মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
খালেকুজ্জামান

স্বস্তিতে নেই সরকার

শামীম আহমেদ

স্বস্তিতে নেই সরকার

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান বলেছেন, একতরফা প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরও সরকার স্বস্তিতে নেই। কারণ নির্বাচনের আগে থেকেই যে রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক সংকট, ডলার সংকট, রিজার্ভ স্বল্পতা, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, তারল্য সংকট এবং পূর্ব-পশ্চিম সব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় অর্থাৎ ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি রক্ষা কঠিন হয়ে পড়েছিল, তা আরও বাড়তে পারে। এখন রাষ্ট্র সরকারের সামনে উপরোক্ত সংকট মোকাবিলাই বড় চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ছাড়া কঠিন হবে। নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি এসব কথা বলেন। খালেকুজ্জামান বলেন, একটা অন্যায্য কাজকে কলা কৌশলে সম্পন্ন করতে পারলেই তা ন্যায্যতা পায় না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নামে এবারে তাই করা হয়েছে। এর আগে দেশে এগারোটা নির্বাচন হয়েছে। শুরু থেকে ক্রমাগত নিম্নগামিতার ধাপের পর ধাপ পেরিয়ে শেষ ধাপে এসে ঠেকেছে। এতে শাসকগোষ্ঠীর গদি রক্ষা পেলেও নীতি রক্ষা পায়নি। রাজনীতিকে যারা খেলা বানায়, বাস্তবে তারা রং তামাশা দেখাবার বাজিকরে পরিণত হয়। রাজনীতি সমাজ পরিচালনার নিয়ামক শক্তি। অর্থাৎ, ইঞ্জিন যেমন করে গাড়ি টেনে নিয়ে যায়, রাজনীতি তেমনি সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাই রাজনীতিকে খেলায় পরিণত করা চলে না। আর গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান শাসকদের বাছাই করা নীলনকশার অনুমোদন লাভে পরিণত হয়। এবার ?‘আমি আর ডামি’-এর ছক কার্যকর করা হয়েছে। এতে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতার নবায়ন ও সম্প্রসারণ হয়তো করা গেছে, যদিও তা নিশ্চিত কি না এ বিষয়ে শাসক দল সংশয়মুক্ত হতে পারছে না। নির্বাচনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নির্বাচন শুধু গণতন্ত্রের পথ রচনাই করে না, স্বৈরতন্ত্র ফ্যাসিবাদী শাসন পাকাপোক্ত করার জমিও তৈরি করতে পারে। জার্মানি, ইতালিতে নির্বাচন সে দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। এবারে অবিশ্বাস্য রকম দ্রুততার সঙ্গে সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান, মন্ত্রিসভা গঠনের ঘটনায় বোঝা যায় একতরফা প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরও সরকার স্বস্তিতে নাই। কারণ নির্বাচনের আগে থেকেই যে রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক সংকট, ডলার সংকট, রিজার্ভ স্বল্পতা, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, তারল্য সংকট এবং পূর্ব-পশ্চিম সব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় অর্থাৎ ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি রক্ষা কঠিন হয়ে পড়েছিল তা আরও বাড়তে পারে। এখন রাষ্ট্র সরকারের সামনে উপরোক্ত সংকট মোকাবিলাই বড় চ্যালেঞ্জ, যা মোকাবিলা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ছাড়া কঠিন হবে।

তিনি বলেন, ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশকে ঘিরে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি নিজ নিজ স্বার্থে তৎপর রয়েছে। একদিকে চীন, রাশিয়া ও ভারত সরকারের পক্ষে, অন্যদিকে আমেরিকা, ইউরোপসহ পশ্চিমা শক্তি বাহ্যিকভাবে সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। গত ৫৩ বছরেও শাসক শ্রেণির গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ব্যর্থ হওয়া এবং শাসকদের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির ফলেই সাম্রাজ্যবাদীরা আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাকগলানোর সুযোগ পাচ্ছে। দেশে গণতন্ত্রহীনতা, ভোটাধিকার না থাকা, গণবিচ্ছিন্ন দুর্বল সরকার ক্ষমতায় থাকলেই সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তি শাসকদের ক্ষমতালিপ্সাকে কাজে লাগিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিলে তৎপর থাকে। প্রবীণ এই বাম রাজনীতিবিদ বলেন, দেশের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের অবসান ও সাম্রাজ্যবাদী অপতৎপরতা রুখতে আমাদের দেশে এখন এমন এক গণজাগরণ প্রয়োজন, যা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা ও নীতি আদর্শের ওপর দাঁড়াবে। জনগণ ও যুবশক্তি নতুন পথের দিশা পাবে। সে পথ দেখানোই এখন সময়ের দাবি। আর এই গণজাগরণ সৃষ্টি করা শাসক শ্রেণির রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে সম্ভব না, এ জন্য বাম গণতান্ত্রিক শক্তির নেতৃত্বে বিকল্প গড়ে তুলে শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষ ও মধ্যবিত্ত জনতার মিলিত শক্তিতে গণতন্ত্র, ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর