মাহমুদ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় জাহাঙ্গীর কবির নানক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আসাদুজ্জামান খান, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় মো. তাজুল ইসলাম, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় মুহাম্মদ ফারুক খান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ডা. দীপু মনি, খাদ্য মন্ত্রণালয় সাধন চন্দ্র মজুমদার, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় আবদুস সালাম, ধর্ম মন্ত্রণালয় মো. ফরিদুল হক খান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, ভূমি মন্ত্রণালয় নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মো. আবদুর রহমান, কৃষি মন্ত্রণালয় মো. আবদুস শহীদ, রেলপথ মন্ত্রণালয় মো. জিল্লুল হাকিম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ফরহাদ হোসেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় নাজমুল হাসান পাপন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সাবের হোসেন চৌধুরী এবং মহিবুল হাসান চৌধুরীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইয়াফেস ওসমানকে (টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং সামন্ত লাল সেনকে (টেকনোক্র্যাট) স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় দেওয়া হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রীরা যেসব মন্ত্রালয়ের দায়িত্ব পেলেন : ১১ প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ নসরুল হামিদ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জুনাইদ আহমেদ পলক, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সিমিন হোসেন (রিমি), পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় জাহিদ ফারুক, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় মহিববুর রহমান, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় মোহাম্মদ আলী আরাফাত, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শফিকুর রহমান চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় রুমানা আলী এবং আহসানুল ইসলামকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

যা দিয়ে আপ্যায়ন করা হলো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও অতিথিদের : বঙ্গভবনে মন্ত্রিসভার সদস্যদের আপ্যায়নে নানা খাবারের আয়োজন রাখা হয়। বরাবরের মতো এবারও আনা হয়েছে বৈচিত্র্য। নতুন মন্ত্রীদের আপ্যায়নে রাখা হয় শিককাবাব, ফিশ ফিঙ্গার ও বাকলাভা। মাংস ও সবজি জাতীয় খাবারে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ফলেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। খাবার হিসেবে দেওয়া হয় মাটন শিককাবাব, চিকেন সাসলিক, ভেটকি মাছের ফিশ ফিঙ্গার। এ ছাড়া বয়েল্ড ভেজিটেবলসের সঙ্গে দেওয়া হয় মাশরুম, পনির সমুচা।

মিষ্টিমুখ করানোরও আয়োজন ছিল। পরিবেশন করা হয় পাটিসাপটা পিঠার পাশাপাশি মিষ্টি-বাকলাভা। এ ছাড়া কমলা, আপেল, আঙুর দিয়ে সাজানো ফলের ঝুড়িও ছিল আপ্যায়নে। বঙ্গভবনের সবুজ লনে সাজানো শামিয়ানার নিচে চা আর কফিতে শেষ সময়ে আড্ডা জমে নতুন মন্ত্রী ও আমন্ত্রিত অতিথিদের।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর