শনিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকে তালা

দুই দিনে বন্ধ প্রায় ১৫০ ক্লিনিক

নিজস্ব প্রতিবেদক

অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকে তালা

যশোর শহরের পালবাড়ী এলাকার একটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত -বাংলাদেশ প্রতিদিন

লাইসেন্সবিহীন, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগে সারা দেশে প্রায় ১৫০টি ক্লিনিককে জরিমানা ও সিলগালা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার পর গত দুই দিনে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশের লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। গত দুই দিনে নারায়ণগঞ্জ, যশোর, গোপালগঞ্জ, রংপুরসহ দেশের বেশ কিছু জায়গায় লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিক সিলগালা করা হয়েছে।’ আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক গত বুধবার বিভাগের ১১ জেলার সিভিল সার্জনকে তিন দিনের মধ্যে অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রদানের নির্দেশ দেন। জানা যায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় ছোট বড় মিলে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে ৫৮০টি। নিবন্ধিত হাসপাতাল-ল্যাব আছে ২৯০টি, হাসপাতাল-ক্লিনিক আছে ৯৮টি এবং রোগ নির্ণয় কেন্দ্র আছে ১৯২টি। তবে প্রাইভেট হাসপাতাল মালিক সমিতির অন্তর্ভুক্ত হাসপাতাল-ল্যাবের সংখ্যা ৫০টি।

চট্টগ্রাম প্রাইভেট হাসপাতাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. লিয়াকত আলী খান বলেন, আমরা চাই সরকারি নিবন্ধন নিয়েই হাসপাতালগুলো পরিচালিত হোক। আমরাও অনিবন্ধিত হাসপাতাল-ল্যাবের বিরুদ্ধে।     

গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুই দিনে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলায় লাইসেন্সবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ শতাধিক হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা মতে গত বুধবার নগরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মো. মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে অনুমোদন না নিয়ে কেবিনে রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়ায় নগরের পাঁচলাইশ এলাকার প্রচেষ্টা ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড নিউরো রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার এবং চট্টগ্রাম বেস্ট ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড নিউরো রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। জনস্বাস্থ্য রক্ষা আন্দোলন চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান পরিচালনা করলেই নানা অনিয়ম বের হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) একান্ত সহকারী শাহাদাত হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা মতে গত বুধবার থেকে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।  যশোরের দুই উপজেলার ২৯টি বেসরকারি ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে গুরুতর ত্রুটি পাওয়ায় চারটি ক্লিনিক সিলগালা করে বন্ধ এবং অন্য চারটি ক্লিনিককে জরিমানা করা হয়েছে। ছোটখাটো ত্রুটি পাওয়ায় বেশকিছু ক্লিনিককে সতর্কও করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সারা দিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের সহযোগিতায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এ অভিযান পরিচালনা করে।

যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মীর আবু মাউদ জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাবিদ হোসেনের নেতৃত্বে যশোর শহরের বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে অভিযান চালানো হয়।

ঝিকরগাছা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে এম মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে সালেহা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও সালমা মেডিকেল সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এগুলোর নিবন্ধন নবায়ন করা ছিল না। এ ছাড়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না থাকায় ঝিকরগাছা প্রাইভেট ক্লিনিককে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, স্বাস্থ্যবিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলার সব উপজেলাতেই এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারির পরও বরিশালে অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক বন্ধ হয়নি। দেখা যায়নি প্রশাসনিক কোনো অভিযানও। বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১০ উপজেলায় মোট ক্লিনিক ডায়াগনস্টিকের সংখ্যা ১৮১টি। এর মধ্যে ৬টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ১১টি প্রতিষ্ঠান তাদের কাগজপত্র নবায়ন করেনি। ২৭টি প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। বরিশাল মহানগরীতে বৈধ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিকের সংখ্যা ৪৯টি। বরিশাল নগর উন্নয়ন ফোরামের সমন্বয়ক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, অবৈধ প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসাসেবাও অবৈধ। তাদের কোনো জবাবদিহিতা থাকে না। বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. মরিয়া হাসান জানান, অননুমোদিত এবং অবৈধ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিকের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালান তারা। অভিযানের পরও তাদের কার্যক্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য বিভাগের লোকবল সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে প্রতিদিন তদারকি করা সম্ভব নয়। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল জানান, বিভাগের ৬ জেলা থেকে অবৈধ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিষয়ে এখনো বিভাগীয় কার্যালয়ে কিছু অবহিত করা হয়নি। অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকলে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় সেগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে স্বাস্থ্য বিভাগ।

গাজীপুরের ৫টি উপজেলা ও ১টি সিটি করপোরেশন এলাকায় লাইসেন্সবিহীন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১৯৬টি। গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুজ্জামান গতকাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুজ্জামান বলেন, জেলার ১৯৬টি অনিবন্ধিত বেসরকারি ক্লিনিক/হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনেক আগে থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন ব্যতীত যাতে কার্যক্রম চালাতে না পারে এজন্য এগুলোর তালিকা জেলা প্রশাসক ও পুলিশের কাছে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। গাজীপুর প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল মোল্লা বলেন, ‘যেসব প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নেই তাদের দ্রুত লাইসেন্স করার অনুরোধ করছি।’

রাজশাহীতে অনুমোদনের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অভিযানের পর এসব অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও কিছুদিন পর তা আবার চালু হয় ভিন্ন নামে। রাজশাহী সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে থাকা তথ্যে ক্লিনিক আছে ২৭০টি। তবে বাস্তব চিত্র একেবারে ভিন্ন। ৪৫০-এর বেশি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। যার অর্ধেকের বেশি ক্লিনিকের রেজিস্ট্রেশন নবায়ন করা নেই। রাজশাহী জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক জানান, যারা নিয়মের বাইরে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে এখনো তারা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান শুরু করেননি।

সর্বশেষ খবর