বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

নিবিড়ভাবে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র ইইউর সঙ্গে হবে নতুন চুক্তি

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বললেন মার্কিন ও ইইউ রাষ্ট্রদূত

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিবিড়ভাবে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র ইইউর সঙ্গে হবে নতুন চুক্তি

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পিটার হাস -পিআইডি

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এবং ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বাংলাদেশের সঙ্গে আবারও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলায় আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, আমরা আবারও বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার প্রতিক্ষায় আছি। ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশের সঙ্গে শিগগিরই নতুন পার্টনারশিপ কো-অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্টে (পিসিএ) সই করতে যাচ্ছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার বিষয়ে একমত হয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস তাঁকে বলেছেন, ওয়াশিংটন পারস্পরিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে।

গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম সৌজন্য সাক্ষাতে আসেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন। পরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা উভয়ে আমাদের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করার বিষয়ে একমত হয়েছি এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করব বলে আলোচনা করেছি। মার্কিন রাষ্ট্রদূত নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করা এবং সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। বাণিজ্য আরও বিস্তৃত করার জন্য আমেরিকান বিনিয়োগের বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করবে বলে আলোচনা করেছি।

হাছান মাহমুদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের নানা বিষয়ে সম্পর্ক আছে। আমরা জঙ্গি দমন, উগ্রবাদ মোকাবিলায় দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে কাজ করছি। সেটাকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে ভবিষ্যতে কাজ করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছি। মোটা কথা হচ্ছে, আমরা উভয় দেশ সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করতে আমাদের বাণিজ্য আরও বিস্তৃত করতে এবং অন্যান্য সবক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করব বলে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছি। তিনি বলেন, নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পর্যবেক্ষণ করতে এসেছে, সে বিষয়টাও আলোচনা করেছি। বাংলাদেশে একটি ভালো নির্বাচন হয়েছে। এ সব বিষয় আলোচনা হয়েছে।

‘সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচন প্রসঙ্গ কার পক্ষ থেকে তোলা হয়েছে’ এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন নিয়ে নানা দেশের নানা মত ছিল। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তারা নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। আমরা একযোগে আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। এ ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি এবং অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।

সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে পিটার হাস বলেন, ‘আমি আমাদের পারস্পরিক স্বার্থকে এগিয়ে নিতে আগামী দিনগুলোতে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছি।’ জলবায়ু, ব্যবসায়িক সুযোগ সম্প্রসারণ এবং সম্পর্কের অগ্রগতির জন্য সহযোগিতার অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোর কথা উল্লেখ করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত।

পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশের সঙ্গে শিগগিরই নতুন পার্টনারশিপ কো-অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্টে (পিসিএ) সই করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকের পর এ তথ্য জানান ইইউ রাষ্ট্রদূত। চার্লস হোয়াইটলি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে এটি আমার প্রথম বৈঠক। বেলজিয়ামের সঙ্গে তার জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। কারণ তিনি সেখানেই লেখাপড়া করেছেন। আর বেলজিয়াম হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয়। বৈঠকে ইইউ-বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে আমাদের মধ্যে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে। আমাদের অনেকগুলো এজেন্ডা রয়েছে। শিগগিরই নতুন পার্টনারশিপ কো-অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্টে (পিসিএ) সই করতে যাচ্ছি আমরা। এটি অনেক ব্যাপক ও নতুন প্রজন্মের চুক্তি। তিনি আরও বলেন, বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেন-রাশিয়ার সংঘাতসহ বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা হয়েছে। আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকটও উঠে এসেছে। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আমাদের দীর্ঘদিনের সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। আগামীতেও বহু বছর ধরে এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি। আমাদের বৈঠক ছিল খুবই ফলপ্রসূ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ইইউ-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও এগিয়ে যাবে বলে আমি প্রত্যাশা করছি। বাংলাদেশ-ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি মনে করি, নতুন অংশীদারত্ব সহযোগিতা চুক্তির (পিসিএ) ভিত্তিতে আগামী পাঁচ বছরে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন আসবে। ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি রয়েছে, সেটির চেয়ে এটির (পিসিএ) ধরন অনেকটা রাজনৈতিক। কারণ আগের চুক্তি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগিতার, যা এখনো বর্তমান আছে।’ তিনি বলেন, ‘বছরখানেক আগে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে প্রথম রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে। যার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কও জড়িয়ে রয়েছে। পররাষ্ট্রনীতি নিয়েও আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। তবে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে কেবল এটিই গুরুত্বপূর্ণ না, বিশ্বজুড়ে যা কিছু ঘটছে এবং বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যে তার প্রভাব পড়ছে, তাও বিবেচনায় নিতে হবে।’ ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব বড় রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি বলে বিবৃতিতে আপনি বলেছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্গে আজকের আলোচনায় কী সেই প্রসঙ্গ উঠেছিল’? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এ বিষয়ে কথা হয়নি। আমরা এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছি। আজকের আলোচনা খুবই ফলপ্রসূ ছিল। কীভাবে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আধুনিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারি, সেটাই ছিল আমাদের আলোচনার বিষয়।’ ‘আপনি কী অতীত ভুলে গেলেন’? প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই না, অতীতও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নির্বাচনি বিশেষজ্ঞ দল এই শহরে ছিলেন। তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা এখনো বাংলাদেশ ছেড়ে যাননি। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ শেষে তারা প্রতিবেদন তৈরি করবেন। যা পরবর্তীতে প্রকাশ করা হবে।’

 

সর্বশেষ খবর