বুধবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

অস্বীকার জি এম কাদেরের

♦ সরকারের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার কথা মিথ্যা ♦ স্ত্রীর জন্য অন্যরা মনোনয়ন ছাড় পাননি অযৌক্তিক ♦ ষড়যন্ত্রকারীদের ক্লিন করে দলকে সংগঠিত করছি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

অস্বীকার জি এম কাদেরের

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের তাঁকে নিয়ে সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক পার্টির বিক্ষুব্ধ একটি অংশের নেতাদের নানা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে সরকারের কাছ থেকে অর্থ পেয়েছি বলে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাঁর স্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদেরের জন্য পার্টির অনেকের আসনে নৌকা প্রত্যাহার হয়নি অভিযোগটিও অযৌক্তিক বলে জানান তিনি। পার্টির চলমান বিক্ষোভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত স্বার্থে দল ভাঙতে চায় এমন ষড়যন্ত্রকারীদের ক্লিন করে পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির একটি বিক্ষুব্ধ অংশ দাবি করছে, নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভরাডুবির জন্য পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব দায়ী। তারা এও বলছেন, নির্বাচনে সরকার পার্টির প্রার্থীদের জন্য আর্থিক ফান্ড দিয়েছে। এ ফান্ড চেয়ারম্যান ও মহাসচিব সবাইকে দেননি। নির্বাচনের সময় কোনো খোঁজও নেননি তারা। পার্টির চেয়ারম্যান তার স্ত্রী শেরীফা কাদেরের জন্য নৌকা প্রতীক প্রত্যাহারের ঘোষণার পর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। এ নিয়ে বিক্ষুব্ধরা পার্টির বনানীর চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে বিশেষ সভা করেছে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, সফিকুল ইসলাম সেন্টু, যুগ্ম মহাসচিব ইয়াহইয়াকে পার্টি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনে সরকার থেকে পাওয়া ফান্ডের অভিযোগ প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, বিষয়টি ষড়যন্ত্রমূলক। শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দুর্ভাগ্যজনক। কেউ টাকা দেয়নি। পার্টি থেকে কাউকে টাকা দেওয়ারও কথা ছিল না। যদি তছরুপ করে থাকি তার প্রমাণ দরকার। প্রমাণ ছাড়া কথা বলার উদ্দেশ্য আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা। যারা এগুলো বলছে, তাদের কাছে কোনো প্রমাণ আছে? প্রমাণ না থাকলে এ ধরনের কথা বলার জন্য কি করা যায়, যাচাই করে দেখছি। নির্বাচনে অংশ নেওয়া ও ২৬ আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির কোনো সমঝোতা হয়নি। কোনো জোটে যাইনি। আসন ভাগাভাগি হয়নি। জাতীয় পার্টি এককভাবে ৩০০ আসনে নির্বাচন করেছে। জাতীয় পার্টি সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়েছিল। আমরা বলেছি, সরকারি দল যেভাবে চাইছে তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। সরকারি দলের আহ্বানে আমাদের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ফর্মুলা দিল। তারা অনেক জায়গায় তাদের নৌকা প্রার্থী উঠিয়ে নেবে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে। তারা কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থী নয়। তাদের আওয়ামী লীগের পদ-পদবি সবই থাকবে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীও তাদের সঙ্গে থাকবে, শুধু নৌকা প্রতীক থাকবে না। এ ছাড়া লাঙ্গলের যেসব প্রার্থী থাকবে, সেখানেও পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন হবে না। এর ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের কাছে ৫০-৬০টি আসনের কথা বলেছিলাম। এরপর আওয়ামী লীগ তাদের পছন্দমতো ২৬ আসন ছাড়ের ঘোষণা দেয়।

শেরীফা কাদেরের আসন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এরপর আমরা আরও কিছু বেশি আসন চেয়েছিলাম। তখন বলা হলো, তালিকা দিন। ১০-১৫টি আসনের তালিকা দিয়েছিলাম। এখন যারা অভিযোগ করছেন, তাদের আসনও ছিল তালিকায়। তারা তা জানতেন। সরকারি দল থেকে তখন আমাকে বলা হলো, ‘এগুলো বিবেচনা করা হবে।’ প্রথম তারা জানাল, আমার স্ত্রীর জন্য ঢাকা-১৮ আসন দিয়ে দিয়েছে। তখন বারবার বলেছি, বাকিগুলোর কী হবে। তারা বলেছে, যেখান থেকে সিদ্ধান্ত হয়, সেখানে কথা হচ্ছে। এটা হয়ে যাবে। চিন্তা করবেন না। যারা এখন অভিযোগ করছেন, তারা সামনেই বসা ছিল। ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে তালিকায় দেখা গেল আমার স্ত্রীর আসন আছে, কিন্তু লালমনিরহাট-৩ আসন নেই। আমি এই আসনের বর্তমান এমপি। সেই আসন থেকে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহারের কথা ছিল। কিন্তু লালমনিরহাট-৩ বাদ দিয়ে আমার স্ত্রীর আসন ঢুকিয়ে দেওয়া হলো তালিকায়। ততক্ষণে সময়ও শেষ। জি এম কাদের বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের ওয়াদা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় সুষ্ঠু হলেও সামগ্রিকভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।

পার্টির তৃণমূল নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে ছিল। শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি কেন গেল জানতে চাইলে জি এম কাদের বলেন, পার্টির তৃণমূল ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে মত দিয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পার্টির চেয়ারম্যানকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছি। তারা নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে মত দিয়েছেন। সবকিছু স্বচ্ছতার সঙ্গে হয়েছে।

১১ আসনে জাতীয় পার্টির জয় প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, ১১ আসনে জয়ে জাতীয় পার্টির ভরাডুবি হয়েছে বলা হচ্ছে, কথাটি সঠিক নয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি সাত আসনে জয়ী হয়েছিল। যেখানে বিএনপিসহ অন্য কোনো দল টিকতেই পারছে না, সেখানে ১১ আসন পাওয়া কম কথা নয়। তিনি বলেন, নৌকা প্রত্যাহার করা কিছু আসন ছাড়া সব জায়গায় সরকারি দল ভোট ছিনিয়ে নিয়েছে। নির্বাচনের দিন দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে লালমনিরহাট-৩ আসনের সব কটি ভোট কেন্দ্র দখল করে নিল। এর তিন-চার দিন আগে থেকে জাপার প্রার্থীকে মেরে আহত করা হলো। সব অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু ডিসি-এসপিরা কোনো সহযোগিতা করেননি। নির্বাচনের দিন জাতীয় পার্টির এজেন্ট বের করে দিয়ে জোর করে সিল মেরেছে। যেখানে এজেন্টরা ধরতে গেছে, সেখানে পুলিশ বাধা দিয়েছে। এগুলোর প্রমাণ আছে। তবে, রংপুর-৩ আসনে শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। ঢাকা-১৮ আসনে এসে শুনলাম, ৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। একজন বলল, ভোট দিতে গিয়েছিলেন, গিয়ে শুনেন ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়েছিলেন, একজন এসে ভোট দিয়েছেন। ২টার পর সব কেন্দ্র দখল করে তারা সিল মেরেছে। অনেক জায়গায় ফ্রি স্টাইল নির্বাচন হয়েছে। যার টাকা-পয়সা পেশিশক্তি আছে, আসন ছিনিয়ে নিয়েছে। তবে সরকার যেখানে চেয়েছে, সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। তাই ফলাফল সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রধান বিরোধী দল হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বতন্ত্ররা কোনো দল নয়। বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে যাব।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর