বুধবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

নির্বাচন বাতিলের চেষ্টা এখনো চলছে : প্রধানমন্ত্রী

হারার ভয়ে বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, আলো ঝলমল নির্বাচন বাদ দিয়ে তারা অন্ধকারের গলিপথে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন বাতিলের চেষ্টা এখনো চলছে : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক হয়েছে। হারার ভয়ে বিএনপি নির্বাচন করেনি। তাদের চক্রান্ত শেষ হয়নি, নির্বাচন বাতিলের চেষ্টা এখনো চলছে। গতকাল গণভবনে প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সাক্ষাতে ২৯ দেশের প্রবাসীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামসহ যে কোনো আন্দোলনে প্রবাসীদের অবদান আছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের আয়ের বড় উৎস। দেশে গণতন্ত্রের ক্ষেত্রেও প্রবাসীদের অনেক অবদান আছে। প্রবাসীরা আমাদের স্বাধীনতা-সংগ্রামসহ প্রতিটি আন্দোলনে অবদান রেখেছেন। যখন বাংলাদেশে মার্শাল ল জারি করা হয়েছিল, আমরা কাজ করতে পারছিলাম না, তখন প্রবাসীরা প্রতিবাদ জানিয়ে জনমত সৃষ্টি করেন। এটি আমাদের জন্য বিরাট শক্তি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মামলার বিবরণ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আমার ছেলের বউ ও মেয়ের কাছে ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দিয়েছে। আমি তাদের কাছে মাফ চেয়ে রওনা করেছিলাম মামলা মোকাবিলা করতে। সেখানেও আমাকে বাধা দিয়েছে। আমাকে হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সেটি বিশ্বের ১৫৬টি পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছিল। যে কারণে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা পেয়েছিলাম। ওই সময়ে প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতারা আমার পাশে ছিলেন। আপনাদের অবদান গণতন্ত্রের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী প্রবাসীদের প্রতি বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান জানান। অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তারা যদি অনলাইনে ব্যাংকিংয়ের সুযোগ নিয়ে টাকাটা পাঠায় তাহলে যেটুকু পরিবারের জন্য খরচ হবে বাকিটা তার অ্যাকাউন্টে জমা থাকবে এবং নিজেরও একটা ভরসার জায়গা থাকবে। শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের চালু করা সর্বজনীন পেনশন স্কিম এবং প্রবাসী পেনশন স্কিম গ্রহণ করার জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত ও চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। দেশকে নিয়ে নানা কর্মসূচি করা শুরু করেছিলাম। অথচ ষড়যন্ত্র করে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেয়নি। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসে। চলে আসে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন। বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভরাডুবির পর থেকে বিএনপি আর নির্বাচনে আসতে চায় না। তারা বাস, লঞ্চ এবং ট্রেনে আগুন লাগিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। তারা যত বেশি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করবে, জনগণ তত বেশি তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। অবশ্য এর চেয়ে ভালো কিছু তাদের জানা নেই। তারা এখন অন্ধকার পথে আছে। আলো ঝলমল নির্বাচন বাদ দিয়ে তারা অন্ধকারের গলিপথ খুঁজে। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি লিফলেট বিতরণ করেছে, মানুষ যেন ভোট না দেয়। কিন্তু ঘটনা উল্টো ঘটল। মানুষ ধরে নিল ভোট দিতেই হবে। একটা সুষ্ঠু নির্বাচনে তারা ভোট দিয়েছে। এই ভোটে জনগণের বিজয় হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি নিজেদের অফিসে নিজেরাই তালা দেয়। নিজেরাই তালা ভাঙে। আবার গর্ববোধ করে বলে যে, চাবি হারিয়েছে। তাদের চাবি হারাবে, পথ হারাবে এটিই স্বাভাবিক। তারা পথ হারানো পথিক হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা নির্বাচন নষ্ট করার জন্য চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পারেনি। এখনো তাদের চক্রান্ত শেষ হয়নি। নির্বাচন বাতিলের চেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার জনগণের সেবক- এটি আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, আমি সেবক হিসেবে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে এসেছি। টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকায় দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি, বাংলাদেশের মানুষ এখন আরও উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখে। সরকারপ্রধান ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না। বাংলাদেশ সবসময় শান্তির পক্ষে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ না থাকলে উন্নতি হয় না। আর শান্তি দিতে পারে উন্নতি। অস্ত্র প্রতিযোগিতার মতো জঘন্য কাজ আর নেই। আমি বিভিন্ন ফোরামে যখন কথা বলেছি সেখানেই অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করে এই অস্ত্রের টাকা শিশুদের খাদ্য, শিশুদের চিকিৎসা এবং তাদের শিক্ষার জন্য এবং মানবকল্যাণে ব্যয় করার কথা বলেছি। তিনি বলেন, আমরা ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে রয়েছি। তাদের জন্য কিছু সহযোগিতা পাঠানো হয়েছে এবং আরও পাঠানো হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সবসময় শান্তির পক্ষে এবং জাতির পিতার রেখে যাওয়া ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ পররাষ্ট্র নীতিকে সমুন্নত রেখে এগিয়ে যাচ্ছি। গত ১৫ বছরের বাংলাদেশ, বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। মিয়ানমারের প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিয়ানমারে যখন ঝামেলা হয়েছিল তখন আমরা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছি। এ নিয়ে আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো বিবাদে জড়াইনি বরং আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই দেশের মানুষের কল্যাণ হোক, তাদের জীবনমান উন্নত হোক। সেটি মাথায় রেখেই আমাদের সমস্ত কার্যক্রম। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা এনে দিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর থেকে একধাপ এগিয়ে আমরা দেশকে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে তুলে এনেছি যা ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হবে। জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।

সর্বশেষ খবর