বুধবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

এক জেলায় ভয়াবহ ফাঁদ, দুই আত্মহত্যা

মাহবুব মমতাজী

মানিকগঞ্জে গ্রামীণ শক্তি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রতারণার ভয়াবহ জাল পেতেছে। নানা প্রলোভনে ফেলে হাজারের বেশি মানুষের কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মাসুদ রানা ওরফে সাজেদুল হক এবং তার স্ত্রী লিলি বেগম। প্রায় এক বছর আগে গ্রামীণ শক্তি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা গ্রাহকদের কাছ থেকে শত কোটি টাকা নিয়ে উধাও। এমন অভিযোগে মানিকগঞ্জ জেলায় বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন ভুক্তভোগী আমানতকারীরা। এরপরই প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সংস্থাটির অনুসন্ধান বলছে, মাসুদ রানা ২০০৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জ জেলা সমবায় অফিস থেকে নিবন্ধন নিয়ে গ্রামীণ শক্তি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের কার্যক্রম শুরু করেন। গঠনতন্ত্র অনুসারে সমিতির সব সদস্যের কাছ থেকে সঞ্চয় আদায় করে মূলধন এবং তহবিল গঠন করে আবাসিক সমস্যা ও ঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করার কথা ছিল। সমিতির সদস্য ছিল ৮৩৪ জন। নিয়ম অনুসারে সমিতির সদস্য ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে আমানত নেওয়া নিষিদ্ধ থাকলেও মাসুদ রানা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করেন। তিনি মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায় অফিস খুলে ডিপিএস, ফিক্সড ডিপোজিট, ডাবল বেনিফিট স্কিমসহ বিভিন্ন স্কিমে মাসে প্রতি লাখে ১২-১৫ হাজার টাকা মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দেখান। তিনি ব্যাংকে হিসাব খোলার মতো একটি পাস বই প্রদান করতেন এবং চুক্তিপত্রের স্লিপের মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করতেন। মাসুদ রানা প্রথমদিকে গ্রাহকদের টাকা প্রদান করলেও পরে বন্ধ করে দেন। গত ২০ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ সদর থানায় মাসুদ রানা এবং তার স্ত্রী লিলি বেগম ও প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণ শক্তি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করে সিআইডি। সিআইডির মামলায় উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন ভুক্তভোগী আগেই মাসুদ রানা ও তার স্ত্রী লিলি বেগমের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জ সদর থানা এবং আদালতে কয়েকটি মামলা করেছেন। মাসুদ রানার বাড়ি মানিকগঞ্জ সদরের পশ্চিম সানবান্ধা গ্রামে। তার বাবা বদর উদ্দিন এবং মা সাবজান বেগম। এসব তথ্য দিয়ে তার একটি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) আছে। এরপরও তিনি সাজেদুল ইসলাম নামে আরেকটি এনআইডি সংগ্রহ করেন। সেখানে পিতার নাম দিয়েছেন মোহাম্মদ আজিজুল হক, মাতা মনোয়ারা বেগম। বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপকেরদাহ তেঘরিয়া গ্রামে। তিনি একেক জায়গায় একেক পরিচয় দিয়ে নিজের ইচ্ছামতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। তিনি গ্রাহকদের টাকা দিয়ে নিজের নামে সম্পত্তি কিনেছেন। জানা গেছে, তার এই প্রতারণার শিকার অন্তত ৪৫ জন ভুক্তভোগী সিআইডির কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন। মাসুদ রানা ও লিলি বেগম তাদের কাছ থেকে অন্তত ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা নিয়ে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি কিনেছেন। মানি লন্ডারিং মামলার বাদী সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল ইয়াছিনের ভাষ্য, মামলাটির তদন্তকালে আরও তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাবে। আর সেগুলো পাওয়া গেলে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

সর্বশেষ খবর