রবিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

নির্বাচন নয় এটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট

শামীম আহমেদ

নির্বাচন নয় এটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-এর সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, মন্ত্রিত্ব-এমপিগিরি এখানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা। তাই ক্ষমতায় থাকতে, নির্বাচনে জিততে এত মরিয়া সবাই। তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। এটা ছিল বিয়ের আসর বা বিপিএল আয়োজনের মতো একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। নিজেদের মধ্যে নির্বাচন করে নিজেরা জয়ী হয়েছেন। পছন্দ করার মতো বিকল্প না থাকলে তাকে নির্বাচন বলার সুযোগ নেই। সেই বিবেচনায় নির্বাচনটাও ছিল অবৈধ। সেই ফলাফলের ভিত্তিতে গঠিত সরকারও প্রশ্নবিদ্ধ। দুই দিন আগে বা পরে এই সরকারের পতন হবেই। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি এ মূল্যায়ন করেন।

বামপন্থি এ বর্ষীয়ান নেতা বলেন, আমি মনে করি, দেশ একটা মহাসংকটে ছিল, ৭ জানুয়ারির পর সেই সংকট আরও গভীর হয়েছে। আমাদের দেশে লুটপাটের অর্থনীতি চলছে। লুটপাটের অর্থনীতি, লুটপাটের রাজনীতির জন্ম দিয়েছে। এ কারণেই রাজনীতিতে এত অশান্তি, হানাহানি। নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামায় দেখা গেছে, কারও কারও সম্পদ ১৩০ গুণ বেড়েছে। বাংলাদেশে কোন ব্যবসায় পাঁচ বছরে সম্পদের পরিমাণ ৫-৬ গুণের বেশি বাড়ানো যাবে? অর্থাৎ এখানে মন্ত্রিত্ব, এমপিগিরি সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা। এ ব্যবসায় আগে দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল। এখন একটা গোষ্ঠী। তাতেও শান্তি হবে না। নিজেদের মধ্যে নির্বাচনেই তো বেশ কয়েকজন মারা গেল। এখনো মারামারি চলছে। ক্ষমতাসীন দলের মধ্যেই বিভিন্ন গ্রুপে মারামারি। ক্ষমতায় গেলেই অঢেল টাকার মালিক হওয়া যায়, এ কারণেই এত সংঘাত!

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই তারা এখন জনগণের সমর্থন ছাড়াই বিভিন্ন পন্থায় ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছে। এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বাংলাদেশের ওপর নানা চাপ প্রয়োগ করছে। মুখে তারা অবাধ নির্বাচন চাওয়ার কথা বললেও তাদের আসল এজেন্ডা হচ্ছে আমেরিকা তাদের সামরিক সুবিধা বাড়াতে বাংলাদেশকে কাজে লাগাতে চায় এবং বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর তাদের নজর রয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষমতার হাতবদল হবে দুই পক্ষের ভিতরে। এখানে দুই পক্ষই একই দেশি-বিদেশি শোষক গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করবে। সেই জায়গাটায় এবার গোলমাল লেগে গেছে। দুই পক্ষকে বাধ্য সন্তানের মতো রাজি করাতে পারেনি। একসময় বিএনপি চেষ্টা করেছিল চিরদিনের জন্য ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থা করতে। ব্যর্থ হয়েছে। আওয়ামী লীগ এবার নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করল। তারা এখন বলছে উন্নয়নের জন্য স্থিতিশীলতা দরকার। আর স্থিতিশীলতার জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা দরকার। সাংঘাতিক কথা! সরকারের ধারাবাহিকতা যদি উন্নয়নের জন্য অত্যাবশ্যকীয় বলে ঘোষণা করা হয় এবং সেই অনুযায়ী রাষ্ট্রকে সাজানো হয়, অর্থাৎ এখানে একই দলের সরকার চিরদিন স্থায়ী হবে।

সিপিবির সাবেক এই সভাপতি বলেন, নির্বাচন মানে দশটা জিনিস থেকে একটাকে পছন্দ করে নেওয়া। কিন্তু সবাই জানত ৭ তারিখে ভোট দিলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাবে, না দিলেও তারা যাবে। এটাকে নির্বাচন বলার সুযোগ নেই। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। ভোটের মাধ্যমে সেই মালিকানার প্রয়োগ হয়। জনগণ সেই মালিকানা প্রয়োগ করে পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারল কোথায়? এই গণবিরোধী শক্তির মোকাবিলা করতে জনগণকে মাঠে নামতে হবে। প্রগতিশীল শক্তিগুলো একত্রিত হলে লুটেরা গোষ্ঠীগুলো ধারেকাছেই ঘেঁষতে পারবে না।

 

সর্বশেষ খবর