শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

কূটনীতিতে নজর সরকারের

মানিক মুনতাসির

কূটনীতিতে নজর সরকারের

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গতকাল ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির সাক্ষাৎ -পিআইডি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নানা কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কে তিক্ততার সৃষ্টি হলেও সরকার গঠনের পর তা বদলে গেছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের পর ১১ জানুয়ারি টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এর পরপরই বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, জানাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, খোদ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে দেখা করে দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এ সময় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান গতিশীল ও বহুমুখী সম্পর্কের প্রশংসা করেন তিনি। এদিকে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম সপ্তাহেই বিশ্বব্যাংক, ভারতীয় হাইকমিশনার, এডিবিসহ উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অর্থমন্ত্রী। সেখানে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি আবদুল্লায়ে সেক ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী উভয়ে দুই পক্ষের সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। বৈঠকে চলমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের করণীয় প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট ও উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বিশ্বব্যাংক সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে বলে জানা গেছে। অর্থ বিভাগের এক সূত্র জানান, আগামী সপ্তাহে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-আইডিবি, জাপান আন্তর্জাতিক কো-অপারেনশন এজেন্সি-জাইকাসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বৈঠক করবেন। ইউএসএ, ইউকে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গেও ধারাবাহিক বৈঠক করবে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা বাড়াবে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএমএফ, জাইকাসহ উন্নয়ন সহযোগীরা। বহির্বিশ্বের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের অংশ হিসেবে আগামী মার্চেই শুরু হতে পারে প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর। জুনের আগে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম (বিডিএফ) সম্মেলনের বিষয়ে ৩২টি উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হবে। এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের আমন্ত্রণে ৭ ফেব্রুয়ারি ভারত সফরে যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী এ তথ্য জানান গতকাল। তিনি বলেন, এখনো সফরের বিস্তারিত সূচি চূড়ান্ত হয়নি। তবে এ সফর তিন দিনের হতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই হতে যাচ্ছে তাঁর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে ও পরে যে ধরনের বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করা হয়েছিল তা হয়নি। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য খুবই স্বস্তিদায়ক। একই সঙ্গে বহির্বিশ্বেও একটা ইতিবাচক সিগন্যাল যাচ্ছে এর মাধ্যমে। এখন আমাদের চলমান সংকট মোকাবিলায় কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে। একই সঙ্গে আর্থিক খাতের সংস্কারে মন দিতে হবে।’

অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশনের সূত্রগুলো বলছেন, নতুন সরকারের পররাষ্ট্রনীতিতে অগ্রাধিকার পাবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার। এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার দিকে নজর দেওয়া। মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার ঝালাই করার কাজে হাত দেওয়া। এ ছাড়া দেশে একটা শ্রেণি রয়েছে ভারত, রাশিয়া ও চীন বিরোধী। তাদের কৌশলে হ্যান্ডেল করা হবে। জাতিসংঘের সঙ্গেও সম্পর্কোন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেখানে বাংলাদেশের যে স্থায়ী মিশন রয়েছে তা পুনর্গঠন করা হবে। জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনের কাজের পরিধি ও পলিসি এমনভাবে নেওয়া হবে যাতে সম্পর্কোন্নয়নে তা সহায়ক ভূমিকা রাখে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাইডেনের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মেয়াদ শেষ দিকে চলে এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে মতাদর্শের সরকারই ক্ষমতায় আসুক বাংলাদেশ-আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।’ কারও সঙ্গে বৈরিতা না রেখে সুসম্পর্ক তৈরি করতে হবে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া অন্যান্য বৈশ্বিক সংস্থা বা জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা, ডব্লিউএইচও, ডব্লিউটিও, এফএও, ইউএনএইচসিআরসহ সব সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তা ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চীন, ভারত, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইইউভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্কের বিকল্প নেই বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।

এদিকে বাংলাদেশ থেকে পোশাক ও বস্ত্র শিল্পের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শুল্ক বলবৎ রয়েছে। বাংলাদেশের এসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করতে ১৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। অথচ ভারত ও চীন মাত্র ৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসব পণ্য রপ্তানি করতে পারে। পৃথিবীর মধ্যে শুধু বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ার ওপর তারা এত বেশি শুল্ক আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এ শুল্ক প্রত্যাহার করলে মার্কিন ক্রেতাদের ১৬ শতাংশ কম দামে পোশাক ও বস্ত্র খাতের পণ্য দেওয়া সম্ভব হতো। কিন্তু এ নিয়ে অতীতে বাংলাদেশ সরকার কোনো লবিস্ট গ্রুপ নিয়োগ করেনি। এ ইস্যু নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে লবিস্টও নিয়োগ করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ডব্লিউটিও শাখার এক সূত্র। অন্যদিকে ড. হাছান মাহমুদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর প্রথম অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমি আমার প্রধান ফোকাস হিসেবে অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর জোর দেব। অর্থনৈতিক কূটনীতির অংশ হিসেবে ঢাকা বিশেষ করে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে সম্প্রসারিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক অন্বেষণ করতে আগ্রহী। ক্রমবর্ধমান বিশ্ব মেরুকরণের পটভূমিতে পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।’ মন্ত্রী আরও বলেন, পূর্ব ও পশ্চিমের দেশগুলো ঢাকার সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ সব দেশের দূত নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং ঢাকার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

ইইউর অভিনন্দন শেখ হাসিনাকে

ভারতের সঙ্গে দ্রুত ডিজিটাল পেমেন্ট

গম রপ্তানিতে আগ্রহী রাশিয়া

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর