বুধবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ইউরোপের স্বপ্ন দেখিয়ে সর্বস্বান্ত

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

তাদের টার্গেটে থাকতেন মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রবাসী সদস্যরা। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক ভিসায় যাওয়া তরুণদেরই তারা টার্গেট করে ফাঁদ তৈরি করত। এরপর ফ্রান্স ও পোল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখাত তারা। চুক্তি করত মোটা অঙ্কের। কিন্তু স্বপ্নের গন্তব্যে কেউ পৌঁছায়নি। কিরগিজস্তান নিয়ে জিম্মি করে তাদের নির্যাতন করে দেশে থাকা স্বজনদের কাছ থেকে আদায় করা হতো টাকা। ধাপে ধাপে টাকা নিয়ে সর্বস্বান্ত করে ভিকটিমকে ছেড়ে দিত তারা। সিলেটে মানব পাচারকারী এমন একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে ৭ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। চক্রের মূলহোতাকে গ্রেফতার করেছে এপিবিএনের অপস অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স টিম। চক্রটির বাকি সদস্যদের গ্রেফতার এবং সিলেটে এ রকম অন্য কোনো চক্র আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ৭ এপিবিএনের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার ফরিদুল ইসলাম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের নুনু মিয়ার ছেলে রুয়েল আহমদের নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতে গড়ে উঠেছে মানব পাচারকারী একটি ভয়াবহ চক্র। ওই চক্রটি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলত এরপর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে প্রলুব্ধ করত। ওই চক্রের মূলহোতা রুয়েল আহমদ ও তার বোন সীমা আক্তার সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) প্রবাসী জুড়ি উপজেলার মো. কামরুজ্জামানের সঙ্গে পরিচিত হন। কারুজ্জামানকে প্রলুব্ধ করে ফ্রান্সে পাঠাতে তার পরিবারের সঙ্গে ৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মৌখিক চুক্তি করে রুয়েল। চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সালের ১ অক্টোবর রুয়েলের সহযোগী কামরুল ইসলামের কাছে কামরুজ্জামানের পরিবার ৮০ হাজার টাকা ও পরদিন তার চাচাত ভাই রকি ইসলামের কাছে দেড় লাখ টাকা দেন। ওই বছরই ফ্রান্সের কথা বলে ইউএই থেকে ১৮ জনকে কিরগিজস্তান নিয়ে যায় রুয়েল। সেখানে কামরুজ্জামানের সঙ্গে থাকা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তাদের সবাইকে একটি দালাল চক্রের কাছে বিক্রি করে সে ইউএই ফিরে আসে। এরপর থেকে কামরুজ্জামানদের একটি ঘরে আটকে শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। মুক্তিপণ হিসেবে জিম্মিদের পরিবারের কাছে চাওয়া হয় টাকা। কামরুজ্জামানের মুক্তিপণ হিসেবে তার পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করে রুয়েল। ৪ লাখ টাকা পরিশোধের পর রুয়েল কিরগিজস্তান গিয়ে কামরুজ্জামানকে ইউএই নিয়ে আসে। এ জন্য বিমান ভাড়া বাবদ আরও ৫০ হাজার টাকা নেয় রুয়েল। গত বছরের ৭ অক্টোবর রুয়েল দেশে এলে কামরুজ্জামানের পরিবারের পক্ষ থেকে এলাকার বিশিষ্টজনরা তার কাছে গেলে সে মানব পাচারের বিষয়টি অস্বীকার করে এবং নানা রকম হুমকি-ধমকি দেয়। পরে কামরুজ্জামানের স্ত্রী সৈয়দা জলি বেগম থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় গত রবিবার এপিবিএনের অপস অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স টিম রুয়েলকে গ্রেফতার করে। তবে চক্রের অন্য সদস্যরা এখনো অধরা রয়েছে। এদিকে, একই চক্রের খপ্পরে পড়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সর্বস্বান্ত হয়ে ফিরেছেন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বাদেদেউলী গ্রামের যুবক সুরঞ্জিত চন্দ্র দাস। সুরঞ্জিতকে পোল্যান্ড পাঠানোর কথা বলে কিরগিজস্তান নিয়ে জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা আদায় করে চক্রটি। একপর্যায়ে তিনি নিঃস্ব হয়ে দেশে ফেরেন। ৭ এপিবিএনের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার ফরিদুল ইসলাম জানান, মানব পাচারকারী চক্রটি উন্নত দেশে পাঠানোর নামে অনেককে নিঃস্ব করেছে। ওই চক্রের মূলহোতা রুয়েল আহমদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারে এপিবিএন কাজ করছে। এ ছাড়া সিলেটে মানব পাচারকারী অন্য কোনো চক্র সক্রিয় আছে কি না তাও তদন্ত করা হচ্ছে।

 

সর্বশেষ খবর