রবিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

মুখোমুখি দুই পক্ষ, বিশেষ সভা ডেকেছেন বিক্ষুব্ধরা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

মুখোমুখি দুই পক্ষ, বিশেষ সভা ডেকেছেন বিক্ষুব্ধরা

নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টিতে অস্থিরতা আরও বেড়েছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হওয়া প্রার্থীদের অনেকেই পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন। মাত্র ২৬ আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা, প্রার্থীদের খোঁজখবর

না নেওয়া, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আর্থিক সুবিধা না দেওয়াসহ বিতর্কিত ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়াসহ নানান অভিযোগে বিক্ষোভে নেমেছেন। বিক্ষুব্ধ নেতারা আজ সকাল ১১টায় রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলের বিশেষ সভা ডেকেছেন। অন্যদিকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে, কেউ যেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের আহ্বান ছাড়া কোনো দলীয় বৈঠকে অংশ না নেন। শুক্রবার ক্ষুব্ধরা আজকের বিশেষ সভা ডাকার পর ওইদিনই পার্টির হাইকমান্ডের নির্দেশে এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

এদিকে গতকাল পার্টির কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন বিক্ষুব্ধরা। আর পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী অফিসে বৈঠক করেন জি এম কাদেরের অনুসারীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব মিলিয়ে নির্বাচন-পরবর্তী অস্থিরতায় আবারও ভাঙনের মুখে পড়েছে প্রয়াত এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টি।

জানা গেছে, নির্বাচন-পরবর্তী এই বিক্ষোভ আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে পার্টির হাইকমান্ড। পার্টির কো-চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়কে দলের সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বহিষ্কারের তালিকায় রয়েছেন আরও অন্তত ১০ কেন্দ্রীয় নেতা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে শীর্ষ নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হওয়া প্রার্থী ও নেতারা বলছেন, তারা ইতোমধ্যে সারা দেশের জাপার নেতা ও প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হওয়া আসনে যারা হেরেছেন, তারাও আজকের বৈঠকে যোগ দেবেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বাইরে কেন্দ্রীয়, মহানগর, জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারাও এই বৈঠকে অংশ নেবেন। তারা জানিয়েছেন, সবার মতামতের ভিত্তিতে নতুন করে জাতীয় পার্টি গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জানা গেছে, পুরো বিষয়টি দেখভাল করছেন দলের কো-চেয়ারম্যান ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শফিকুল ইসলাম সেন্টু, আরেক অতিরিক্ত মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা। জাতীয় পার্টির রাজধানীকেন্দ্রিক বড় কর্মসূচিতে এই তিন নেতাই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন, সমাবেশে বেশি নেতা-কর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করেন।

নির্বাচনের পর জাপা চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে গত বুধবার দলের বনানী কার্যালয় ঘেরাও করেন ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। পুলিশের বাধায় তারা কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকতে না পেরে বাইরে মূল গেটের সামনের রাস্তায় তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।

আজকের বিশেষ সভা সফল করতে গতকাল দুপুরে পার্টির কাকরাইল কার্যালয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিভিন্ন প্রার্থী ছাড়াও দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন। সভা প্রসঙ্গে কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, এ সভা কারও বিরুদ্ধে নয়। সারা দেশের দলের প্রার্থীরা এ সভার আয়োজন করেছেন। কোন কারণে প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন তা তারা তুলে ধরবেন।

বনানী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা বলেছেন, জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে যারাই ষড়যন্ত্র করেছে, তারাই ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। আবারও যারা ষড়যন্ত্র করবে তারাও অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জহিরুল ইসলাম জহির প্রমুখ।

সূত্রে জানা গেছে, জি এম কাদেরের ওপর বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে রওশনপন্থিরাও যোগাযোগ রাখছেন। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রওশনপন্থিদের কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। নিজের অনুসারী ৬০ জনকে মনোনয়ন দিতে জি এম কাদেরের কাছে তালিকা পাঠিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। সেই তালিকায় তিনজনের বাইরে আর কারও ব্যাপারে সম্মতি দেননি জি এম কাদের। এ কারণে শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান বেগম রওশন। তার অনুসারীদের মধ্যে তিনজন স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করলেও বিজয়ী হতে পারেননি।

জাপার পরাজিত প্রার্থীরা বলছেন, দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা, ব্যক্তিগত স্বার্থান্ধ ও স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে সমঝোতার বেশির ভাগ আসনে ভরাডুবি হয়েছে দলের প্রার্থীদের। এর বাইরে বাদবাকি অন্য কোনো আসনে দলের প্রার্থীরা বিজয়ী হতে পারেননি। নির্বাচনের দিন পর্যন্ত ৭৭ জন প্রার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে সরে দাঁড়িয়েছেন। এর বাইরে অনেকেই নীরবে নির্বাচনি মাঠ ছেড়েছেন। মূলত এসব কারণেই দলে নতুন করে বিদ্রোহ শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের ২৬ আসনে ছাড় পাওয়া ১১টিতে বিজয়ী হয় জাতীয় পার্টি।

 

 

সর্বশেষ খবর