বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ব্যবসায় বড় প্রতিবন্ধকতা দুর্নীতি : সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যবসায় বড় প্রতিবন্ধকতা দুর্নীতি : সিপিডি

দুই-তৃতীয়াংশ ব্যবসায়ী মনে করেন দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা দুর্নীতি। এ ছাড়াও অদক্ষ আমলাতন্ত্র ও বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিতিশীলতার সমস্যাও রয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জরিপে উঠে এসেছে এসব তথ্য। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। বাংলাদেশে ব্যবসায় পরিবেশ-২০২৩ : উদ্যোক্তা জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই সময়ে ঢাকা, সাভার, গাজীপুরে ৭১ জন ব্যবসায়ীর মতামত নেওয়া হয়েছে জরিপে। এর মধ্যে প্রায় ৬৮ শতাংশ ব্যবসায়ী দুর্নীতিকে প্রধান সমস্যা, প্রায় ৫৫ শতাংশ ব্যবসায়ী অদক্ষ আমলাতন্ত্র ও ৪৬ শতাংশের বেশি ব্যবসায়ী বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিতিশীলতার সমস্যাকে চিহ্নিত করেছেন। ৬৬ শতাংশের বেশি ব্যবসায়ী মনে করেন আগামী দুই বছর দেশে জ্বালানি সংকট প্রকট হবে। ৩৮ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন জ্বালানির ভর্তুকি তুলে নিলে ব্যবসার খরচ বাড়বে। ৫৮ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন ব্যাংক খাতে নজরদারি ও তদারকির অভাব রয়েছে।

তিনি বলেন, অর্থ পাচার ব্যাপক স্তরে রয়েছে। অর্থ পাচার ঠেকানো বড় চ্যালেঞ্জ, দেশের কর কাঠামো পরিবেশবান্ধব নয় দাবি করে ৬০ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন এখনো ২৩ শতাংশ কর ফাঁকি হচ্ছে। ৪২ শতাংশ ব্যবসায়ী বড় কোনো পরিবর্তন দেখছেন না। পরিবর্তন দেখেছেন মাত্র ৬ শতাংশ ব্যবসায়ী। ৩৫ শতাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ফেল করেছেন। ব্যবসায়ীদের বড় একটি অংশ বলেছেন ব্যবসার ভালো পরিবেশ নেই। গত পাঁচ বছরে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন নেই। তবে সরকারের রাজনৈতিক ভিশন ব্যবসায়ীরা গ্রহণ করেছেন। কর্মী দক্ষতার ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন হলেও ৭৫ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন, জটিল চিন্তা করা, সমস্যা সমাধান, দলগতভাবে কাজ ও আন্তযোগাযোগের জন্য তারা দক্ষ কর্মী পাচ্ছেন না। খন্দকার মোয়াজ্জেম বলেন, গত ছয় বছরে ঘুষ পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন দেখেননি ব্যবসায়ীরা। অর্থাৎ ঘুষ কমেনি। পাবলিক কন্টাক্ট, ট্যাক্স পেমেন্ট, আমদানি-রপ্তানি ও ইউটিলিটি সংযোগ পেতে ঘুষ দিতে হয়েছে। একজন ব্যবসায়ী তাকে জানিয়েছেন, একটি পরিষেবা সংযোগ নিতে আবেদন করলে তার কাছে যে পরিমাণ ঘুষ চাওয়া হয়েছিল, তা তার ব্যবসার পরিকল্পিত বিনিয়োগের সমপরিমাণ। বড় ব্যবসায়ীরা ঘুষ-দুর্নীতি সামলে নিতে পারলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা এটিকে বড় সমস্যা মনে করছেন। তিনি বলেন, সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধ করতে দরকার সমন্বিত আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা। এ লেনদেন ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতের আধার কার্ডের মতো কার্ড চালু করা যেতে পারে। সব ধরনের লেনদেন একটি মাত্র কার্ড দিয়ে করা গেলে দুর্নীতি কমে যাবে বলে মনে করেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। জরিপে আরও উঠে এসেছে, এশিয়ায় ব্যবসায় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এশিয়ার প্রায় প্রতিটি দেশই বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে। ভিয়েতনাম সব সূচকে বাংলাদেশের ওপরে। শুধু দক্ষিণ এশিয়ার বিবেচনায়ও বাংলাদেশ এগিয়ে নেই। টেকসই অর্থনীতি বা উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারতের পরই বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের সূচক ভালো বলা যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায় বাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতিতে বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ের ১০০ দিন, এক বছর, তিন বছর ও পাঁচ বছরের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন; ন্যায়পাল কার্যালয় স্থাপন; সীমিত সময়ের জন্য খাতভিত্তিক কিছু কমিশন গঠন, যেমন ব্যাংক, শেয়ারবাজার, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংস্কার; একটি সমন্বিত আর্থিক লেনদেন খাত প্রতিষ্ঠা; সরকারি কেনাকাটা ব্যবস্থা আধুনিক করার সুপারিশ করেছে সিপিডি।

সর্বশেষ খবর